শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে আশার আলো দেখতে পেয়েছিলো। সূচক ও লেনদেনের ইতিবাচক উত্থান এবং নতুন কমিশন কর্তৃক গৃহীত বাজার উন্নয়নে তড়িৎ পদক্ষেপে বিনিয়োগকারীদের মনে গেঁথে যাওয়া এক দশকের ক্ষত শুকাতে শুরু করেছিল।

যেই বাজার থেকে সবশ্রেনীর বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, পুরনো ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারাই আবার নতুন করে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু আশা জাগানিয়ার সেই পুঁজিবাজার যে বিনিয়োগকারীদের মরনফাঁদ হয়ে দাড়াবে- তা কে জানতো!

এদিকে, থেমে থেমে দরপতনে নিঃস্ব বিনিয়োগকারীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টেকহোল্ডাররা একের পর এক আশার বাণী শোনালেও তা বাস্তব রুপ লাভ করছে না। প্রথমে ব্যাংক, এরপর সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি। এরপর মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলাররা।

পাশাপাশি অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ঘোষণা পুঁজিবাজারে মন্দাভাবের মধ্যে বাজারে তারল্য বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কোনো পদক্ষেপই কাজে লাগছে না। সবশেষ ঘোষণা ছিল, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো রোজায় তিন শ কোটি টাকা আর আড়াইশ স্টক ডিলার এক কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করবে। কিন্তু রোজার তিন কর্ম দিবসেই লেনদেন কমল ক্রমাগত।

এছাড়া পতন ঠেকাতে বেঁধে দেয়া হলো ২ শতাংশের সার্কিট ব্রেকার, তাও কোন কাজে আসে নি। প্রায় প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক শেয়ারের দর কমছে। এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ পর্যন্ত থাকলেও কোনো ক্রেতা দেখা যাচ্ছে না বহু কোম্পানির।

দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ থাকার পরেও প্রায় প্রতিদিনই পয়েন্ট সূচকের পতন, লেনদেন তলানিতে নেমে আসার ঘটনা বিনিয়োগকারীদের হতাশা এখন ক্ষোভে পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় ‘ফ্লোর প্রাইস’-এর পূনর্বহাল সময়োপযোগী পদক্ষেপ হতে পারে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে শেয়ারের দামের পতন ঠেকাতে গত বছরের ১৯ মার্চ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়। যাতে বেঁধে দেওয়া ওই সীমার নিচে কোনো শেয়ার নামতে না পারে। এভাবে গত বছরের মার্চে শেয়ারবাজারের ভয়াবহ পতন থামিয়েছিল বিএসইসির তৎকালীন কমিশন। ওই কমিশনে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন এম খায়রুল হোসেন।

ফ্লোর প্রাইস আরোপের আগে ১৮ মার্চ দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স নেমেছিল ৩ হাজার ৬০০ পয়েন্টে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে নির্ধারিত সীমার নিচে শেয়ারের দাম না নামায় ২৫ মার্চ ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার পয়েন্টে।

প্রসঙ্গত, ফ্লোর প্রাইস হলো যেকোনো সেবা বা পণ্যের সরকার নির্ধারিত দাম যা ওই পণ্যের ভারসাম্য বা ভারসমতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় যার নিচে দাম নামতে না পারলেও উঠার বিস্তর সুযোগ থাকে। বাংলাদেশে করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবকালে শেয়ার মার্কেটের ক্রমাগত দরপতন ঠেকাতে সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন ১৯ মার্চ থেকে ফ্লোর প্রাইস ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্ধারিত দামের নিচে কোনো কোম্পানির শেয়ার ট্রেড হওয়া বন্ধ করা হয়, যদিও শেয়ারটির দাম যত খুশি বাড়তে পারে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাক বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বাজার উন্নয়নে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। তবে কারসাজি চক্রের দৌরাত্মে বাজার স্থিতিশীল হতে পারছে না। এছাড়া ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ বাড়ানোর মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে।

পরিণতিতে বিনিয়োগগকারীদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় প্রতিদিনই কমছে সূচক ও লেনদেন। নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তার শিগগিরই আগের ন্যায় ফ্লোর প্রাইস আরোপের বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করছেন।