শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজার চলতি বছর ‘মোটামুটি ভালো’ যাবে বলেই মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সম্প্রতি এক জরিপে অংশ নিয়ে শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ মতামত দেন। জরিপটি পরিচালনা করেছে দেশের পুঁজিবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩৭ শতাংশই মনে করেন, চলতি বছরজুড়ে পুঁজিবাজার ‘মোটামুটি ভালো’ যাবে। আর ২৩ শতাংশ মনে করেন, বাজার এখনকার মতো একই রকম থাকবে।

তবে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট ও দুর্বল নিয়ন্ত্রণ কাঠামোকে চলতি বছর পুঁজিবাজারের জন্য বড় ঝুঁকি মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ছাড়া অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার জন্য শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমে যাওয়াকেও বাজারের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন তাঁরা।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ২২ দশমিক ২ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা বছর শেষে ডিএসইএক্স সূচকটিকে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজারের মধ্যে দেখতে চান। আর ২০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, তাঁরা ডিএসইএক্স সূচকটি সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজারে দেখতে চান। সম্প্রতি এক জরিপে অংশ নিয়ে শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ তিনটি বিষয়কে চলতি বছর পুঁজিবাজারের জন্য বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আর জরিপটি পরিচালনা করেছে দেশের শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ।

‘বাংলাদেশ শেয়ারবাজার সেন্টিমেন্ট সার্ভে-২০২৩’নামের এ জরিপ করা হয় গত ১ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। জরিপে শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট ১০১ জনের প্রশ্নোত্তরভিত্তিক মতামত নেওয়া হয়।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ জানিয়েছেন, গত বছর শেয়ারবাজার খারাপ থাকার প্রধান কারণ ছিল বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। আর প্রায় ১৯ শতাংশ জানিয়েছেন, বাজার খারাপ হওয়ার পেছনের কারণ ছিল কারসাজির ভয়।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি বলেছেন, ২০২২ সালে শেয়ারবাজারের কার্যক্রম বা পারফরম্যান্স ছিল খারাপ। আবার এই ৬০ শতাংশের মধ্যে ৩২ শতাংশই বলেছেন, গত বছর শেয়ারবাজারের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে জরিপকারী প্রতিষ্ঠান জানতে চেয়েছিল ২০২২ সালে শেয়ারবাজার খারাপ থাকার কারণ কী ছিল বলে তাঁরা মনে করেন।

এ প্রশ্নের জবাবে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ জানিয়েছেন, শেয়ারবাজার খারাপ থাকার প্রধান কারণ ছিল বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। আর প্রায় ১৯ শতাংশ জানিয়েছেন, বাজার খারাপ হওয়ার পেছনের কারণ ছিল কারসাজির ভয়।

জরিপের বিষয়ে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার সাফাত রেজা বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে আমরা এ জরিপ করে আসছি। শেয়ারবাজার ও দেশের অর্থনীতি নিয়ে মানুষ কী ভাবছেন, তা জানতেই এ জরিপ করে আসছি আমরা। এর মাধ্যমে আমরা অর্থনীতি ও শেয়ারবাজার নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের ধারণা জানতে পারি।

লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের পক্ষ থেকে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ২০২৩ সাল শেষে তাঁরা দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্সকে কোন অবস্থানে দেখতে চান। জবাবে ২২ দশমিক ২ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা বছর শেষে ডিএসইএক্স সূচকটিকে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজারের মধ্যে দেখতে চান।

আর ২০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, তাঁরা ডিএসইএক্স সূচকটি সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজারে দেখতে চান। সেই হিসাবে ৪২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বছর শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি ৬ থেকে ৭ হাজারের মধ্যে দেখতে চান। আর ১৮ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা সূচকটিকে বছর শেষে ৭ হাজারের ওপরে দেখতে চান।

লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের এ জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন বিনিয়োগ ব্যাংকার, বিদেশি বিনিয়োগকারী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী, ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারী, শেয়ারবাজারে লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি বা ট্রেডার, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী। ২০১২ সাল থেকে শেয়ারবাজার নিয়ে এই সেন্টিমেন্ট জরিপ পরিচালনা করে আসছে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তাঁরা শেয়ারবাজারে দৈনিক কত টাকার লেনদেন প্রত্যাশা করেন। জবাবে ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, তাঁরা ৪০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা দৈনিক লেনদেন প্রত্যাশা করেন। একইসংখ্যক অংশগ্রহণকারী বলেছেন, তাঁদের প্রত্যাশা শেয়ারবাজারে দৈনিক ৮০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হবে।