শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, ‘পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে বন্ড মার্কেটকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সব পণ্যে প্রণোদনা দিতে হবে। আমরা অনেক দেশ, এমনকি উন্নত দেশের তুলনায় ভালো আছি। বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় আমরা অনেক ভালো পজিশনে আছি। কৃষি, প্রবাসী আয় ও রপ্তানি খাতের কারণে আমাদের পজিশন ধরে দেখতে পেরেছি।’

এছাড়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করাই উচিত না। তাদের উচিত প্রাতিষ্ঠানিক মাধ্যমে বিনিয়োগ করা। দেশের পুঁজিবাজারের চলমান তারল্য সংকটের মূল কারণ হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ না থাকাকেও দায়ী করছেন প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা।

বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) ২০২৩-২৪ প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল ২৪-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটের একটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রাকচারাল ডিফেট (কাঠামোগত দুর্বলতা) রয়ে গেছে। আমরা অনেকেই অনেক কথা বলি কিন্তু এসব দুর্বলতা সমাধানে যেসব কাজ করা দরকার আমরা তা করছি না।

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমি এনালাইসিস করে দেখেছি যে, পুঁজিবাজারে আমাদের দৈনিক লেনদেনের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ হচ্ছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের। আর ৫ থেকে ১০ শতাংশ হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। আইসিবি টোটালি ইনঅ্যাকটিভ (নিষ্ক্রিয়), এছাড়া সিটি ব্যাংক ও অন্যান্য বিনিয়োগকারী ব্যাংক রয়েছে তারা দৈনিক লেনদেনের ৫ শতাংশ অংশগ্রহণ করছে। মূল সমস্যাটা এই জায়গাতেই।’ অন্যান্য দেশের ফ্রন্টিয়ার মার্কেটে দৈনিক লেনদেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ থাকে ৯০ শতাংশ আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী থাকে ১০ শতাংশ।’

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আজকেও এটা শুনেছি যে, কথার কথায় সবাই বলে ছোট বিনিয়োগকারীদের বাঁচাতে হবে। ছোট বিনিয়োগকারীকে রক্ষা করা তো সরকারের দায়িত্ব না। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের এখানে বিনিয়োগ করাই উচিত না। তাদের উচিত প্রাতিষ্ঠানিক মাধ্যমে বিনিয়োগ করা। এখানে আমরা শুধু ব্রোকারকে ব্যবহার করি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে, কিন্তু বিনিয়োগের সিদ্ধান্তগুলো একজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী হিসেবে আমি নিজে নিচ্ছি। আর যখনই আমার ভুলের কারণে আমি লস করি তখন দায়িত্বটা সরকারে হয়ে যাবে। বাহ খুব সুন্দর।’

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এই স্ট্রাকচারাল ডিফেটটা যদি আমরা না ঠিক করতে পারি, তাহলে আমাদের পুঁজিবাজার বড় করা অনেক বেশি কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।’

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। রিজার্ভের সমস্যা সমাধানে আমরা আমদানি কমাতে সক্ষম হয়েছি। আগামী জুনে রিজার্ভ নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে, আইএমএফ ঋণ দেবে না বিভিন্ন আশংকা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়া গেছে। প্রথম দফায় ঋণ ছাড়ও হয়েছে। ব্যাংক সুদের হার সীমা তুলে দেয়া হচ্ছে। ম্যাক্রো ইকোনমিতে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে আমরা সঠিক পথেই আছি।’

অটোমেশনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত বিশ্বেই কম। ট্যাক্স নেট ও জিডিপি বাড়াতে হলে অটোমেশনের বিকল্প নেই। কাঠামোগত সমস্যা আছে, তা হচ্ছে পরোক্ষ করের নির্ভরশীলতা। এটা কমাতে হবে। প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে হবে। বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা এখনো রাজস্ব আদায়ে কাস্টমসের নির্ভরতা বেশি। এটা কমাতে হবে। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন যদি ২০১৪ সালে করতে পারতাম তাহলে এই সেক্টর নিয়ে এতো প্রশ্ন উঠতো না। কর আইন সহজ করতে হবে।

কর নেট বৃদ্ধির কথা বলি, কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কর দিতে চায় না। এটাই বাস্তবতা। সবাই করের আওতায় না এলে করনেট বৃদ্ধি কীভাবে হবে? ব্যবসায় লাভ করছে, কিন্তু কর দিতে সমস্যা কোথায়? সব জায়গায় কর অব্যাহতি দিলে কর কোথা থেকে আসবে।’

মেনমেইড ফাইবারে কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে মেনমেইড ফাইভার মেনমেইড ফাইভার শুরু করেছি। এতদিন আমরা কী করলাম? ইয়াংওয়ান ২০ বছর আগে এগুলো করেছে। বর্তমানে তারা বিলিয়ন ডলারের মেনমেইড করতেছে, তাদের কি ইনসেন্টিভ দেয়া হইছে? তাহলে আমরা কেন এতদিন বসে রইলাম।?’

ডিসিসিআই সভাপতি সামীর সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) উপস্থিত ছিলেন।