mardorশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: এবার রাজধানী ঢাকা দক্ষিণখানে স্বামী-সন্তানের সামনে সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা ও পঞ্চাশোর্ধ এক নারীকে পেটালো স্থানীয় জমির দলালচক্র। এ ঘটনায় পুলিশের সম্পৃক্তার অভিযোগ উঠেছে। গত ১৮ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাটি ঘটলেও বৃহস্পতিবার পুরো ঘটনার তিনটি ভিডিও ক্লিপ বাংলামেইলের হাতে পৌঁছে।

নির্মম এই নির্যাতনের শিকার দুই নারীর নাম মাকসুদা বেগম (৪৮) ও তার মা হালিমা বেগম (৭০)। তারা নিজেদের মালিকানাধীন দক্ষিণখানের ৪৫/১ মধ্য ফায়েদাবাদের বাড়িতে থাকেন। ওই বাড়ির সামনেই এই ঘটনা ঘটে। ভিডিও তিনটি বাসার সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত।

এ ঘটনায় হামলার শিকার নারীরা দক্ষিণখান থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ উল্টো হামলাকারীদের থেকে একটি মামলা নিয়ে এই নারী এবং তার স্বামী ও ছেলেকে গ্রেপ্তার করে। তারা এখন জেলে। তবে নির্যাতিতা মাকসুদা বেগম গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে আদালত থেকে জামিন নিয়ে মুক্তি পেয়েছেন।

৯ মিনিট ২১ সেকেন্ড, ৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ড ও ৪ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ওই তিনটি ভিডিওতে দেখা গেছে, দু’জন নারীকে ৬-৭ জন নারী ও ৮-৯ জন পুরুষ পালাক্রমে পেটাচ্ছে। কখনো লাঠি, কখনো হাতুড়ি, কখনো রড ও কখনো ইট দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে তাদের। আঘাতে ওই নারী মাটিতে লুটে পড়েন। বৃদ্ধা হালিমা বেগমকে এলোপাতারি পেটানো হয়। এক পর্যায়ে তাদের প্রায় বিবস্ত্র করে ফেলা হয়। এসময় এই দুই নারীকে উদ্ধার করতে এসে ছেলে কামরুল হাসান মুন্না (১৮) ও তার বাবা আবুল হোসেন খান (৫৮) হামলার শিকার হোন।

এ সময় ঘটনাস্থালর পাশের একটি ভবনের সঙ্গে থাকা সিসি ক্যামেরায় পুরো ঘটনা ধারণ হচ্ছে বুঝতে  পেরে হামলাকারীরা সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। এরপর চলে আরো অমানুষিক নির্যাতন। চলে দ্বিতীয় ধাপের হামলা। এসময় দালালরা তাদেরকে পাশের একটি ভবনের কক্ষে আটকে পিলারের সঙ্গে বেঁধে হাতুড়ি ও রড দিয়ে পেটায়। সেখানে তারা অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

খবর পেয়ে দক্ষিণখান থানার এসআই শাহজাহানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পরদিন ১৯ এপ্রিল তারা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তাদের মামলা নেয়ার নামে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে হামলাকারীদের খবর দেয়। কিছুক্ষণ পর নির্যাতনের শিকার সবাইকে গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ লুৎফর রহমান। এরপর হামলাকারীদের থেকে একটি অভিযোগ মামলা হিসেবে নিয়ে এই নাটক সাজায় পুলিশ।

জানতে চাইলে দক্ষিণখান থানার ওসি সৈয়দ লুৎফর রহমান প্রথমে বাংলামেইলকে বলেন, ‘এটাই সন্ত্রাস। এরা ওই নারীদের (হামলাকারীদের) কুপিয়ে জখম করেছে। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি নেয়নি। পরে তারা টঙ্গীর একটি হাসপাতালের চিকিৎসাপত্র নিয়ে মামলা করতে আসে।’

একটু পরেই তিনি সুর পাল্টে বলেন, ‘তারাতো থানায় মামলা দিতে আসেনি।’ অথচ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার অফিসকক্ষ থেকেই।

এদিকে মাকে রক্ষা করতে গিয়ে হামলার শিকার মুন্না বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক দলের ক্রিকেটার। তিনি বিদেশের মাটিতেও বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলেছেন। এর আগেও এই দালালদের হামলার শিকার হয়েছিলেন। ওই হামলায় গুরুতর আঘাত পাওয়ার পর থেকে তিনি আর খেলতে পারছেন না। তার বাবা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ভারপ্রাপ্ত বিদ্যুৎ পরিদর্শক। বড়ভাই মামুন হোসেন খান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের কেইস প্রকল্পের সড়ক পরিদর্শক।

নির্যাতনের শিকার কামসুদা বেগম বাংলামেইলকে বলেন, ঘটনার দিন ভূমিদস্যু মিজানুর রহমান একদল ক্যাডার ও একদল দালাল এসে হঠাৎ তাদের বাড়ির স্যুয়ারেজ ও পানির লাইন বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে বাড়ির দরজায় ট্রাক ভর্তি করে বালু রাখে। এতে ওই বাড়ির দরজা ও পানি এবং স্যুয়ারেজ লাইন বন্ধ হয়ে যায়। তাদের কাছে জানতে চাইলে কোনো কথা না বলে হামলা চালায়।

বাংলামেইলের অনুসন্ধানে জানা গেছে, হামলাকারী ওই পুরুষ ও নারীদের নাম। তারা হচ্ছেন- স্থানীয় জমির দালাল মিজানুর রহমান সরদার (৪৬), নাছিমা বেগম (৪০), বাচ্চু মিয়া (৪৮), ফাতেমা বেগম (৪৮), আতাহার আলী ওরফে আতশ (৪২), রাশেদা বেগম (৪০), মোহাম্মদ আলী (৩৮), মিন্টু মিয়া (১৯), জয় (১৯), মহসিন (২২), খলিল মিয়া (৫৫), সামসু (৩২), হালিমা বেগম। স্থানীয়রা জানান এরা সবাই জমির দালাল চক্রের সদস্য।

হামলায় আহত মাকসুদা বেগম বলেন, আমাদের বাড়িটি দখল করার জন্যই এভাবে মারধর করেছে। প্রথমে তারা আমার বাড়ির স্যুয়ারেজ লাইন ও পানির লাইন বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে আমি তাদেরকে জিজ্ঞাস করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের ওপর এভাবে হামলা করে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামী থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে। আমরা হাসপাতালে ভর্তি হই। এরপর ওসি সাহেব আমাদেরকে মামলা দিতে থানায় আসতে বলে। আমরা মামলা দিতে এসে উল্টো আমাদের গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠায়। আমার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ তা দেখতে চাই। তারা কিছুই না দেখিয়ে আমাদের গ্রেপ্তার করে। আমাদের ওপর হামলার ভিডিওটি তাকে দেখাতে চাইলেও তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন।

জানতে চাইলে দক্ষিণখান থানার এসআই ও নির্যাতনকারী মিজানুর রহমান সরদারদের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান বলেন, ‘এমন নির্যাতনের শিকার কেউ থানায় আসেনি।’

তাহলে থানা থেকে তারা কীভাবে গ্রেপ্তার হলো এমন প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান বলেন, ‘সেদিন তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ওসি সাহেব আমাকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা করেছেন। তিনি বলেছেন, এই মামলার ৭ জন আসামি, তাদের গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করো। পরোক্ষণে তারা থানায় এলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।’

মাকসুদা বেগম, তার মা হালিমা বেগম, স্বামী আবুল হোসেন খান ও ছেলে খুদে ক্রিকেটার কামরুল হাসান মুন্নাকে নির্যাতনের তিনটি ভিডিও বাংলামেইলের হাতে রয়েছে এমন তথ্য জানালে তিনি বলেন, ‘তারা যদি থানায় আসে অবশ্যই মামলা নেব। তারা না আসতে পারলে, অন্য কারো মাধ্যমে মামলা পাঠালেও গ্রহণ করা হবে। সুত্র: বাংলামেইল

 

https://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=GASliBhVOB0