jakirশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা:  গুলশান হত্যকাণ্ডের পর হঠাৎ বিপুল আলোচনায় উঠে এসেছে আলোচিত-সমালোচিত ইসলামী চিন্তাবিদ ও ধর্মপ্রচারক ডা. জাকির নায়েক। বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে রিপোর্ট যেন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। পিস টিভির বক্তৃতার সুবাদে বাংলাদেশের মানুষের কাছে জাকির নায়েক খুবই পরিচিত একটা নাম। এখানে তার ভক্তের সংখ্যাও কম নয়।

তবে ডা. জাকির নায়েক সম্পর্কিত অনেক তথ্যই হয়তো অনেকের জানা নেই। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ঘেঁটে ও বিশ্লেষণ করে এ লেখাটি তৈরি করা হয়েছে। তবে মুশকিল হচ্ছে, বেশির ভাগই হচ্ছে ভারতীয় সংবাদপত্র। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মুসলিম সুন্নি সম্প্রদায়ের। তাদের একটা অংশ জাকির নায়েকের অনুরাগী হলেও তারা হয়তো জানেনই না ডা. নায়েক হচ্ছেন ওয়াহাবী সম্প্রদায়ের একজন মানুষ।

০১. ডা. জাকির নায়েক তার কর্মজীবনের শুরুতে ছিলেন একজন চিকিৎসক। মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তিনি এমবিবিএস পাশ করেন। পরবর্তীতে বেলজিয়ামেও কিছুদিন পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে তিনি ধীরে ধীরে তিনি একজন ধর্মপ্রচারকে পরিণত হন। জাকির নায়েকের বক্তৃতা শুনে কয়েক হাজার অন্য ধর্মের মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে।

০২. বাংলাদেশের বেশিরভাগ মুসলিম সুন্নি সম্প্রদায়ের। তাদের একটা অংশ জাকির নায়েকের অনুরাগী হলেও তারা হয়তো জানেনই না ডা. নায়েক হচ্ছেন ওয়াহাবী সম্প্রদায়ের একজন মানুষ। এ কারণে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের সুন্নি ও শিয়া মতালম্বীরা তাকে পছন্দ করে না।

তিন বছর আগে মুম্বাইয়ের সুন্নি ও শিয়া মতবাদের ওলামারা বোম্বের পুলিশ কমিশনারের কাছে ডা. জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে নালিশ করেন। তাদের অভিযোগ, তিনি (জাকির নায়েক) ইসলাম ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।

ওয়াহাবি হওয়ার কারণে তিনি সৌদি রাজ পরিবারের বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকেন। কারণ ওই পরিবারও ওয়াহাবি মতাবলম্বী। সৌদি সরকার ইসলাম প্রচারে জাকির নায়েকের ‘অবদানের’ জন্য তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক দিয়েছে।

বলা হয়ে থাকে, ইহুদী রাষ্ট্র ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যের ভয়ঙ্কর জঙ্গীগোষ্ঠি আইএস সৃষ্টি করে থাকলেও এর পেছনে নিরব সম্মতি ও আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা আছে সৌদি রাজ পরিবারের। ধর্ম সংক্রান্ত অনেক ইস্যুতে জাকির নায়েকের ব্যাখ্যা ও আইএসের অবস্থানের মধ্যে বেশ সামঞ্জস্য আছে।

যেমন-জাকির নায়েক বাড়ির কাজে মেয়ের (তার ভাষায় দাসি) সঙ্গে যৌন সম্পর্কে ইসলাম সম্মত মনে করেন। অন্যদিকে আইএসও এটি বিশ্বাস ও পরিপালন করে।  আইএস তাদের অধিকৃত অনেক অঞ্চল থেকে কিশোরী-যুবতী ও নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে যৌন দাসী হিসেবে ব্যবহার করছে। আবার এদেরকে যৌনদাসী হিসেবে অন্যদের কাছে বিক্রিও করছে। জাকির নায়েকের বক্তৃতা শুনে কয়েক হাজার অন্য ধর্মের মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে

০৩. জাকির নায়েক ভারতের মুম্বাই শহরে বাস করেন। সেখানে তার ইসলামিক রিচার্স সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। বাংলাদেশের মানুষদের কাছে পরিচিত পিস টিভির অফিসও সেখানে।

বর্তমানে পিস টিভির কোনো লাইসেন্স নেই। ২০১২ সালে সরকার এর লাইসেন্স বাতিল করে। এর পর থেকে তিনি ক্যাবল অপারেটরদের সহায়তায় মুম্বাইয়ে টিভির সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া তার বক্তৃতা ভিডিও করে দুবাই থেকে তা আপলিংকে দেওয়া হয়।

পিস টিভিতে তেমন কোনো বিজ্ঞাপন চলে না। অথচ জাকির নায়েকের বক্তব্য বিভিন্ন ভাষায় ডাবিং করে প্রচার করা হয়। এই ব্যয়বহুল কার্যক্রমও মূলত সৌদির গোপন অর্থায়নে হয়ে থাকে বলে মনে করা হয়।  সব মুসলমানেরই সন্ত্রাসী হওয়া উচিত-এমন বক্তব্য দিয়ে সবচেয়ে বিতর্কিত ও সমালোচিত হন

০৪. সব মুসলমানেরই সন্ত্রাসী হওয়া উচিত-এমন বক্তব্য দিয়ে তিনি সবচেয়ে বিতর্কিত ও সমালোচিত হন। এর ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেন, যখন একজন ডাকাত পুলিশকে দেখে তখন সে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়। তাই একজন ডাকাতের কাছে পুলিশ হচ্ছে একজন সন্ত্রাসী। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত ডাকাতদের কাছে সন্ত্রাসী হওয়া

০৫. আলকায়েদার সাবেক প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে সন্ত্রাসী বলতে অস্বীকার করেও তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। এ বিসয়ে তিনি বলেন, অনেক মুসলমান মনে করেন ওসামা বিন লাদেন সঠিক, কেউ বলেন ভুল। আমি দুটিই প্রত্যাখ্যান করি। ..যদি আমার মতামত জানতে চান তাহলে আমি স্পষ্ট করে বলল, যদি তিনি (লাদেন) যদি তিনি সত্যের পক্ষে এবং ইসলামের শত্রুদের বিপক্ষে লড়াই করে থাকেন তাহলে আমি তার সঙ্গে আছি। কিন্তু আমি জানি না তিনি কী করছেন। আমি তার সংস্পর্শে নেই। আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনিও না। আমি শুধু  সংবাদপত্রে এ সম্পর্কে রিপোর্ট পড়ি।

০৬. উইম্বল্ডনে ভারতের হয়ে খেলতে পারা একমাত্র টেনিস খেলোয়াড় সানিয়া মির্জার পোশাক নিয়েও ডা. জাকির নায়েক খুবই মুখর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, সানিয়ার উচিত একটু বড়সড় ও ঢিলেঢালা পোশাক পড়ে খেলতে নামা।

০৭. যুক্তরাজ্য, কানাডা ও মালয়েশিয়াসহ বেশ কিছু দেশে জাকির নায়েকের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আছে।

০৮. বউ পেটানো সমর্থন করেন ডা. জাকির নায়েক। এ বিষয়ে তার বক্তব্য মুসলিম বিশ্বে বউকে মারধোর করা সব সময় দোষণীয় কিছু নয়।

০৯. তার বক্তৃতায় জঙ্গিরা উদ্বুদ্ধ হয় এমন অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেন তিনি। এ বিষয়ে তার বক্তব্য- অনেকে আমার বক্তৃতা শুনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। কিন্তু এরপর আবার অন্য অনেকের বক্তৃতা শুনতে যায়। তাদের কারো কারো বক্তৃতা শুনে তারা জঙ্গী হয়ে থাকতে পারেন। এ দায় তার নয়।

১০. গুলশান হত্যাকাণ্ডের অন্যতম জঙ্গি রোহান ইমতিয়াজ তার ফেসবুক ওয়ালে জাকির নায়েকের একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি শেয়ার করেছিল। এই উদ্ধৃতিটি এমন-প্রত্যেক মুসলিমের উচিত সন্ত্রাসী হওয়া। এই সূত্র ধরে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, রোহান তার (জাকির নায়েক) বক্তব্যে সন্ত্রাসে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তাই তার বক্তব্য ঘৃণা ছড়ায় কী-না, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে উস্কে দেয় কী-না তা পর্যালোচনা করে দেখা উচিত।

তবে জাকির নায়েক কী ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচারের শিকার, না-কি সত্যিই সত্যিই তিনি একজন বিতর্কিত মানুষ সে সম্পর্কে আরও খোঁজখবর নেওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে

বর্তমানে জাকির নায়েকের ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে পাহারা বসিয়েছে মুম্বাই পুলিশ। তিনি দেশে ফিরলেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থানরত জাকির নায়েক আগামী ১১ জুলাই দেশে ফিরবেন।

এর পর পরই তিনি সামগ্রিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন বলে জানা গেছে। তবে জাকির নায়েক কী ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচারের শিকার, না-কি সত্যিই সত্যিই তিনি একজন বিতর্কিত মানুষ সে সম্পর্কে আরও খোঁজখবর নেওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। সুত্র: অর্থসুচক