sampur-suger এইচ কে জনি: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমনও কোম্পানি আছে যার পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৫ কোটি টাকা। অথচ কোম্পানিটির চলতি জুন পর্যন্ত হিসাবে লোকসানে আছে ২৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। মূলধনের চেয়ে লোকসানের পরিমান প্রায় ৫৪ গুন বেশি। আরেকটি প্রতিষ্ঠানের মূলধনের পরিমাণ ৬ কোটি টাকা। অথচ তারও পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ২০৬ কোটি টাকা। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো প্রতিষ্ঠান দুটিই রাষ্ট্রীয় মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। তবুও এদের মোট ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ২২৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- শ্যামপুর সুগার মিল এবং জিলবাংলা সুগার।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জেড ক্যাটাগরির এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করে ক্রেতারা সর্বস্বান্ত হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি। আর বিনিয়োগকারীদের অজ্ঞাতেই এ শেয়ারে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের দায়ভার তাদের ওপর পড়ছে।

তথ্য বিশ্লেষনে দেখা গেছে, ১৯৮৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় জিলবাংলা সুগার। জেড ক্যাটাগরির এ প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ লোকসানের পরিমাণ ২০৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে লোকসান ২৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এ সময়ে প্রতি শেয়ারের বিপরীতে লোকসান ৪০.২৭ টাকা। আর ২০১৫ সালে প্রতি শেয়ারের বিপরীতে লোকসান ছিল ৫৬.৮৯ টাকা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ মূল্য ঋণাত্মক অবস্থানে রয়েছে। ১০ টাকার প্রতি শেয়ারের বিপরীতে সম্পদ লোকসান ৩৩৩ টাকা। এছাড়া ৬ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ১২৫ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় শ্যামপুর সুগার মিল। মাত্র ৫ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান লোকসানের পরিমাণ ২৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে লোকসানের পরিমাণ ২৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এ সময়ে প্রতি শেয়ারের বিপরীতে লোকসান ৫১.৭২ টাকা। ২০১৫ সালে প্রতি শেয়ারের বিপরীতে লোকসান ছিল ৬৭.৫২ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের সর্বশেষ মূল্য ২০.৮০ টাকা।

এছাড়া ১০ টাকার প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে সম্পদ মূল্য লোকসান ৫২৯ টাকা। আর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের সর্বশেষ মূল্য ১৩.৬০ টাকা। অর্থাৎ যে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কিনছেন, তার কাঁধে ৫২৯ টাকার দায় চাপছে। বর্তমানে শ্যামপুর সুগারের ব্যাংক ঋণ ১০২ কোটি টাকা।

চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের আওতাধীন এ কোম্পানি দুটি ১০ বছরেও বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। অথচ এরপরও প্রতিষ্ঠান দুটির শেয়ারের দাম বাড়ছেই। গত ৬ মাসে এ দাম বাড়ার হার ১৭০ শতাংশ। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের দাম কেন বাড়ছে তার কোনো সন্তোষজনক জবাব মেলেনি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, বিএসইসির নজরদারির অভাবেই মূলত এই কোম্পাগুলো এখনো টিকে আছে। এরা কঠোর হলে এই কোম্পানি এতদিনে তালিকাচ্যুত হয়ে যেতো। তিনি বলেন, আমরা দাবি করছি অতি সত্বর যেনো বিএসইসি বাজার ধংসকারী এই লোকসানি কোম্পানিগুলোকে বাজার থেকে বিতাড়নের ব্যবস্থা করে। কারন তা না হলে এই কোম্পানির শেয়ার কিনে সাধারন বিনিয়োগকারীরা আবারো সর্বশান্ত হবে। ইতিমধ্যে সেই পরিবেশই তৈরী করেছে কুচক্রী মহল।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ সচিব আবদুর রাজ্জাক বলেন, পরিশোধিত মূলধনের ৪৪ গুন লোকসান নিয়ে কোম্পানিগুলো কিভাবে মূল মার্কেটে লেনদেন করছেন তা বোধগম্য নয়। নিয়মানুযায়ী এসব কোম্পানিকে ওটিসি মার্কেটে হস্তান্তরের কথা। এমতাবস্থায় দায়িত্বশীলদের ভূমিকা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, নীতি-নির্ধারকদের এ ধরনের উদাসীনতার কারণে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীরা আস্থা রাখতে পারছেন না। তাই বিনিয়োগকারীদের আস্থার্জনে খুব দ্রুত ওটিসিতে স্থানান্তরের পাশাপাশি এই কোম্পানিগুলোর লোকসানের মূল কারণ উদ্ঘাটন করা জরুরি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট ভেঙ্গে দেয়া উচিত। তা না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যে উদ্দেশ্যে সরকারি কোম্পানি গঠন করা হয়েছিল, তা সফল হয়নি। কারণ লোকসান বৃদ্ধির অর্থ হল বাজার প্রতিযোগিতায় বেসরকারি কোম্পানির তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে এসব কোম্পানি। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ বাড়ছে। অর্থাৎ মুদ্রা এবং পুঁজি উভয় বাজারে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ড. আবু আহমেদ বলেন, কেন এসব কোম্পানি বছরের পর বছর লোকসানে রয়েছে তা খতিয়ে দেখা উচিত। প্রয়োজনে যদি কোম্পানির ঘুরে দাড়ানোর সম্ভাবনা থাকে তবে কোন বিশেষ ফান্ড গঠন করে পরিস্থিতির পরিবর্তন করা যেতে পারে। সুত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ