শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: শেয়ারবাজারে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম হাজার টাকার ওপরে, বিনিয়োগকারীদের কাছে সেগুলো ‘রাজা’ শেয়ার হিসেবে পরিচিত। রাজা শেয়ারগুলো দামে যেমন সেরা, লভ্যাংশ ও মুনাফায়ও সবার ওপরে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে—বার্জার পেইন্টস, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট, বাটা সু, লিন্ডে বিডি, ম্যারিকো বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার, রেনেটা, ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ার ও ওয়ালটন হাইটেক।

একসময়ে সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ও সর্বোচ্চ মুনাফার কোম্পানি হিসেবে শেয়ারবাজারে এসব ‘ব্লু চিপ’ শেয়ারের কদরই ছিল আলাদা। দাম বৃদ্ধি এবং লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় কোম্পানিগুলোকে প্রায়ই দেখা যেত। কিন্তু সাম্প্রতিককালে লেনদেন কিংবা দাম বৃদ্ধির কোনো তালিকায় কোম্পানিগুলোকে দেখা যায় না।

বাজার-সংশ্লিষ্টদের দাবি, শেয়ারবাজারে কয়েকটি সিন্ডিকেট চক্র গুটিকয়েক শেয়ার নিয়ে এখন মাতামাতি করছে। তাদের বেপরোয়া চোটপাটে শেয়ারবাজারে এখন চরম ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। শেয়ারের দাম ও লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় এখন কারসাজির শেয়ারেরই জয়জয়কার। কারসাজির শেয়ারের দাপটে ব্লু চিপ শেয়ার এখন পুরোপুরি কোণঠাসা।

এগুলো হয়তো ফ্লোর প্রাইসে ঝিমাচ্ছে, নয়তো ফ্লোর প্রাইসের কিনারায় হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বাটা সুর দাম হাজার টাকার নিচে নেমে যাওয়ায় কোম্পানিটি ‘রাজা’ শেয়ারের উপাধিও হারাতে বসেছে।

এদিকে, ‘রাজা’ শেয়ারগুলোর মধ্যে ২৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া ওয়ালটন এবং ১৪০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেওয়া রেনেটা ফ্লোর প্রাইসের এখন নিয়মিত বাসিন্দা। ওয়ালটন ১ হাজার ৪৭ টাকা ২০ পয়সায় এবং রেনেটা ১ হাজার ৩০৩ টাকা ২০ পয়সায় অনেক দিন ধরে ফ্লোর প্রাইসে নজরবন্দি।

শেয়ারবাজারের সেরা শেয়ারের মধ্যে সবচেয়ে দামি হলো: রেকিট বেনকিজার, ইউনিলিভার, ম্যারিকো, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট ও বার্জার পেইন্টস। রেকিট বেনকিজারের শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৭৬১ টাকা ৯০ পয়সায়, ম্যারিকোর ২ হাজার ৪৩১ টাকা ৫০ পয়সায়, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট ২ হাজার ৬৪ টাকা ১০ পয়সায় এবং বার্জার পেইন্টস ১ হাজার ৭৩৪ টাকা ৪০ পয়সায়।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে রেকিট বেনকিজারের ফ্লোর প্রাইস ৪ হাজার ৭৬০ টাকা ৭০ পয়সা, ম্যারিকোর ২ হাজার ৪২১ টাকা ৫০ পয়সায়, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট ১ হাজার ৮৫৬ টাকা ৩০ পয়সায় এবং বার্জার পেইন্টসের ১ হাজার ৭১১ টাকা ৬০ পয়সায় নির্ধারিত। এর মধ্যে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট ও বার্জার পেইন্টসের শেয়ার কিছুটা স্বস্তির মধ্যে থাকলেও রেকিট বেনকিজার, ইউনিলিভার, ম্যারিকোর শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের কিনারায় অস্বস্তিতে রয়েছে।

শেয়ারবাজারের সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দেওয়ার কোম্পানি হলো রেকিট বেনকিজার। ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১৬৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এরপর সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দিয়েছে ম্যারিকো ৮০০ শতাংশ নগদ। চলতি বছরের জন্য ম্যারিকো ৩০০ শতাংশ অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দিয়েছে।

তারপর লিন্ডে বিডি ৫৫০ শতাংশ নগদ, ইউনিলিভার ৪৪০ শতাংশ নগদ, বার্জার ৪০০ শতাংশ নগদ, ওয়ালটন ২৫০ শতাংশ নগদ, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট ১৪০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস, বাটা সু ১০০ শতাংশ নগদ এবং রেনেটা ১৪৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে।

শেয়ারবাজারে কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম লেনদেনযোগ্য বা কম ফ্লোটিং শেয়ার রয়েছে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট, রেকিট বেনকিজার, ইউনিলিভার, বার্জার পেইন্টস, ওয়ালটন ও ম্যারিকোর। কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের লেনদেনযোগ্য শেয়ার রয়েছে ৩৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ বা ৪ লাখ ৫ হাজার ৭৫টি, রেকিট বেনকিজারের ১৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ বা ৮ লাখ ৫ হাজার ১৪০টি,

ইউনিলিভারের ১৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ বা ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৮৫৭টি, বার্জার পেইন্টসের ৫ শতাংশ বা ২৩ লাখ ১৮ হাজার ৮৯৪টি, ওয়ালটনের শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশ বা ২৯ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯৮টি ও ম্যারিকোর ১০ শতাংশ বা ৩১ লাখ ৫০ হাজার।

কোম্পানিগুলো মধ্যে শেয়ারপ্রতি সবচেয়ে বেশি সম্পদ রয়েছে লিন্ডে বিডির ৩৭৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর পর রয়েছে ওয়ালটনের ৩৩৪ টাকা ৬৮ পয়সা, বাটা সুর ২৭৪ টাকা ২৪ পয়সা, রেনেটার ২৬৫ টাকা ১০ পয়সা, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টসের ১৮২ টাকা ৫০ পয়সা, রেকিট বেনকিজারের ৮৬ টাকা ৩২ পয়সা ও ম্যারিকোর ৭৩ টাকা ৩ পয়সা।

‘রাজা’ শেয়ারের কোম্পানিগুলো মধ্যে শুধু ম্যারিকোর মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ২০ পয়েন্টের নিচে। বাকি সবকটির পিই রেশিও ২০ পয়েন্টের ওপরে। সর্বশেষ দামের ভিত্তিতে কোম্পানিগুলোর পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে বাটা সুর ২০ দশমিক ৪৫, বার্জার পেইন্টসের ২১ দশমিক ৮২, ম্যারিকোর ১৮ দশমিক ৬১, রেকিট বেনকিজারের ৪৬ দশমিক ৯৮, রেনেটার ২৫ দশমিক ৪৭,

ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ারের ৪৯ দশমিক ২৫ এবং ওয়ালটন হাইটেকের ২৬ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট। কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট, রেনেটা ও ওয়ালটন হাইটেক দেশীয় প্রতিষ্ঠান। বাকি পাঁচটি কোম্পানি বহুজাতিক।