শেয়ারবার্তা ২৪, ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তৈরি পোশাক খাতে আবারও কর ছাড় দিয়েছে সরকার। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে এ খাতের উৎসে কর কমানো হয়েছিল। দুই মাসের মাথায় রফতানিকে উৎসাহিত করার জন্য আবারও বড় ধরনের কর প্রণোদনা দেওয়া হলো।

উল্লেখ্য, দেশের মোট রফতানি আয়ের শতকরা ৮০ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে। গত অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় হয় ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এ খাতের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, শতভাগ পোশাক শিল্পের জন্য এবার পরিবহন ব্যয়, তথ্যপ্রযুক্তি সেবা, সিকিউরিটি সার্ভিস, ল্যাবরেটরি টেস্টসহ নানা সেবায় মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ বিষয়ে আদেশ জারি করে তা কার্যকর করেছে। এ ছাড়া পোশাক খাতের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিলের ওপর ভ্যাট পরিশোধের নিয়ম আরও শিথিল ও সহজ করা হয়।

এনবিআর বলেছে, এসব সেবার ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের ফলে পোশাক খাতের খরচ আরও কমবে, বাড়বে রফতানি আয়। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এতে সেবায় ভ্যাট পরিশোধের ক্ষেত্রে হয়রানি ও এ খাতের খরচ কমবে।

এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে পোশাক খাতের উৎসে কর ১ শতাংশ কমিয়ে দশমিক ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে এ খাতের করপোরেট কর ১৫ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ এবং যারা সবুজ শিল্প স্থাপন করবে, তাদের করপোরেট কর ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।

জানা যায়, আগে পোশাক মালিকরা বন্দর থেকে ফ্যাক্টরিতে মালপত্র আনা-নেওয়ার জন্য পরিবহনের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতেন। এখন থেকে পরিবহন ব্যয়ে কোনো ভ্যাট দিতে হবে না। ফলে পোশাক খাতের পরিবহন ব্যয় কমবে। আগে পোশাক কারখানায় ইন্টারনেট ব্যবহার, অনলাইনসহ যে কোনো তথ্যপ্রযুক্তি সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হতো। এনবিআর বলেছে, এখন থেকে পোশাক খাতে ব্যবহূত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে কোনো ধরনের ভ্যাট দিতে হবে না।

পোশাক পণ্য তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল দেশ-বিদেশ থেকে কিনে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করতে হয়। এ পরীক্ষার জন্য পোশাক মালিকদের ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হতো। গতকাল এনবিআরের অদেশে বলা হয়েছে, ল্যাবরেটরিতে যে কোনো কেমিক্যাল পরীক্ষার জন্য মালিকদের এখন আর ভ্যাট দিতে হবে না।

অনেক কারখানা মালিক শ্রমিকদের বিনোদনের জন্য খরচ করে থাকেন। এতদিন বিনোদনের জন্য ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য ছিল। এখন থেকে পোশাক খাতের যে কোনো ধরনের বিনোদনকে ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পোশাক মালিকরা তাদের শ্রমিকদের কল্যাণে পোশাক-পরিচ্ছদ, জুতা, প্যান্ট ইত্যাদি সরবরাহ করে থাকেন। আগে এসব পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হতো। এখন আর দিতে হবে না।

পোশাক শিল্পে অনিক সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ পেয়ে থাকেন। এ নিরাপত্তা সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য ছিল। এনবিআরের নতুন আদেশে এ সেবার ওপর পুরোপুরি ভ্যাট তুলে নেওয়া হয়েছে। কোনো পোশাক প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে হলে জোগানদারের বিলের বিপরীতে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হতো। এখন জোগানদার সেবায় কোনো ভ্যাট লাগবে না।

বর্তমানে পোশাক কারখানায় গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি (ওয়াসা সেবা) ইত্যাদি সেবা বাবদ যে বিল হয় তার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট মওকুফ সুবিধা রয়েছে। তবে এ সুবিধা পেতে বেশ জটিলতা ও হয়রানি পোহাতে হয়। এনবিআরের অধীনে প্রত্যর্পণ অধিদপ্তরের (ডেডো) মাধ্যমে এ সুবিধা ফেরত দেওয়া হয়।

কিন্তু এ সুবিধা নিতে হলে রফতানিকারকদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। গতকাল এনবিআর যে নিয়ম করেছে, তাতে বলা হয়েছে- রফতানিকারকরা সরাসরি এ সুবিধা পাবেন। এর জন্য ডেডো দপ্তরে যেতে হবে না।