শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশলী  খাতের কোম্পানি রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডকে (আরএসআরএম) উৎপাদনে ফেরাতে চান কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুর রহমান। সেজন্য কোম্পানিটির দেনা পরিশোধে মাকসুদুর রহমান তার কাছে থাকা সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এসবিএসি) সব শেয়ার বিক্রি করবেন বলে সুত্রে জানা গেছে।

৪০ কোটি টাকা বিল বকেয়া থাকায় আরএসআরএমের কারখানার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। সেজন্য কোম্পানিটির কারখানা ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া কোম্পানিটি কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে।

মাকসুদুর রহমান এসবিএসি ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তা। তার কাছে ব্যাংকটির ৩.১৭ শতাংশ বা ২.৫৬ কোটি শেয়ার রয়েছে। তিনি ২০২০ পর্যন্ত ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন। তবে ঋণখেলাপি হওয়ায় তিনি আর এই পদে থাকতে পারেননি। ঋণখেলাপির মামলায় জুন মাসে তিনি র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি জামিনে থাকলেও চট্টগ্রামের একটি আদালত তাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

এসবিএসি ২০২১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। মাকসুদুর রহমানের কাছে থাকা ব্যাংকটির শেয়ার তিন বছরের জন্য লকড-ইন রয়েছে। তবে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত ২৪ আগস্ট মাকসুদুর রহমানকে শর্ত সাপেক্ষে ব্যাংকটির শেয়ার বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে।

বিএসইসি সূত্র জানায়, মাকসুদুর রহমান এসইবিসি ব্যাংকের শেয়ারগুলো টিবিও ট্রেড লিমিটেডের কাছে প্রায় ৫০ কোটি টাকায় বিক্রি করবেন। আর এই শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে টিবিও ট্রেড লিমিটেডের প্রতিনিধিত্ব করছেন ওমর ফারুক। টিবিও ট্রেড লিমিটেড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।

ইতিমধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এর ওয়েবসাইটে মাকসুদুর রহমান মঙ্গলবার ইতিমধ্যে এসবিএসি ব্যাংকের ২.০৪ কোটি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে ১.৭৫ কোটি শেয়ার ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, কমিশনের দেওয়া শর্তের একটি হলো—শেয়ার বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ সুদমুক্ত ঋণ হিসেবে আরএসআরএম ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান মডার্ন স্টিলকে দেবেন মাকসুদুর রহমান। এই ঋণ বকেয়া বিদ্যুৎ বিল, কারখানা সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং কাঁচামাল কিনতে খরচ করা যাবে।

এই অর্থ ব্যবহারের তথ্য নিয়মিত বিএসইসিকে জানাতে হবে। এছাড়া শর্তানুযায়ী, বিক্রেতাকে অবশ্যই স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিতে হবে এবং শেয়ার বিক্রি সম্পন্ন হওয়ার পর সেগুলো ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত লকড-ইন থাকবে।

এদিকে মাকসুদুর রহমানের এই উদ্যোগের খবর আগেই ছড়িয়ে পড়ায় ডিএসইতে আরএসআরএমের শেয়ার দর মাত্র পাঁচদিনে ৩৭ শতাংশ বেড়ে ২৪.৪ টাকায় লেনদেন হয়েছে। যদিও মঙ্গলবার শেয়ার দর ২.৫৬ শতাংশ কমে সর্বশেষ ২২.৮ টাকায় লেনদেন হয়েছে। তবে ডিএসই থেকে শেয়ার দর বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হলে কোম্পানিটি শেয়ার দর বাড়ার পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে জানায়।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে আরএসআরএনের পরিচালক মারজানুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি। ২০১৪ সালে শেয়ার বাজার থেকে ইস্পাত প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। ২০২০-২১ হিসাব বছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে কোম্পানিটির অডিটর বলেছে, ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) কাছে আরএসআরএমের প্রায় ৯৫ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে।

তবে কোম্পানিটি ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ করছে না। আর এই কিস্তি পরিশোধের জন্য প্রতিষ্ঠানটির কাছে কোনো ফান্ডও নেই। তাছাড়া কোম্পানিটি নগদ অর্থ সংকটেও রয়েছে। তাই কোম্পানিটির ব্যবসা পরিচালনার সক্ষমতা বিষয়ে অডিটর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০২০-২১ হিসাব বছরে আরএসআরএম ৩৮ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছিল। ওই বছর কোম্পানিটির মোট বিক্রি ছিল ১৪৫ কোটি টাকা।

তবে ২০১৪ সালে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটি ওই হিসাব বছরে মোট ৪৭৭ কোটি টাকার রড বিক্রি করেছিল। সেটা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০১৮ হিসাব বছরে ৭৬৬ কোটি টাকায় পৌঁছায়। ওই বছর কোম্পানিটি মুনাফায়ও রেকর্ড করেছিল।

এর পরের বছর থেকেই আরএসআরএনের ব্যবসা কমতে থাকে। মূলত খেলাপি ঋণ ও ইউটিলিটি বিল বকেয়া থাকায় কোম্পানিটি ডুবতে শুরু করে। ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটি ঘোষিত ১০ শতাংশ লভ্যাংশও দিতে পারেনি।

সম্প্রতি আরএসআরএমের পৃষ্ঠপোষক ও পরিচালকরা গোপনে তাদে শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে কোম্পানিতে তাদের হোল্ডিং ৪৭.০৩ শতাংশ থেকে ২৯.৯৩ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে কোম্পানির স্পন্সর-পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ঘোষণা দেয়নি ডিএসই।

চলতি বছরের মার্চে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আরএসআরএমের আর্থিক বিবরণী খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বর্তমানে কমিশনের এনফোর্সমেন্ট বিভাগ তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে কাজ করছে।