ফয়সাল মেহেদী, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ফের শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস কারসাজি করছে স্বল্পমূলধনী কোম্পানি লিবরা ইনফিউশনস লিমিটেড। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের এ কোম্পানি চলতি অর্থবছরের প্রকাশিত অর্ধবার্ষিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান হলেও তা আয় হিসাবে দেখিয়েছে। এর আগেও ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির বিরুদ্ধে মুনাফা ও শেয়ারপ্রতি আয়ে (ইপিএস) গড়মিল করার অভিযোগ উঠেছিল।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, আজ ডিএসই’র ওয়েবসাইটে লিবরা ইনফিউশনসের চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের অর্থাৎ অর্ধবার্ষিকের (জুলাই-ডিসেম্বর’ ১৬) অনীরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে কোম্পানিটি ছয় মাসের মোট শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস দেখিয়েছে ০.৭৮ টাকা।

তবে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বা প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’ ১৬) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ৫.৭৮ টাকা। আর পরবর্তী তিন মাসে বা দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’ ১৬) শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ৪.৭৪ টাকা। সে হিসাবে দুই প্রান্তিক মিলে অর্ধবার্ষিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান হওয়ার কথা ১.০৪ টাকা। অথচ কোম্পানিটি অর্ধবার্ষিকে শেয়ারপ্রতি আয় দেখিয়েছে ০.৭৮ টাকা। এদিকে এ গড়মিল তথ্য ডিএসইরও নজরে এসেছে। ফলে কোম্পানির প্রোফাইলে অর্ধবার্ষিকের প্রতিবেদন ‘লাল চিহ্ন’ দেয়া হয়েছে।

এদিকে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি পর্ষদ সভার আয়োজন করতে চাইলে তা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় পত্রিকায় মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে প্রকাশ করার বাধ্য-বাধকতা রয়েছে। লিবরা ইনফিউশনস ঘোষণা না দিয়েই ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকের সভা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কবে-কখন পর্ষদ (বোর্ড) সভা করেছে তার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অথচ মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হওয়ার সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে আইন লঙ্গন করেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান-উর-রশীদ চৌধুরি দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, ‘লিবরার বিরুদ্ধে মুনাফা ও ইপিএস কারসাজির অভিযোগ আগেও এসেছে। বিএসইসি কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়নি। তাই আবারো একই ধরনের অন্যায় করার সাহস পেয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিলে বার বার কারসাজি করার সাহস পেত না’। এসব অনিয়মে বলির পাঠা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হওয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

জানা গেছে, এর আগের অর্থবছরেও (২০১৫-১৬) লিবরা ইনফিউশনসের বিরুদ্ধে মুনাফা ও ইপিএস কারসাজির অভিযোগ উঠেছিল। ওই অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’ ১৫) এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস দেখানো হয়েছিল ৮.১৪ টাকা। অথচ আলোচ্য হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’ ১৫) শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৭.৬৬ টাকা। ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধ না করে মুনাফা হিসেবে দেখানোর কারণে ওই অর্থবছরের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে লিবরার মুনাফা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।

আর ওই আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর ৯ কার্যদিবসে কোম্পানির শেয়ারদর প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে ডিএসই লিবরার আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ওই সময় একটি প্রতিবেদন তৈরি করে গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে জমা দেয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী কারসাজি করে মুনাফা বেশি দেখানো হয়েছে মনে করে দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক হিসাব সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসই’র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ধরনের ভুল তথ্য দেওয়া কোম্পানিগুলো আমাদের নজরে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে কোম্পানির তথ্যে কোনো গড়মিল থাকলে তা লাল কালিতে চিহ্নিত করা হয়। আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে গড়মিল বা ইচ্ছাকৃত কারসাজির কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে’। সুত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ