GQ-Econoজিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রির রাইট শেয়ার ইস্যু প্রস্তাবের ভাগ্য মামলা জটিলতায় ঝুলে গেছে । হিসাব কারসাজির দায়ে করা বিএসইসির জরিমানার বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ায়, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হিমাগারে পড়ে থাকতে পারে রাইট প্রস্তাবটি। বিএসইসি সূত্রে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, হিসাব কারসাজির দায়ে বিবিধ খাতের এ কোম্পানির চার পরিচালককে ৫১৭তম কমিশন সভায় আড়াই লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। প্রতিষ্ঠানটির চার পরিচালক হলেন কাজী সলিমুল হক, সালমা হক, কাজী এম সালমান সারোয়ার এবং সারা হক।

বিএসইসি জরিমানা করার পর ওই চার পরিচালক বিএসইসির কাছে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি প্রত্যেক পরিচালকের জরিমানা ৫০ হাজার টাকা কমিয়ে ২ লাখ টাকা নির্ধারণ করে।

কিন্তু বিএসইসির ওই পুনর্বিবেচনায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি জিকিউর চার পরিচালক। তারা বিএসইসির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গত জুলাই মাসে আদালতে যান।

এ বিষয়ে কোম্পানির সচিব উজ্জ্বল কুমার অর্থসূচককে বলেন, বিএসইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছেন ভুক্তভুগী চার পরিচালক। তারা বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি করার পক্ষে। তাদের আইনজীবী হিসাবে আছেন ব্যারিস্টার শাহ মন্জুরুল হক।

ডিএসই সূত্র মতে, ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রি বিএসইসিতে রাইটের জন্য আবেদন করে। কোম্পানিটি বাজার থেকে ৩৪ কোটি ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১১০ টাকা তুলতে চায়। এ জন্য ১০ টাকা ফেসভ্যালুতে একটি শেয়ারের বিপরীতে এক দশমিক ৫টি শেয়ার ছাড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, যতদিন পর্যন্ত সংস্থাটির এনফোর্সমেন্ট বিভাগের ইস্যু শেষ না হবে, ততদিন কোম্পানিটির রাইট নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। রাইট পাশ হতে সাধারণত ৬ মাস থেকে এক বছর সময় লাগে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটু বেশিও লাগে। আর জিকিউ বলপেন রাইট জমা দিয়েছে প্রায় ২ বছর আগে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিএসইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যে কোনো কোম্পানি আদালতে যেতে পারে। এ বিষয়ে বিএসইসির কোনো আপত্তি নেই। তবে বিএসইসি তার নিজস্ব গতিতে চলবে। রাইটের বিষয়ে কোম্পানি সচিব বলেন, রাইটের অনুমোদনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

ডিএসই সূত্র মতে, বর্তমানে জিকিউ বলপেনের মোট শেয়ার সংখ্যা ৮৯ লাখ ২৮ হাজার শেয়ার। এর মধ্যে ৪১ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার আছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। বাকী শেয়ারের মধ্যে ১ দশমিক  ৪৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী ও শূণ্য দশমিক শূণ্য ৫ শতাংশ রয়েছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে।

প্রসঙ্গত, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইনের তিনটি ধারা লংঘনের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএসইসি। এর মধ্যে ৩১ শে ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে শেয়ার ক্যাপিটাল বাড়ানো হয়। এই শেয়ার ক্যাপিটাল বৃদ্ধির বিপরীতে ১০ কোটি টাকার ক্যাশ ইনফ্লো কোম্পানির ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট দেখানো হয়েছে। আর এই নন ক্যাশ লেনদেনে কোম্পানির ক্যাশ ইনাফ্লো হিসাবে দেখানোর মাধ্যমে কোম্পানিটি আলোচ্য সময়ের ব্যালান্স শীটে ১০ কোটি ৮০ হাজার টাকার ক্যাশ এবং ব্যাংক ব্যালান্স দেখানো দেখিয়েছে।

এতে কোম্পানিটির মিথ্যা তথ্য প্রমাণিত হয়েছে। এটি সিকিউরিটিজ আইনে ব্যাসেল-৭ (মিথ্যা ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট), সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ আইন ১৯৮৭, ধারা ১২(২) এবং সেকশন ১৮, প্রজ্ঞাপন ১৯৬৯ ধারার লঙ্ঘন।

দ্বিতীয়ত, জিকিউ বলপেনের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি মালাডেশ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের ৩০ শে সেপ্টেম্বর ২০১১ এবং এবং একই তারিখে ২০১২ সালের সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে যথাক্রমে ৪০ লাখ টাকা মূল্যের বোনাস শেয়ার ইস্যুর বিপরীতে ক্যাশ আউট ফ্লো এবং ক্যাশ ইনফ্লো দেখানো হয়েছে। যা সাংঘর্ষিক।

আলোচ্য বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ার ক্যাপিটাল বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্টের মাধ্যমে ২০১১ সালের ব্যালান্স শীটে ক্যাশ এবং ব্যাংক ব্যালান্স ৪০ লাখ টাকা কম এবং ২০১২ সালের ব্যালান্স শীটে ২৪ লাখ টাকার বেশি ক্যাশ এবং ব্যাংক ব্যালান্স দেখানো হয়েছে।

আলোচিত দুইটি লেনদেনের মাধ্যমে নেট ক্যাশ এবং ব্যাংক ব্যালান্স ১৬ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। এতে কোম্পানটি মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে ব্যাসেল-১, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ আইন ১৯৮৭, ধারা ১২(২) এবং সেকশন ১৮, প্রজ্ঞাপন ১৯৬৯ ধারা লঙ্ঘন করেছে।

তৃতীয়ত, কোম্পানিটি ৩১ শে ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে ২২৫ কোটি ৭০ হাজার টাকার পু:নমূল্যায়িত সম্পদের উপর কোন অবচয় ধার্য করে নি। এছাড়া আইন অনুযায়ী, এই সম্পদের উপর সঠিক কোন আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় নি। একই সাথে কোম্পানিটি ইনকাম ট্যাক্স অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এবং ব্যাসেল-১২ অনুযায়ী, পু:নমূল্যায়িত সম্পদের উপর ট্যাক্সের বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশ করে নি।

এতে কোম্পানিটি ব্যাসেল-১২, ব্যাসেল-১৬ , ব্যাসেল-১ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ আইন ১৯৮৭, ধারা ১২(২) এবং সেকশন ১৮, প্রজ্ঞাপন ১৯৬৯ ধারা লঙ্ঘন করেছে।