‘দুই পদক্ষেপের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সমস্যা দূর করা সম্ভব’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ২০২৪ সাল ছিলো পুঁজি হারানোর বছর। বছরজুড়েই পতনের মধ্যে ছিল দেশের পুঁজিবাজার। ফলে বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া গত কয়েক বছর ধরে চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে। এমন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার একটি বছর পার করলো। গত বছর পুঁজিবাজারের সূচক খুব একটা বাড়েনি।
বছরজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে পুঁজিবাজারে মন্দাভাব বিরাজ করে। ফলে, প্রত্যাশা অনুযায়ী মুনাফা করতে পারেননি বিনিয়োগকারীরা। নতুন বছরে গতিশীল পুঁজিবাজার চান বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা।
তাদের প্রত্যাশা, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় নতুন বছরে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে, হারানো পুঁজি ফিরে পাবেন। কারণ গত দুই বছরের টানা দরপতনে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর পুঁজি শেষ। এ অবস্থায় আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর বিনিয়োগকারীদের আশা ছিলো বাজার ভাল হবে। তবে ভাল তো দুরের কথা। পুঁজিবাজারের গত পাঁচ মাসের দরপতনে বড় ক্ষতির মুখে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।
একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারে মূল সমস্যা আস্থা সংকট। বিশেষ করে বর্তমান বিএসইসি চেয়ারম্যানের হুটহাট সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা সংকট বাড়ছে। এ অবস্থায় সূচকের টানা উত্থান না হলেও আতঙ্ক কাটবে না। তাই যে কোন মূল্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরী করতে হবে। তেমনি পুঁজির নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা দিতে হবে। তা না হলে নতুন পুরাতন বিনিয়োগকারীর আগমন ঘটবে না পুঁজিবাজারে।
এছাড়া নতুন বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারমুখী হবে না। এদিকে ২০২৫ সালে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। ফলে আশা করা হচ্ছে, সাইডলাইনে থাকা বিনিয়োগকারীরা ফের সক্রিয় হবেন এবং বিনিয়োগে ফিরবেন। বস্তুত বর্তমান অবস্থান থেকে পুঁজিবাজারের ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তারা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুৃঁজিবাজারে মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট। এই সংকট কাটাতে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। না হলে দীর্ঘমেয়াদে বাজার টেকসই হওয়া কঠিন।
তিনি আরো বলেন, সবার আগে আস্থা সংকট দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আস্থা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ কারসাজির মাধ্যমে কেউ তার টাকা হাতিয়ে নিলে বিচার হবে এই মর্মে বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তা দিতে হবে। পাশাপাশি ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এই দুই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাজারের সমস্যা দূর করা সম্ভব। তবে বর্তমান বাস্তবতায় এটি খুব সহজ নয় বলে তিনি মনে করেন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচক বাড়লেও কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ও টাকার পরিমানে লেনদেন। তবে বিনিয়োগকারীরা আরো ৭০৯ কোটি টাকা ফিরে পেয়েছেন। এর আগে টানা তিন কার্যদিবস পতনের পর গত বৃহস্পতিবার এবং রোববার সূচকের উত্থান হয়েছে।
টানা তিন কার্যিিদবস পুঁজিবাজার থেকে ৫২ পয়েন্ট সূচকের উধাও হয়ে গেছে। তবে শেষ তিন কার্যদিবস উত্থানে পুঁজিবাজারে ফিরেছে ৪৭ পয়েন্ট। আর শেষ তিন কার্যদিবসে বিনিয়োগকারীরা ফিরে পেয়েছেন ৩ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে ফিরেছে ৭০৯ কোটি টাকা।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ দিন পতনে থাকা বাজার ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে ফিরতে শুরু করেছে। সরকার সহ বাজার সংশ্লিষ্ট সবাই বাজারকে স্থিতিশীলতায় ফিরাতে দীর্ঘদিন যাবত চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদেরও কিছুটা আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় সূচকের টানা উত্থান হলে পুরোপুরি আস্থা ফিরবে বিনিয়োগকারীদের।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ২১৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৬৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৩৯ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৭ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪২ টির, দর কমেছে ১৮৪ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭১ টির। ডিএসইতে ৩৭৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৫০ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৭৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৩ পয়েন্টে। সিএসইতে ২১০ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৩ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১০০ টির এবং ২৭ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।