শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগে অর্থায়নের উৎস পুঁজিবাজার। ব‍্যাংকের মাধ‍্যমে এটি সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের রাজস্ব ও মুদ্রানীতির মাধ‍্যমে পুঁজিবাজারকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বাজার গভীরতা বাড়াতে কাজ করছে বিএসইসি। এছাড়া আইওএসকোর-এপিআরসির এই সভার মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারে প্রতি বিদেশীদের আগ্রহ বাড়বে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুই দিনব্যাপী সভার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গত বৃহস্পতিবার শেষ হলো ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটির (এপিআরসি) দুই দিনব্যাপী সভা।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ও আইওএসকোর এপিআরসির ভাইস চেয়ার অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ, আইওএসকোর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল তাজিনদার সিংহ এবং আইওএসকোর এপিআরসির চেয়ার সেগুরু আরিজুমি।

বাংলাদেশ আজ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ এবং আগামীতে উচ্চ আয়ের দেশে পরিনত হবে আশা প্রকাশ করে মসিউর রহমান বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো আইওএসকোর-এপিআরসির সভা আয়োজনের মাধ্যমে দেশ ও আমাদের পুঁজিবাজার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরো পরিচিত হবে। একই সাথে দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারদের আগ্রহ বাড়বে। একই সাথে আস্থাও। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক পুঁজিবাজাররে নীতিনির্ধারণে বাংলাদেশের অংশগ্রহন বৃদ্ধি পাবে।

পুঁজিবাজার আরো উন্নয়ন জরুরী মন্তব্যে করে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট আইনের সাথে সমন্বয় করে দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা জরুরী। একই সাথে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্টতে কাজ করতে হবে। এসময় পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও টেকসই ত্বরান্বিত লক্ষে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্ক সহ সহযোগিতা আরো বৃদ্ধির পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজার অত্যান্ত সম্ভাবনাময় জানিয়ে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কাজ করছে বিএসইসি। এসময় দেশে প্রথমবারের মতো আইওএসকোর-এপিআরসির এ ধরনের সম্মেলন বাংলাদেশের পুজিবাজারের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে প্রথমবারের মত ঢাকায় আইওএসকো-এপিআরসির ২দিন ব্যাপী সভা শুরু করে গত বুধবার। শেষ হয় বৃহস্পতিবার।

সভাগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজধানীর শেরাটন ঢাকা হোটেলে। গত বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয় সুপারভাইজরি পরিচালক সভা। শেষ হয় বেলা ১২ টায়। একইদিনে দুপুর দেড়টায় শুরু হয় এনফোর্সমেন্ট পরিচালক সভা। শেষ হয় বিকাল ৪ টায়। সভা দুটির সভাপতিত্ব করে বিএসইসির চেয়ারম্যান এবং আইওএসকো- এপিআরসির ভাইস চেয়ার অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

সভা দুটিতে বাংলাদেশ সহ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, নেপাল সহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা সহ তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সভায় সারা বিশ্বের শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠান আইওএসকোর সচিবালয় ও স্পেনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
পরের দিন বৃহস্পতবার সকাল ৯ টায় শুরু হয় এপিআরসি পূর্ণাঙ্গ সভা। শেষ হয় বিকেল ৪ টায়।

এর মাধ্যমে ২দিন ব্যাপী সভার সমাপ্ত হয়। সভাটির উদ্বোধন করেন আইওএসকো- এপিআরসির চেয়ার শিগেরু আরিজুমি। ওই অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য ও সভার অলোচ্য সূচির অনুমোদন করেন শিগেরু আরিজুমি ও শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। সমাপনী অনুষ্ঠান ও গালা ডিনার অনুষ্ঠিত হয় ওইদিন বৃহস্পতিবার সন্ধায়। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সমাপনী অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

এপিআরসি সভায় বাংলাদেশ, ভারত, হংকং, সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধিরা বিনিয়োগ শিক্ষা ও বিনিয়োগ আচরণ, নিয়ন্ত্রক প্রযুক্তি, অনলাইনে ব্রোকারেজ ও পরামর্শ পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় পক্ষের সেবা গ্রহণের সমস্যা ও সমাধান, বিনিয়োগকারীর সিদ্ধান্তের উপর প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের মানের প্রভাব, যারা ভূয়া গ্রাহক হিসাব খুলে এর মাধ্যমে শেয়ারবাজার কারসাজি ও ইনসাইডার ট্রেডিং করে তাদের খুঁজে বের করার চ্যালেঞ্জ, অত্যাধুনিক সিন্ডিকেট কর্তৃক বিভিন্ন উপায়ে শেয়ারেরবাজার মূল্য বৃদ্ধি ও তার উপর নজরদারী সহ পুঁজিবাজার সংক্রান্ত আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া আইওএসকোর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২৩৩। বিএসইসি ২০১৩ সাল থেকে আইওএসকোর সর্বোচ্চ মান ‘এ’ শ্রেণীর সদস্য হিসেবে রয়েছে। আইওএসকোর ৪টি আঞ্চলিক কমিটির মধ্যে এপিআরসি অন্যতম। বর্তমানে ভারত, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া সহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ২১ টি দেশ এই আঞ্চলিক কমিটির সদস্য।