submarine-cablesশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবেলস লিমিটেডের শেয়ারের দুই ইস্যুতে লেনদেন বাড়ছে। বর্তমান এ কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বাড়ছে।রাষ্ট্রাত্তর কোম্পানির ফলে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক একটু বেশি। সুত্রে জানায়, পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় স্থাপিত দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে চালু হতে যাচ্ছে।

সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনটি চালু হলে ইন্টারনেটে তাৎক্ষণিকভাবে ২০০ জিবিপিএস সুবিধা পাওয়া যাবে, যা ১৫০০ জিবিপিএস পর্যন্ত সম্প্রসারণযোগ্য। ২০১৩ সালের শেষদিকে ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় । নতুন এ সাবমেরিন কেবলটি চালু হলে দেশীয় টেলিকম কোম্পানিগুলোকে বিদেশ থেকে ব্যান্ডউইডথ কিনতে হবে না। নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকবে।

কক্সবাজারের স্থাপিত প্রথম সাবমেরিন কেবল ওয়ানের তুলনায় প্রায় আট গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। এটি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি ব্যান্ডউইডথ রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ বড় অংকের অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাবে। বাড়বে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) মুনাফা।

এসইএ-এমই-ডব্লিউই ৫ প্রকল্প পরিচালক পারভেজ মনন আশরাফ জানান, এ বছরের শেষ দিকে পরীক্ষামূলকভাবে চালুর পর জানুয়ারিতে ল্যান্ডিং স্টেশনের সঙ্গে এর সংযোগ স্থাপন করবে বিএসসিসিএল। বীচ ম্যানহোল থেকে ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত ফাইবার অপটিক কেবল স্থাপন করা হয়েছে।

১০ একর জমিতে সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনটির অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। সমুদ্র থেকে কেবল সংযোগের কাজ প্রায় সম্পন্ন করেছে বিএসসিসিএল।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, সাগরের নিচ দিয়ে ফ্রান্স থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা ও মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত ২০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ কেবল স্থাপন করা হয়েছে। ইউরোপ থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে আসা সঞ্চালন লাইন সংযুক্তির জন্য ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপনের কাজও শেষ পর্যায়ে।

এছাড়া ফাংশনাল বিল্ডিংয়ের মূল স্থাপনার কাজ সম্পন্ন হয়েছে । ড্রেনেজসহ অবকাঠামোগত অন্যান্য কর্মকাণ্ড শেষের দিকে রয়েছে। ডরমিটরি, নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যারাক হাউস, রেস্ট হাউস নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এখন চলছে ভবনের সৌন্দর্য বর্ধন ও স্টাফ কোয়ার্টারের কাজ।

সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য স্থাপিত নিজস্ব ইলেকট্রিক্যাল কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটিতে সরকার ১৬৬ কোটি টাকা ও বিএসসিসিএল ১৪২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। প্রকল্পের বাকি টাকার ঋণসহায়তা দিয়েছে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি)।

উল্লেখ, দেশে একমাত্র সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করায় বর্তমানে লাইন কাটা পড়লে বিএসসিসিএলের হাতে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। কিন্তু দ্বিতীয় সাবমেরিন ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে বিশ্বের তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে বাংলাদেশের সাবমেরিন যোগাযোগ ব্যবস্থার বহুমুখীকরণ করা সম্ভব হবে। ল্যান্ডিং স্টেশনের সংযুক্তির মাধ্যমে ডাটার পরিধি বৃদ্ধি এবং দেশের তথ্য প্রযুক্তির চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর সরবরাহ বৃদ্ধি করা হবে এবং সরকার এ খাতে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের সুযোগ পাবে

এদিকে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি (বিএসসিসিএল) থেকে ব্যান্ডউইডথ নিতে আগ্রহী ভুটান। এ লক্ষ্যে দেশটির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পৌঁছেছে। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাতদিনের সফরে ব্যান্ডউইডথ নেয়ার বিষয়ে কারিগরি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পাশাপাশি উভয় দেশের মধ্যে টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়নের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করবে ভুটান সরকারের প্রতিনিধি দলটি।

বিএসসিসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের ভুটান সফরের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সফরে আসে ভুটান সরকারের প্রতিনিধি দল। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাতের বিভিন্ন দিক ঘুরে দেখবেন। প্রতিনিধি দলটি এরই মধ্যে বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি), ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সভা শেষ করেছে।

এসব বৈঠকে টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নয়নে উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয় চিহ্নিত করার পাশাপাশি বিএসসিসিএল থেকে আইপি ব্যান্ডউইডথ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইসহ বিস্তারিত কারিগরি সিদ্ধান্ত নিতে বিএসসিসিএলের বিভিন্ন পপ ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিনিধি দলটি।

এ প্রসঙ্গে বিএসসিসিলের কোম্পানি সচিব আব্দুস সালাম বলেন, বিএসসিসিএল এরই মধ্যে ভারতে ব্যান্ডউইডথ রফতানি করছে। ভুটান সরকারও বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইডথ নিতে আগ্রহী। বাংলাদেশ সফরে দেশটির সরকারি প্রতিনিধি দলটি এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাছাই করবে। পরবর্তীতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হবে।

প্রসঙ্গত, এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ কনসোর্টিয়ামের আওতায় কক্সবাজারে প্রথম সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ২০০ জিবিপিএস ব্র্যান্ড সরবরাহ করছে বিএসসিসিএল। এর মাধ্যমে দেশের আইসিটি ও টেলিকম কোম্পানিগুলোর চাহিদার বড় অংশ পূরণ করছে কোম্পানিটি।

দেশে ৩০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ চাহিদার মধ্যে ১২০ জিবিপিএস সরবরাহের পর ব্যান্ডউইথের বড় অংশই উদ্বৃত্ত থাকে কোম্পানিটির। ফলে অতিরিক্ত ব্যান্ডউইডথ মজুদ থাকায় ভারতের রাষ্ট্রয়ত্ত কোম্পানি ভারত সঞ্চার নিগাম লিমিটেডকে (বিএসএনএল) ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করছে বিএসসিসিএল।

চলতি বছরের শুরুতে রফতানি শুরু হওয়া এ ব্যান্ডউইডথ থেকে বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় আসবে বিএসসিসিএলের। এর পরও বছর শেষে উল্লেখযোগ্য ব্যান্ডউইডথ উদ্বৃত্ত থাকবে বিএসসিসিএলের, যা থেকে ভুটানে রফতানির সুযোগ রয়েছে।

২০১৪-১৫ হিসাব বছরে ব্যান্ডউইডথ বিক্রিসহ এর মোট টার্নওভার দাঁড়িয়েছে ৫০ কোটি ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। দেশে ব্র্যান্ডউইডথের দাম কমে যাওয়া আগের বছরের তুলনায় এ টার্নওভার প্রায় ২৮ শতাংশ কমেছে।

২০১৫-১৬ হিসাব বছরে প্রকাশিত তিন প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫ সালের জুলাই থেকে চলতি মার্চ পর্যন্ত এ কোম্পানির টার্নওভার ৪০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। কুয়াকাটায় স্থাপিত দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল জানুয়ারি থেকে চালু হয়েছে। এর ফলে কোম্পানিতে আরো দেড় হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইথড যোগ হবে।