শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টেলিকমিউনিকেশন খাতের কোম্পানি রবি আজিয়াটা ও ব্যাংক খাতের আইএফআইসি ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশিত লভ্যাংশ না পাওয়ায় আশায় গুড়েবালি হয়েছে। ফলে এ দুই কোম্পানির শেয়ারহােল্ডারা ঘোষিত লভ্যাংশে হতাশ হয়েছেন। রবি আজিয়াটার বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা নানা প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করতে দেখা গেছে।

কেউ কেউ বলেছেন, বহুজাতিক কোম্পানিটি এবার ভালো ডিভিডেন্ড দিবে। কোম্পানিটির এবার ডিভিডেন্ডে চমকও দেখাতে পারে। কিন্তু সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিভিডেন্ড না আশায় বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়েছে। রবি মাত্র ২ শতাংশ ডিভিডেন্ড প্রদান করতে গিয়ে রিজার্ভ ব্যবহার করতে হয়েছে। কোম্পানিটি ২০২১ সালে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৩৪ পয়সা।

কিন্তু কোম্পানিটির বোর্ড ওই বছরের ব্যবসায় মোট ৫ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ৫০ পয়সা ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ মুনাফার অতিরিক্ত ১৬ পয়সা রিজার্ভ থেকে দিতে হবে। এদিকে শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২১) শেয়ার প্রতি আয় কমেছে। কোম্পানিটির গত বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ২১) যে হারে ব্যবসা হয়েছে, তার প্রতিফলন শেষ প্রান্তিকে দেখা যায়নি।

জানা গেছে, কোম্পানিটির ২০২১ সালের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছিল ৩২ পয়সা। তবে বছর শেষে এই মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ পয়সা। অর্থাৎ কোম্পানিটির শেষ প্রান্তিকে ইপিএস হয়েছে মাত্র ০২ পয়সা।

ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ি, কোম্পানিটির ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস হয়েছিল ০৭ পয়সা। যা দ্বিতীয় প্রান্তিকে ০৯ পয়সা ও তৃতীয় প্রান্তিকে ১৭ পয়সা আয় হয়েছে হয়েছিল। এতে করে ৩টি প্রান্তিকের একত্রে বা ৯ মাসে ইপিএস দেখানো হয়েছিল ৩২ পয়সা। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ১৫ মার্চ ২০২১ সালের পুরো বছরের যে আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেছে, সেখানে ইপিএস দেখিয়েছে ৩৪ পয়সা। এই হিসাবে শেষ প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফায় ব্যাপক কমে গেছে।

২০২০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া রবি আজিয়াটার ৫ হাজার ২৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ২০২১ সালে শেয়ারপ্রতি ৩৪ পয়সা করে নিট ১৭৮ কোটি ৯ লাখ টাকার মুনাফা হয়েছে। তবে কোম্পানিটির পরিচালনা বোর্ড ওই বছরের জন্য ৫ শতাংশ হারে ২৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকার ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এক্ষেত্রে মুনাফার অতিরিক্ত ৮৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা রিজার্ভ থেকে দিতে হবে।

অপরদিকে, একই বছরে ১ হাজার ৩৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে শেয়ারপ্রতি ২৫ টাকা ২৮ পয়সা করে নিট ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার মুনাফা করেছে জিপি।

আরিফুর রহমান নামে এক বিনিয়োগকারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, একই ধরনের ব্যবসায় থাকা গ্রামীনফোণ বিনিয়োগকারীদের ফাটাফাটি ডিভিডেন্ড দিচ্ছে। রবি গ্রামীণফোনের মতো বড় ডিভিডেন্ড না দিতে পারলেও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ইজ্জত নষ্ট করবে না।

অন্যদিকে আইএফআইসি ব্যাংকের আয়ও মহামারির দ্বিতীয় বছরে বেড়েছে ব্যাপক হারে। তবে কোম্পানিটি লভ্যাংশ বাড়ায়নি। আর অতীতের মতোই এবারও নগদের বদলে বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ বোনাস অর্থাৎ প্রতি ২০টি শেয়ারের বিপরীতে একটি বোনাস শেয়ার দেয়ার কথা জানানো হয়েছে।

বুধবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য অনুসারে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির আয় আগের বছরের তুলনায় সোয়া দুই গুণের মতো বেড়েছে।

২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আইএফআইসি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৪৯ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে এই আয় ছিল ৬৭ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ২২২ শতাংশ আয় করেছে কোম্পানিটি।

আয়ের পাশাপাশি কোম্পানিটির সম্পদমূল্যও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট সম্পদ দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৩ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার টাকা, যা আগের বছরের ডিসেম্বর শেষে ছিল ২ হাজার ৭১২ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। শেয়ারপ্রতি বর্তমানে সম্পদ আছে ১৭ টাকা ৭৮ পয়সার, যা আগের বছর ছিল ১৫ টাকা ৯৫ পয়সা।

যারা এই লভ্যাংশ নিতে চায়, তাদেরকে আগামী ১২ এপ্রিল পর্যন্ত শেয়ার ধরে রাখতে হবে। অর্থাৎ সেদিন হবে রেকর্ড ডেট। লভ্যাংশ চূড়ান্ত করতে বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম ডাকা হয়েছে ১২ মে।