শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড (বিএটিবি) চার বছরে অবৈধ ও অতিরিক্ত রেয়াত সুবিধা নেওয়া ৯ কোটি টাকা অবশেষে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে। ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের নিরীক্ষায় অবৈধ রেয়াত নেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) কারণ দর্শানো নোটিশ জারির পর অবৈধ রেয়াত নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাতকারী কোম্পানি বিএটিবি।

শেষ পর্যন্ত গত ২২ জুন অতিরিক্ত সেই রেয়াতের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। বৃহৎ করদাতা ইউনিটের ভ্যাট বিভাগের কমিশনার ফারজানা আফরোজ সই করা চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চার বছরে অবৈধ ও অতিরিক্ত রেয়াত নিয়েছিল ৯ কোটি ২৮ হাজার ৪৫১ টাকা। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ৭৪ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৭ টাকা, ২০১৬ সালে দুই কোটি ৮৫ লাখ ৪৫ হাজার ২২৮ টাকা, ২০১৭ সালে দুই কোটি ৮১ লাখ ৩১ হাজার ৩৮৬ টাকা ও ২০১৮ সালে দুই কোটি ৫৮ লাখ ৯০ হাজার ২৬৯ টাকা। সব মিলিয়ে ৯ কোটি ২৮ হাজার ৪৫১ টাকা রেয়াত নিয়েছিল।

গত ২৫ জুলাই বিএটিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দেওয়া ও ভ্যাট গোয়েন্দার আনা অভিযোগের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ‘মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১’-এর ধারা ৯(২) অনুযায়ী বিএটির রেয়াত বাতিল কথা বলা হয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দা ও এনবিআর সূত্র জানা যায়, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড (বিএটিবি) বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) নিয়ন্ত্রণাধীন মূসক বা ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। বিএটি বাংলাদেশের সিগারেট উৎপাদনের মূল উপকরণ হলো তামাক। এছাড়া সিগারেট উৎপাদনে সিগারেট পেপার, এসিটেট টো, টিপিং পেপার, অ্যাডহেসিভ, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, গ্লিসারিন, কার্টন, বিওপিপি, কেমিক্যালস, শেল ও স্লাইড প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়। এসব উপকরণ ও সেবার ওপর রেয়াত নেয় প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র আরও জানায়, ভ্যাট গোয়েন্দার প্রতিবেদন অনুযায়ী, দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে এলটিইউ। এতে বিএটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইন ও বিধিবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ৯ কোটি ২৮ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা রেয়াত নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করা হয়। ২২ জুন বিএটি অবৈধভাবে নেওয়া এই রেয়াতের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে ২৫ জুন এলটিইউকে চিঠি দিয়ে জানায়।

দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানো নোটিশ জারির পর বিএটি অবৈধভাবে নেওয়া এই রেয়াত সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে। যেহেতু প্রতিষ্ঠান অবৈধ বা অতিরিক্ত রেয়াত নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিয়েছে, সেহেতু ভ্যাট গোয়েন্দার আনিত অভিযোগের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে ‘মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১’-এর ধারা ৯(২) অনুযায়ী বিএটির এই রেয়াত বাতিল করা হয়েছে।

বিএটি বাংলাদেশ বেনসন, গোল্ডলিফ (জেপিজিএল), ক্যাপস্টন, স্টার, রয়েল, ডারবি, লাকি, পাইলট, হলিউড ব্র্যান্ডের সিগারেট উৎপাদন ও বাজারজাত করে। এসব সিগারেট উৎপাদনে কী পরিমাণ তামাক পাতা ব্যবহৃত হয়েছে এবং কী পরিমাণ পাতা অপচয় হয়েছে, তার হিসাব করা হয়েছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রতিষ্ঠানটি গোল্ডলিফ, বেনসনের কয়েকটি ব্র্যান্ড, স্টার, ডারবি, পাইলট, হলিউড উৎপাদন ও বাজারজাত করেছে।