শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা সপ্তম দিনের মতো উত্থানে শেষ হলো লেনদেন। তবে বাজারে ঘুরে ফিরে সব খাতের শেয়ারের দর বাড়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। এই অবস্থায় পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগ আগ্রহ তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। করোনা পরিস্থিতিতে চলমান লকডাউনে পুঁজিবাজারে লেনদেন হচ্ছে সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।

এই সময়ে মঙ্গলবার ডিএসইতে গত তিন মাসের সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। পুঁজিবাজারের এমন অবস্থায় নতুন করে বিনিয়োগ আগ্রহী হতে দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের।

চলমান লকডাউন শেষ হওয়ার কথা ২১ এপ্রিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লকডাউন বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত। এই সময়ে পুঁজিবাজারের লেনদেন বর্তমান নিয়মেই পরিচালিত হবে বলে বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়। করোনার এই সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিনিয়োগকারীদের ব্রোকার হাউজে না গিয়ে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করার পরামর্শ দেন। ফলে গত ৫ এপ্রিল থেকে অদ্যবধি বিনিয়োগকারীরা ডিজিটাল প্লাট ফর্মে লেনদেন করে আসছেন।

এছাড়া লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই বিনিয়োগকারীরা ডিজিটার প্ল্যাটফর্মে লেনদেন করে আসছেন। বুধবার অতিরিক্ত লেনদেন চাপে ডিএসই মোবাইল অ্যাপ যথাযথভাবে কাজ করেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে শেয়ার কেনা বেচার জন্য অর্ডার দেয়া হলেও তা ছিল ধীরগতির। অনেক অর্ডার কার্যকর হয়নি বলেও বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ থেকে অভিযোগ এসেছে। একই সঙ্গে ব্রোকার হাউজগুলো থেকে শেয়ার ক্রয়ের লিমিট নেয়ার ক্ষেত্রেও জটিলতা হয়েছে।

এ বিষয়ে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, এ সংক্রান্ত কিছুটা জটিলতা হচ্ছে। করোনার এই সময়ে যেহেতু ডিএসইর প্রি ওপেনিং সেশন নেই, তাই ব্রোকার হাউজগুলোকে আগের দিন লিমিট নেয়া উচিত। লেনদেন শুরু হওয়ার পর লিমিট নিতে গেলে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এবং তা কার্যকর হতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগছে।

তিনি বলেন, মোবাইল অ্যাপ নিয়ে এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি লেনদেন হচ্ছে। ফলে লেনদেন সংখ্যা বেড়ে গেছে। এটা নিয়ে কমিশন কাজ করছে। যাতে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি অর্ডার দিতে পারে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে টানা সূচক ও লেনদেন বাড়ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। এ ছাড়া সামনে রমজানের ঈদের কারণে এমন বাজারে নতুন বিনিয়োগ করলে মুনাফা পাবে, প্রত্যাশায় বিনিয়োগে যাচ্ছে। লকডাউনের শুরুতে বিনিয়োগকারীরা এতটা আশ্বস্ত হতে পারেনি। কিন্তু যখন দেখছে পুঁজিবাজার স্বাভাবিকভাবে লেনদেন চলছে তখনই নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে প্রায় সব কোম্পানির শেয়ার দরই এখন বাড়ছে। তবে সবচেয়ে বেশি যেসব কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছে সেগুলোকে ফান্ডামেন্টালি বিবেচনা করা যায় না। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত হবে দর বাড়ছে দেখে শেয়ার না কেনা। বরং এ সময়ে ভালো মানের শেয়ার কেনা। তাহলে দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগেও লাভবান হবে। আর দর কমে গেলেও খারাপ কোম্পানির মতো বড় অংকের লোকসান দিতে হবে না।

ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি অধিকাংশ শেয়ারে বিনিয়োগ উপযোগী। বিনিয়োগকারীরা বুঝে শুনে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবে। আমাদের দেশে অনেকগুলো মিউচ্যুয়াল ফান্ড ভালো করছে। কিন্ত যেগুলো খারাপ করছে সেটিকেই বিনিয়োগকারীরা উদাহরণ হিসাবে নিয়ে আসে। এই জায়গাটিকে ঠিক করতে হবে। আর আছে বন্ড মার্কেট। এখানে অনেকে বন্ড ছেড়ে টাকা সংগ্রহ করতে চাচ্ছে। আমি বলতে চাই, যারা বন্ড ছাড়তে আগ্রহী তাদের কী কী সম্পদ আছে সেটি আগে যাচাই করতে হবে। তা না হলে নানাভাবে বন্ড মার্কেটও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শুধু ব্যাংক বা মিউচুয়াল ফান্ডেরই নয়, এখন পুঁজিবাজারে বেশিরভাগ শেয়ারই ক্রয়যোগ্য অবস্থানে রয়েছে। তবে তুলনামূলকভাবে ব্যাংক ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ারদর অনেক কম। এখান থেকে দেখেশুনে বিনিয়োগ করলে ইনভেস্টরদের ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তাদের বিনিয়োগ করতে হবে ধৈর্য ধারণ করে। দ্রুত মুনাফা তুলব তাদের এমন প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে বিনিয়োগযোগ্য শেয়ার বা ইউনিটের মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড। বর্তমানে এ খাতের ইউনিটের গড় মূল্য আয় অনুপাত অবস্থান করছে দুই পয়েন্টে। মূলত ২০১০ সালে পুঁজিবাজারের ধসের পর মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটদর ক্রমেই কমতে থাকে, যার জের ধরে কমতে থাকে ফান্ডগুলোর পিই-রেশিও বা ইউনিটের মূল্য আয় অনুপাত। সম্প্রতি এ খাতের ইউনিটদর কিছুটা বাড়লেও এখনও ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে ৩১টির ইউনিটদর অভিহিত দরের নিচে রয়েছে, যার জের ধরে ফান্ডগুলোর মূল্য আয় অনুপাত নিম্ন অবস্থানে রয়েছে। নিয়মানুযায়ী এ ধরনের পিই-রেশিওধারী কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে খুব অল্প সময়ে মুনাফা করা সম্ভব।

বিনিয়োগযোগ্য অবস্থানে পরের অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। বর্তমানে এর পিই-রেশিও অবস্থান করছে ৭.৫০ পয়েন্টে। বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০১০ সালের ধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যাংক ও মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা। কারণ ওইসব শেয়ারের দর সবচেয়ে বেশি কমে গিয়েছিল। অথচ দুটি খাতই পুঁজিবাজারের শক্তিশালী খাত। অনেক আগেই এসব শেয়ার ও ইউনিট বিনিয়োগযোগ্য অবস্থানে চলে এসেছে। আর সম্প্রতি পতনে দরে আরও কমে গেছে। এই অবস্থান থেকে শেয়ার ক্রয় করলে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। তারা বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজার বিনিয়োগযোগ্য অবস্থানে রয়েছে।

এদিকে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১.৪৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪২৩.২২ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ০.৮৬ পয়েন্ট বাড়লেও শরিয়াহ সূচক ০.০৪ পয়েন্ট কমেছে।

ডিএসইতে ৭৭৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের দিন থেকে ৫২৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা কম। আগের দিনি লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ২৯৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকার। ডিএসইতে ৩৫৪টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ১৩০টির বা ৩৬.৭২ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। শেয়ার দর কমেছে ১৫৭টির বা ৪৪.৩৫ শতাংশের এবং বাকি ৬৭টির বা ১৮.৯৩ শতাংশের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৫.৭৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭১১.২৫ পয়েন্টে। সিএসইতে আজ ২৪২টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০২টির দর বেড়েছে, কমেছে ৯৬টির আর ৪৪টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৩৩ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। সুত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ