islami bankশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সব শেয়ার ছেড়ে দিয়েছে ইউনাইটেড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হযরত শাহজালাল (রা.) ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি লিমিটেড। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে ব্যাংকটির ৩ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৫টি শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ব্যাংকের পর্ষদ থেকেও সরে গেছে শাহজালাল  (রা.) ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গ্র্যান্ড বিজনেস নামের একটি কোম্পানি এসব শেয়ার কিনেছে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ জুলাই শেয়ার বিক্রির পাশাপাশি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে তাদের মনোনীত পরিচালককে প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেয় শাহজালাল (রা.) ইন্ডাস্ট্রিয়াল। ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদে তা গৃহীত হয়। এর পর গতকাল ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ৩ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৫টি শেয়ার কেনাবেচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। প্রতিটি শেয়ার ৩২ টাকা দরে হাতবদল হয়।

জানা গেছে, চলতি বছরেই ইসলামী ব্যাংকের বড় অঙ্কের শেয়ার কিনে হযরত শাহজালাল (রা.) ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি লিমিটেড। ব্যাংকের সর্বশেষ বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) কোম্পানিটির পক্ষে ইসলামী ব্যাংকের মনোনীত পরিচালক নির্বাচিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এএনএম সাইদুল হক খান।

এ প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুল মান্নান বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান বা বিনিয়োগকারীর শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় সাধারণ ঘটনা। গত তিন মাসে ইসলামী ব্যাংকে মোট ১১ জন পরিচালক যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে কেউ সম্পূর্ণ শেয়ার বিক্রি করে চলে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনসাপেক্ষে নতুন কেউ এর মালিক হবে। তাদের প্রতিনিধিও পর্ষদে আসতে পারে। ব্যাংকের ব্যবসার সঙ্গে এর তেমন সম্পর্ক নেই।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রতিষ্ঠাকালীন বিদেশী উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করে দেয়। শেয়ার বিক্রি করে দেয়া প্রসঙ্গে ইউনাইটেড গ্রুপের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা  বলেন, ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ছেড়ে দেয়ার পেছনে বিশেষ কোনো কারণ নেই। এটি কোম্পানির স্বাভাবিক বিনিয়োগ কার্যক্রমেরই অংশ।

ডিএসইর সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ার সংখ্যা ১৬০ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৬৬৮। এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৬৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ৫ দশমিক ৮৪, বিদেশী ৮ দশমিক ৭৯ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে বাকি ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ার।

চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) ইসলামী ব্যাংকের কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৩৪৬ কোটি ৫৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ১৫ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ২ টাকা ১১ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৫ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় ইসলামী ব্যাংক। বছর শেষে ইপিএস দাঁড়ায় ১ টাকা ৯৬ পয়সা। ২০১৪ সালের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডাররা।

তখন ইপিএস ছিল ২ টাকা ৪৬ পয়সা। আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২ সালের পর থেকেই ইসলামী ব্যাংকের নিট মুনাফা কমছে। ২০১২ সালে ব্যাংকটির কর-পরবর্তী মুনাফা ছিল ৫৬১ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ২০১৫ সালে যা ৩১৫ কোটির ঘরে নেমে আসে। ঋণমানে ব্যাংকটির অবস্থান দীর্ঘমেয়াদে ‘ডাবল এ প্লাস’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘এসটি-১’।

ইসলামী ধারার প্রথম বাংলাদেশী ব্যাংকটি ১৯৮৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২ হাজার কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে বর্তমানে ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। রিজার্ভে আছে ৩ হাজার ১১৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা।