শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম: পুঁজিবাজারে টানা দুই কার্যদিবস সংশোধন শেষে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচকের বড় উত্থান ঘটছে। একদিন ব্যাপকভাবে বাড়ার পর দুদিন ব্যাংক খাতের শেয়ারগুলো দর হারানোর পর তৃতীয় কর্মদিবসে আবার ঘুরে দাঁড়াল। বিমা খাত ছাড়া প্রধান প্রায় সব খাতের বিনিয়োগকারীদের মাঝে উৎফুল্ল ভাব বিরাজ করছে। এর মধ্যে ব্যাংক ছাড়া দ্বিতীয় যে খাতটিতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে, সেটি হলো বস্ত্র। এই খাতেও ব্যাংকের মতো হাতেগনা এক দুইটি ছাড়া বেড়েছে বাকিগুলোর দাম।

গত মঙ্গলবার ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেনের পর দুই দিনের সংশোধনে বিনিয়োগকারীরা কেনাবেচা কমিয়ে দিলেও রোববার তারা ছোটখাট সংশোধন কাটিয়ে আবার শেয়ার ক্রয়ের দিকে ঝুঁকছেন। দুই কর্মদিবস পর লেনদেন আবার আড়াই হাজার পয়েন্ট ছাড়াল।

দিন শেষে সূচকের যে অবস্থান, সেটি ২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ। সেদিন সে সময়ের ডিএসই সূচক ছিল ৭ হাজার ১২৫ পয়েন্ট। রোববার সূচক দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮৪২ পয়েন্টে। আগের দুই দিন ২৬ পয়েন্ট হারানোর পর একদিনেই বেড়েছে ৮১ পয়েন্ট। এই উত্থানের মধ্য দিয়ে সূচকের অবস্থান ২০১১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারির ৬ হাজার ৮২২ পয়েন্টের অবস্থানকে অতিক্রম করে গেল।

ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রকৌশলসহ ১৪ খাতের শেয়ারের দাম বাড়ায় সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। রোববার দিনভর সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় চলে লেনদেন। এদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক বেড়েছে ৮১ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বেড়েছে ২০৮ পয়েন্ট।

বুধ ও বৃহস্পতিবার টানা দুদিন দরপতনের পর বড় উত্থানের মধ্যদিয়ে সপ্তাহ শুরু করল দেশের পুঁজিবাজার। আর এ উত্থানে সূচক দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮৪২ পয়েন্টে, যা এর ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এদিন সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম ও লেনদেন।

ডিএসইর বাজার মূলধনও আগের দিনের চেয়ে ৪ হাজার ৭১৭ কোটি ৬২ লাখ ১৯ হাজার টাকা বেড়ে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪৩৯ কোটি ২৪ লাখ ২৩ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা পুঁজিবাজারের ইতিহাসে আরও একটি মাইলফলক।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রোববার ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত ৩২টি কোম্পানির মধ্যে ২৮টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। কমেছে দুটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম। আর্থিক খাতের ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০টির শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে একটির শেয়ারের দাম। প্রকৌশল খাতের ৪২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৫টির শেয়ারের দাম।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। কমেছে ৭ টির শেয়ারের দাম। বস্ত্র খাতের ৫৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে। একইভাবে টেলিযোগাযোগ খাতের ৩টি কোম্পানির মধ্যে ২টির শেয়ারের দাম।

সব মিলিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২২টি খাতের কোম্পানির মধ্যে রোববার ১৪টি খাতের কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর তাতে ডিএসইতে মোট লেনদেন হওয়া ৩৭৬টির মধ্যে ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে, কমেছে ৯৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির। মোট ৯০ কোটি ৬৪ লাখ ৫৪ হাজার ১৯০টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। তা থেকে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৭০৬ কোটি ৩১লাখ ৮১ হাজার টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ২১৮ কোটি ৮৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।

অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমায় এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৮১ দশমিক ৬১ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৮৪২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রধান সূচকের পাশাপাশি ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৮ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৭৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৪৫১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

এদিন ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিমেন্ট খাতের কোম্পানি লাফার্জহোলসিম। এরপর সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ার। এরপর যথাক্রমে ছিল আইএফআইসি ব্যাংক, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ব্যাংক, ম্যাক্সন স্পিনিং, পাওয়ার গ্রিড, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স ও ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেড।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২০৮ পয়েন্ট বেড়ে ১৯ হাজার ৯২১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩২৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২১৮টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। কমেছে ৮৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। এ বাজারে লেনদেন হয়েছে ১০০ কোটি ৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৬০ টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৮৮ কোটি ৯৯ লাখ ২৩ হাজার ৮৮৩ টাকা।