শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের কোম্পানি গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডেট ৩০ জুন ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য “নো” ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির ঘোষিত নো ডিভিডেন্ডে বিনিয়োগকারীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি কোম্পানিটির পরিচালকদের শাস্তির দাবী জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গত বছর কোম্পানিটি ৭ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ওই সময় কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় হয়েছিল ২.০৩ টাকা।

জানা যায়, সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.০৪ পয়সা। একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ০২ পয়সা। কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম)আগামী ২৪ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে। রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ নভেম্বর।

এদিকে, ডিভিডেন্ড ঘোষণার পর কোম্পানিটির “নো” ডিভিডেন্ড ঘোষণার তথ্য নিশ্চিত হতে দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ অফিসে ফোন দিয়েছে একাধিক বিনিয়োগকারীরা। এসময় কোম্পানির এমন সিদ্ধান্ত ও আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। তারা বলেন, করোনা কালে হিমায়িত খাদ্যের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছিল। তার পরেও কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় ০.০৪ টাকা হওয়া অযুক্তি। তারা বলেন, করোনার সুযোগ নিয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক প্রতিবেদনে মনগড়া তথ্য দিয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা উচিত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিএসইসি’র।

এদিকে ঢাকঢোল পিটিয়ে এবং নিজেদের সম্পর্কে ফুলিয়ে ফাপিয়ে বিনিয়োগকারীদের অন্তরে ঢুকে বিপুল অঙ্কের প্রিমিয়াম খাইয়ে এখন আস্তে আস্তে নি:শেষ হওয়া শুরু করেছে ২০১০ সালের ধস পরবর্তী সময়ে তালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলো। ব্যাপক ভিত্তিক যাচাই বাছাই না করেই শুধুমাত্র ইস্যুয়ারদের কাগুজে হিসাবের ওপর ভিত্তি করে লিস্টিং করায় একের পর এক কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারনা করার সুযোগ পাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, লাভজনক কোম্পানির খোলস পড়ে বাজারে এসে ধারাবাহিক লোকসানে যাওয়া এবং দিনের পর দিন শেয়ার দর কমতে কমতে এক সময় ইস্যু মূল্যের নিচে এবং সেখান থেকে ফেস ভ্যালুরও নিচে নেমে যাওয়ার এই প্রবনতা এখনই রুখে দেয়া সম্ভব না হলে এই বাজারের ভবিষ্যত আলোতে না গিয়ে অন্ধকারের দিকেই নেমে যাবে। আর এটি রোধ করার এখনই উপযুক্ত সময়। এ ধরণের অনেক কোম্পানি আছে।

এসব কোম্পানির বিষয়গুলো বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দেখার কথা। বিএসইসিকে এসব কোম্পানির বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। এছাড়া বিএসইসি চাইলে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) বাদও দিতে পারে।

উদাহরন হিসাবে উঠে এসেছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের গোল্ডেন হার্ভেস্ট এ্যাগ্রো লিমিটেডের নাম। কোম্পানিটি ২০১৩ সালে ৩ কোটি শেয়ার ছেড়ে ১০ টাকা ফেসভ্যালুর সঙ্গে ১৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ মোট ২৫ টাকা ইস্যুমূল্যে বাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। উদ্দেশ্য ছিল, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং ব্যাবসা সম্প্রসারন। এতে একদিকে সুদ বাবদ ব্যয় কমবে, অন্যদিকে ব্যবসার পরিধি বেড়ে মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ঘটবে। আর বিনিয়োগকারীরাও সেই আশায় এ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছিলেন তাদের কষ্টার্জিত আয়ের অর্থ দিয়ে।

কিন্তু তাদের সেই আশা আর পূরন হয়নি। তালিকাভুক্তির পর কোম্পানিটির মুনাফা কমার সঙ্গে সঙ্গে শেয়ার দরও আশঙ্কাজনকহারে কমতে থাকে। সেইসঙ্গে বেড়েছে তাদের বিভিন্ন মেয়াদের ঋণের পরিমাণ। এমতাবস্থায় ঋণ পরিশোধের জন্য প্রিমিয়ামসহ কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির অনুমোদনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা।

নিয়োগকারীদের অভিযোগ, তালিকাভুক্তির বছর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ২.৪৩ টাকা হলেও কোম্পানিটির অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের কারণে সুদবাবদ ব্যয় বেড়ে গেছে। পরিণতিতে ২০১৫ শেষে কোম্পানির ইপিএস কমে চার পয়সায় নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) ২৫.৫৮ টাকা থেকে কমে ১৫.০২ টাকায় নেমে এসেছে। যা কোম্পানিটির ইস্যুমুল্যের চেয়েও কম।

শুধু তাই নয় এ শেয়ারে বিনিয়োগ করে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন হাজার হাজার বিনিয়োগকারী। ২০১৩ সালের ৪ মার্চ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৭৫ টাকায় লেনদেন শুরু করে কোম্পানিটি। এরপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে কোম্পানিটির শেয়ার দর। বুধবার এর শেয়ার ১৬.৭০ টাকায় সর্বশেষ লেনদেন হয়।

এ বিষয় জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, এ ধরণের অনেক কোম্পানি আছে। এসব কোম্পানির বিষয়গুলো বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দেখার কথা। বিএসইসিকে এসব কোম্পানির বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। এছাড়া বিএসইসি চাইলে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) বাদও দিতে পারে। সুত্র: দেশ প্রতিক্ষণ ডটকম