busশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: মাদারীপুর সদরে সেতুর রেলিং ভেঙে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে নয়জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৪৫ জন যাত্রী। এদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।  আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে বাসটি সেতুর রেলিং ভেঙে খালে পড়ে যায়। বাসটি সুগন্ধা পরিবহনের। প্রায় ৬৫ জন যাত্রী নিয়ে বাসটি ঢাকা থেকে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা সদরে যাচ্ছিল।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন ঝালকাঠির রাজাপুর গ্রামের মিজানুর রহমান (৪০) ও সুজন ফকির (২৮), বরিশালের উজিরপুরের নারকোলি গ্রামের হীরালাল বাড়ৈ (৬০) ও নতুনবাজার এলাকার আলী হোসেন (৫২),

ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার টিটু মিয়া (৩৫) ও ঝালকাঠীর তারাবোলিয়া গ্রামের সুফিয়া বেগম। এঁদের মধ্যে মিজানুর বাসের চালক, আলী হোসেন বাসের সুপারভাইজার আর টিটু বাসচালকের সহকারী ছিলেন। বাকি তিনজনের মধ্যে দুজন নারী।

দুর্ঘটনার পরপরই ওই সড়কে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন বাসের যাত্রীরা নেমে উদ্ধারকাজে সহায়তা করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়। রাত আটটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাসটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

আহত কয়েকজন যাত্রী জানান, ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা সদরে যাওয়ার জন্য সুগন্ধা পরিবহনের বাসটি সকাল সাড়ে সাতটায় রওনা হয়। বাসটি মাদারীপুরের টেকেরহাট স্ট্যান্ডে এসে আরও কিছু যাত্রী ওঠায়। বেলা আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার সমাদ্দার সেতুতে ওঠার মুখে বাসের সামনের চাকা ফেটে যায়। তখন বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর রেলিং ভেঙে খালে পড়ে যায়।

তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় বাসিন্দারা যাত্রীদের উদ্ধার করা শুরু করেন। পরে মাদারীপুর সদর থানা-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজে অংশ নেন। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর হাসপাতালে নেওয়ার পথে চারজন মারা যান।

আহত বাসযাত্রী মেহেদী হাসান চিকিৎসা নিচ্ছেন মাদারীপুর সদর হাসপাতালে। তিনি বলেন, বাসটিতে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। অনেক দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাসটি সেতুতে ওঠার সময় হঠাৎ বিকট শব্দ হয়ে খালে পড়ে যায়।

স্থানীয় লোকজন জানালা ভেঙে যাত্রীদের উদ্ধার করেন। নিহত ব্যক্তিদের লাশ রাখা ছিল মাদারীপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশে। সেখানে শুধু হীরালাল বাড়ৈয়ের এক স্বজনকে পাওয়া যায়। লাশের পাশে বসে কাঁদছিলেন তার ভাইয়ের স্ত্রী বকুল রানি।

তিনি বলেন, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবারি এলাকায় কুম্ভ মেলায় অংশ নিয়ে হীরালাল ও তার স্ত্রী ঊর্মিলা বাড়ৈ বরিশালে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। এই বাসে উঠতে না পেরে তিনি (বকুল) ও তার স্বামী পেছনের বাসে ওঠেন। দুর্ঘটনায় ঊর্মিলা বাড়ৈ আহত হলে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শশাঙ্ক কুমার ঘোষ বলেন, দুর্ঘটনায় আহত ৩৪ যাত্রীকে এখানে আনা হয়েছিল। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১৫ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া আরও ১০-১১ জন যাত্রীকে মাদারীপুরের রাজৈর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরিশাল শের-ই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) সরোয়ার হোসেন বলেন, নিহত ছয়জনের পরিচয় মিলেছে। এখনো সবার স্বজনেরা হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেননি। যাঁদের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে, তাঁদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।