hasina lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কোনো ষড়যন্ত্রই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে রুখতে পারবে না। আজ শনিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন। সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ সব টেলিভিশন ও রেডিওতে সম্প্রচার করা হয়।

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, গতরাতে কতিপয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে হামলা চালায়। সেখান অবস্থানরত নিরস্ত্র, বেসামরিক নাগরিকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং হত্যাকা- শুরু করে।

শেখ হাসিনা বলেন, পবিত্র রমজান মাস ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যখন এশা ও তারাবির নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিন তখন এই হামলা ধর্ম ও মানবিকতাকে অবমাননা করেছে। এই বর্বর ও কাপুরুষাচিত আক্রমণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে নজিরবিহীন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হামলার সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার সরকার দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেয়। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত সেখান পৌঁছায় এবং উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরবর্তী সময় সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর কমান্ডারারা অভিযানে অংশগ্রহণ করে আজ সকালে জিম্মিদের মুক্ত করে আনে। ছয়জন হামলাকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। তিনজন বিদেশিসহ ১৩ জন জিম্মিকে আমরা অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতেক সমর্থ হই।

সরকারপ্রধান বলেন, এ অভিযান পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য বাহিনীর যেসব সদস্য অংশ নিয়েছিল আমি তাঁদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশ্ব সম্প্রদায়ের নেতারা যারা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, এই নৃশংস হামলায় দুজন পুলিশ সদস্য নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমি নিহত পুলিশ সদস্য এবং সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাছি। আহতরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করুন- মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে এই প্রার্থনা করছি। নিহতদের স্মরণ দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করছি।

দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যখন একটি আত্ম-মর্যাদাশীল এবং আত্ম-নির্ভরশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে¦র বুকে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তখন দেশি-বিদেশি একটি চক্র বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।

অস্ত্রের মুখে নিরীহ সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এরা দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে চায়। গণতান্ত্রিক পথে মানুষের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়ে এরা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। কোমলমতি যুবক-কিশোদের ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে মানুষ হত্যা করছে।

বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ ষড়যন্ত্রকারীদের কৌশল বাস্তবায়িত হতে দেবে না। দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে যেকোনো মূল্যে আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত প্রতিহত করবো। নিজেদের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদশর সার্বভৌমত্ব আমরা যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

তিনি বলেন, মুষ্টিমেয় বিপথগামী সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমি  জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সন্ত্রাসবিরাধী কমিটি, কম্যুনিটি পুলিশ এবং সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে সন্ত্রাস মোকাবেলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, যেসব কোমলমতি যুবক-কিশোর বিপথে পরিচালিত হচ্ছে, যারা তাদের মদদ দিচ্ছে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- মানুষকে হত্যা করে কী অর্জন করতে চান? ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামের নামে মানুষ হত্যা বন্ধ করুন।

অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার সন্তানকে সুশিক্ষা দিন। তারা যাতে বিপথে না যায় সেদিক নজর রাখুন। বিপথগামীদের প্রতি আহ্বান আপনারা সঠিক পথে ফিরে আসুন। ইসলামের মর্যাদা সমুন্নত রাখুন।