ctg ronawiশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু। শুক্রবার দুপুর ১২টায় ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-উত্তরপূর্বে এগিয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটরা দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বুলেটিনে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় এই সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছিল।

উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোও সাত নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে বলে বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় (১৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৪.২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এই সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রামের মতো এই সমুদ্রবন্দরকেও গতকাল চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছিল।  কক্সবাজার ও এর আশপাশের দ্বীপ ও চরগুলোও ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

দুপুর ১২টায় রোয়ানু মংলা সমুদ্রবন্দর ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে যথাক্রমে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং ৮১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এ দুই বন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলো ও সেসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করার সময় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুরে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। একইসঙ্গে ঘণ্টায় ৬২-৬৮ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সক মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে।

ঘূণিঝড়ের জন্য নিরাপদ ব্যবস্থা:

১. বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের আগেই ঘূণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো উচিৎ

২. প্রয়োজনে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার বিকল্প পথের সন্ধান করা উচিৎ

৩. ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে যাওয়ার সময় টর্চ লাইট, দেয়াশলাই, মোমবাতি, শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে নেয়া উচিৎ।

৪. ঘূর্ণিঝড়ে সম্পূর্ণরুপে অতিক্রম না করা পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করা উচিৎ নয়

৫. ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি ও গণমাধ্যমে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সতর্ক থাকা উচিৎ

৬. ঘন ঘন টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারিত ঘূর্ণিঝড়েরর বার্তা সম্পর্কে অবহিত থাকা উচিৎ

ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণিবিন্যাস:

কোনো ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটারের বেশি হয়, তবে সেই ঘূর্ণিঝড়ের একটি নাম দেয়া হয়। আর বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগের ভিত্তিতে করা হয় ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণিবিন্যাস। বাতাসের সর্বোচ্চ গতি যদি ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হয় তবে তাকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়।

বাতাসের সর্বোচ্চ গতি যদি ঘণ্টায় ১১৮ কিলোমিটার থেকে ২১৯ কিলোমিটারের মধ্যে হয় তবে তাকে হ্যারিকেনের গতিসম্পন্ন তীব্র ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। বাতাসের সর্বোচ্চ গতি যদি ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটারের মধ্যে হয় তাকে তাকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। বাতাসের সর্বোচ্চ গতি যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে তবে তাকে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।