ফারহানা মিতু : পুঁজিবাজারে গতকাল সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে সুচকের বড় ধরনের দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে রয়েছেন। এছাড়া দিন যতই যাচ্ছে লোকসানের পাল্লা ততই বাড়ছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পর বিনিয়োগকারীদের দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে।

এছাড়া প্রাণহীন শেয়ারবাজারে ফের বড় ধরনের পতন ঘটেছে। চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে বড় ধরনের পতনের পর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও বুধবার ফের বড় ধরনের পতনের কবলে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসই ব্রড ইনডেক্সের (ডিএসইএক্স) পতন হয়েছে ৬৩.৫৮ পয়েন্ট। সূচক পতনের এ হার ১.৩৩ শতাংশ।

দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিএসইএক্সের পতন হয়েছে ১১৯ পয়েন্টের। সূচকের পাশাপাশি উভয় বাজারে আশঙ্কাজনকহারে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। মঙ্গলবার ডিএসইতে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা লেনদেন হলেও বুধবার তা নেমে এসেছে ৩০০ কোটি টাকায়। দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৩০৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। মঙ্গলবারের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১৪০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। লেনদেন কমার এ হার ৩১.২৭ শতাংশ। গত প্রায় ৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে ডিএসইতে।

এর আগে গত ২১ জুন সর্বনিম্ন ৩০৮ কোটি ২১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে মঙ্গলবারের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৩৮.৩৯ শতাংশ। এর আগে চলতি সপ্তাহের প্রথম লেনদেন দিবস রবিবার ডিএসইএক্সের পতন হয়েছিল ৫৩ পয়েন্ট। ১০৮ পয়েন্ট পতন হয়েছিল সিএসই সূচকের।

গতকালের বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতায় শুরু হয় দিনের লেনদেন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পতনের এ ধারা বজায় থাকায় দিনশেষে ডিএসই সূচকের পতন ঘটে ৬৩.৫৮ পয়েন্ট। এর ফলে ৪৭৭৯.৬৬ পয়েন্ট দিয়ে শুরু করা সূচক লেনদেন শেষে ৪৭১৬.০৮ পয়েন্টে নেমে যায়।

লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রায় ৭৬ শতাংশ ইস্যুর দর কমেছে। ৩১৮টি ইস্যুর মধ্যে দিনশেষে দর বেড়েছে মাত্র ৫১টির, কমেছে ২৪১টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টির দর। লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা। দিনশেষে কোম্পানিটির ১৭ কোটি ৯৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাফার্জ সুরমা সিমেন্টের লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ২৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। ১০ কোটি ৩০ লাখ ১৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল।

বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার কারণে বাজারে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি আরও বলেন, বাজার পরিস্থিতি সব সময় বাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।

বাইরের ঘটনাও বাজারকে প্রভাবিত করে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও সামাজিক অস্থিরতার বিষয়গুলোও পুঁজিবাজারের পতনের কারণ হতে পরে। এ ছাড়া কিছুটা মূল্য সংশোধনের প্রভাবও বাজারে পড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন। তবে বাজারে বড় ধরনের পতন হলেও এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানান এ বিশ্লেষক।

আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, বাজারের এমন আচরণের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। কয়েকটি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন খারাপ আসার কারণে বাজারে তার প্রভাব পড়তে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাজার বিশ্লেষক বলেন, লাফার্জ সুরমা সিমেন্টসহ বড় মূলধনী কিছু কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বাজারে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এ কারণে সার্বিক বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১০ সালের ধসের প্রভাব থেকে এখনো বের হয়ে আসতে পারেনি বাজার। পুঁজি হারিয়ে অনেক বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে চলে গেছেন। মার্জিন লোনের ফাঁদে পড়ে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর ইক্যুইটি ঋণাত্মক হয়ে গেছে।

শুধু তাই নয়, যে সব ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংক মার্জিন লোন দিয়েছিল সেগুলোও বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনায় ব্যাংকগুলোও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারছে না।

পুঞ্জীভূত লোকসান থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না মিউচুয়াল ফান্ডগুলো। এ সব কারণে অনেকটাই প্রাণহীন অবস্থায় রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। প্রাণহীন বাজারে বড় ধরনের পতনের কারণে আস্থার সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।