united airশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ভ্রমন খাতের কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারের ৬শ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়েছে কর্তপক্ষ। ছয় মাস ধরে বেতন দিচ্ছে না কোম্পানি। চলতি বছরের এপ্রিলে হঠাৎ করেই বাধ্যতামূলক ছুটি চিঠি দেয়া হয় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেডের উত্তরা শাখার সেলস ম্যানেজার মাসুদ রানাকে।

চিঠিতে বলা হয়, “কোম্পানির সব ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আপনাকে ‘লিভ উইদাউট পেমেন্ট’ অর্থাৎ বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হলো। কোম্পানির অবস্থা ভাল হলে, আপনি বেকার থাকলে, আপনাকে চাকরিতে নেওয়া হবে”।

মাসুদ রানা বলেন, আমার ছয় মাসের পাওনা টাকা দেয়নি কোম্পানি। আজ পর্যন্ত কোম্পানির পক্ষ থেকে টাকা দেওয়া হবে কিনা তার কোনো সঠিক জবাবও দেওয়া হয়িনি। ফলে পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। পেটের ক্ষুধা মেটাতে এখন উত্তরার রাস্তায় পেপসি-কোকাকোলা দোকান দিয়েছি।

তারই অধীনে চাকরি করতেন সেলস এক্সিকিউটি অফিসার মামুনুর রশিদ। তিন মাসের বেতন বকেয়া রেখে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়েছে কোম্পানি থেকে। অথচ চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার তিন মাস আগে তাকে ভাল কাজ করার জন্য জুনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার থেকে পদোন্নতি দিয়ে সেলস এক্সিকিউটিভ অফিসার করা হয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোনো টাকা পয়সা ছাড়াই আগস্টে আমাকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। অফিস থেকে জানানো হয়েছে, পরে সব বেতন দেওয়া হবে এবং কোম্পানির ফ্লাইট শুরু হলে দ্রুত কাজে দিতে বলা হবে। তিনি বর্তমানে মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিজের সেলস এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে কাজ করছেন।

শুধু সেলস এক্সিকিউটিভ অফিসার মামুনুর রশিদ, সেলস ম্যানেজার মাসুদ রানা নয়, পিয়ন, ঝাড়ুদার, জুনিয়র এক্সিকিউটিভ, সহকারী এক্সিকিউটিভ, এক্সিকিউটিভ, জিএম ,এজিএম, পাইলট, ডেপুটি ম্যানেজার, ম্যানেজারসহ বিভিন্ন পদবির প্রায় ছয় শতাধিক কর্মকর্তাও কর্মচারীদের ‘লিভ উইদাউট পেমেন্ট’ অর্থাৎ বিনা বেতনে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়েছে।

এতে তিন, পাঁচ এবং ছয় মাসের (তিন ধাপে) বেতন বকেয়া রেখে কর্মকর্তা এবং কর্মীদের ছুটি দেয়া হয়। তাদের উড়োজাহাজ চলাচল শুরু হলে আবারো ফেরত আনার প্রতিশ্রতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, এর আগে এ সেক্টেরের কোনো কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক সঙ্গে সবাইকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়নি। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম।

এদিকে নতুন করে লোকবল নেয়ার জন্য গত জুলাই মাসে একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। এতে চাকরি প্রাথী ৩ হাজার বায়োডাটা জমা পড়েছে। তাদের সাক্ষৎকারও নেয়া হয়েছে। কিন্তু পুরানো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডাকা হয়নি। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া কর্মকর্তা চাকরিতে বহাল রাখা কিংবা তাদের পাওনা পরিশোধ করার বিষয়ে কোনো পরিকল্পনাও করা হয়নি।

জানা গেছে, পিয়ন সুইপার ও ঝাড়ুদার বাদে কোম্পানির সর্বনিম্ন পোস্ট জুনিয়র অফিসার এবং সর্বোচ্চ পদ ম্যানেজার পদ নূন্যতম ৬শ কর্মকর্তা চাকরি হারান। তাদের (জুনিয়র অফিসার) নূন্যতম বেতন ১২ হাজার টাকা থেকে (ডিরেক্টর) নূন্যতম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। কারো কারো ২, ৩ এমনকি ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। ফলে এসব কর্মকর্তার উপর নির্ভর করে চলে হাজার হাজার পরিবারের অবস্থাও সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।

একই কথা বলেছেন ইউনাইটেড এয়ারে বিভিন্ন বিভাগের ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করে আসা একাধিক পরিচালক। তারা নাম না প্রকাশের শর্তে  বলেন, এমডিসহ কতিপয় ব্যক্তির কারণে কোম্পানিটি ডুবছে। আমাদের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়েছে। বেশ কয়েক মাস বেকারও থাকতে হয়েছে। কিন্তু মান-সম্মানের ভয়ে কাউকে বলতে পারিনি। তবে বর্তমানে তারা একই সেক্টরের কোম্পানিতে বড় দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, বাংলাদেশসহ মোট ১২টি দেশে ইউনাইটেড এয়ার ফ্লাইট চালু করেছে। দেশগুলো হচ্ছে-মায়নমার, ভারত, কাতার, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়য়েশিয়া, নেপাল, ওমান, সৌদি আরব, ইউএই ও লন্ডন। এসব দেশে কোম্পানির নিজস্ব অফিস রয়েছে। সেখান থেকে ইউনাইটেডের ফ্লাইট ব্যবস্থাপনা করা হয়। এখন দেশ ও বিদেশের সব অফিস বন্ধ রয়েছে। সব অফিসের স্টাফদের মধ্য থেকে উত্তরায় প্রধান অফিসে মোট ১৭জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। বাকি অফিসগুলোতে তালা ঝুলছে।

উত্তরা ছাড়াও ঢাকায় ৬টি অফিস, চট্টগ্রামে ৪টি, খুলনা বিভাগ ও যশোর জেলায় ৩টি করে ৬টি, সিলেটে, কক্সবাজার এবং বারিশালে ২টি করে অফিস ছিলো। এ ছাড়াও রাজশাহী, নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর ও কুড়িগ্রামে একটি করে অফিস পরিচালনা করে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফা এবং ৫ মার্চ দ্বিতীয় দফায় অনিবার্য কারণ দেখিয়ে সব ফ্লাইট বাতিল করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এরপরই কোম্পানির সব অফিস বন্ধ করে অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে শর্তসাপেক্ষে ছুটি দেয়া হয়েছে। বন্ধের কারণ হিসেবে এই কোম্পানির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পরিচালন গত ব্যয় বৃদ্ধি ও অব্যস্থাপনাই এর জন্য দায়ী। তবে মালিকপক্ষের পরিচালনা দ্বন্দ্ব দিয়ে প্রথমে শুরু হয়। এরপরে কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার ধারণ নিয়ে তা প্রকাশ পায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী স্বীকার করে বলেন, আকাশে উড়োজাহাজ চালাতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। বর্তমানে কোম্পানিতে সেই পরিমাণ টাকা নেই বলে কোম্পানির ফ্লাইট ও অফিসিয়াল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে এক হাজারের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করতেন। তাদের বেতন কিংবা খরচের টাকা না দিতে পেরে বিনা বেতনে ছুটি দিয়ে দিয়েছি। আশা করছি, চলতি বছরেরই ফ্লাইট চালু করবো। তখন নতুন করে লোক নেয়া হবে। বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া কর্মকর্তাদের বকেয়া পরিশোধের কোনো পরিকল্পা আছে কিনা জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি তিনি।