bexjitশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ব্রেক্সিটের প্রভাব বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে পড়বে কি পড়বে না এ নিয়ে আলোচনার অবশেষে শেষ হলে। আজ লেনদেনের শুরুতে বিনিয়োগকারীরা এ নিয়ে দু:চিন্তা থাকলেও দিনশেষে বাজার সামান্য সুচকের কারেকশন হলেও দু:চিন্তা কাটছে বিনিয়োগকারীদের।

তবে ব্রিক্সিটের প্রভাবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে কোন প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেছেন বিশ্লেষকরা। তারপর একটি চক্র এনিয়ে নানা গুজব ছড়িয়েছে। আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনে বিগত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। পাশাপাশি সার্বিক লেনদেনও ছিল নিম্নমুখী অবস্থানে। এদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ গেল এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড গড়লেও সূচক ছিল নিম্নমুখী।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগের সর্বশেষ সপ্তাহের লেনদেন চলছে দেশের উভয় পুঁজিবাজারে। কিন্তু উভয় পুঁজিবাজারের লেনদেনের অসামজস্যতা ও ডিএসই’র লেনদেনে আবারো ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসাকে কারসাজি চক্রের সক্রিয়তার জানান বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, বেক্সিটের নেতিবাচক প্রভাব দেখিয়ে ফায়দা সংগ্রহের চেষ্ঠা করছে কারসাজি চক্র। যার প্রতিফলন দেখা গেছে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন।

ব্রেক্সিটের (ব্রিটেন এক্সিট) কারনে বাংলাদেশর পুঁজিবাজার কোন ক্ষতির হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন। কারন হিসেবে তারা বলেছেন, বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য নয়, দেশটি কমনওয়েলথভূক্ত দেশ। কাজেই ব্রেক্সিটের কারনে বরং আমরা অনেক দিক দিয়েই লাভবান হবো।

ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) হতে যুক্তরাজ্যের সদস্যপদ প্রত্যাহারের গণরায় বা ‘বেক্সিট’-এর ধাক্কা জিএসপি সুবিধার আওতায় বাংলাদেশের পণ্য রফতানি এবং বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহের ধারাকে প্রভাবিত করতে পারে এমন আশঙ্কা সকাল থেকে থাকলেও বিনিয়োগকারীরা অবশেষে এর ভুল বুঝতে পারছেন।

তারা বলেন, ২০০৭ ও ২০০৮ সাল থেকে শুরু করে তৎপরবর্তী বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী যে মন্দা গেছে সেই ঝড়েও বাংলাদেশের পুঁজি বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। কাজেই একটি দেশের সাথে একটি সংস্থার টানাপোড়নের মধ্যে বাংলাদেশের  পুঁজিবাজারের কোনো উপাদানই জড়িত নেই।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তাদের যেমন কোনো কোম্পানি নেই তেমনি তাদের বাজারেও আমাদের কোনো কোম্পানি নেই। তাই ব্রেক্সিট কোনোভাবেই আমাদের বাজারকে হ্যাম্পার করবেনা। তবে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, পাউন্ডের দর কমে যাওয়ায় হয়তো রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু আয় কমে যেতে পারে। এছাড়া বড় কোনো প্রভাব আমাদের অর্খনীতির ওপরও পড়বেনা বলে তারা জানান।

এ বিষয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকমকে বলেন, ব্রেক্সিটের সাথে আমাদের দেশের পুঁজিবাজারের কোন সম্পর্ক নেই।  তাই ব্রেক্সিটের কারণে পুঁজিবাজারে কোনো ইমপ্যাক্ট (প্রভাব) পড়বে না। কারণ তাদের বাজার আলাদা আমাদের বাজারও আলাদা। বিদেশি বিনিয়োগকারী থাকলেও ওইভাবে নেই।

তিনি বলেন, যদি পাউন্ডের দর পতন হয় তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ত একটু ক্ষতি হতে পারে। তাও বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি কাটিয়ে উঠতে পারবে। ক্ষতি হলে হতে পারে জাপান, ফ্রান্স, ইতালী, জার্মানী; এদের আমাদের নয়। বরং এর ফলে আমাদের উপকারও হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ব্রিটেন আমাদের ব্যবসায়িক পার্টনার। আমাদের হারানোর কিছু নেই। আর আমাদের পোশাক শিল্পের জন্য জিএসপি সুবিধা ব্রিটেন যেহেতু আগেও দিত, এখনও দিবে বলে আমি আশা করি।

হয়ত আলাদাভাবে নতুন করে তাদের সাথে আমাদের সব বিষয়ে যোগাযোগ করতে হতে পারে। এছাড়া ব্রিটেন কমনওয়েলথের প্রধান। আর আমরা তার সদস্য বরং আমাদের মাইগ্রেশনের সুবিধা বাড়বে। আমরা আশা করি আমাদের ভাল হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অন্যান্য দেশের পুঁজিবাজারের চেয়ে একটু আলাদা। এছাড়া ব্রেক্সিটের কারণে সামগ্রিক অর্থনীতিতে সাময়িক প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু পুঁজিবাজারে এর কোনো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা আপাতত দেখছি না। তার কারণ হলো আমাদের পুঁজিবাজার বাহিরের সাথে সম্পৃক্ত না। বিদেশি বিনিয়োগ যা আছে তাও এক বারে বম। আবার আমাদের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি বাহিরের কোনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়।

তিনি বলেন, ব্রিটেনে রপ্তানির উপর শুল্ক ছাড় পাওয়া যেতো সেটা হয়ত ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে ইউরোপীয় আইনের আর্টিকেল ৫০ অনুযায়ী এটা বাস্তবায়ন হতে আরো দুই বছর সময় লাগবে। দুই বছর পর বোঝা যাবে কি কি বিষয়ে ক্ষতি আসতে পারে। তবে এটি নিশ্চিত এর সাথে শেয়ার বাজারের কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা নেই।