শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৬৯ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমার সর্বনিম্ন সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছেন।

আদেশে বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ারদরের গতিবিধি নিয়ন্ত্রন করা প্রয়োজন। তাই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমার সর্বনিম্ন সীমা ১ শতাংশ রাখাতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

তবে  দ্বিতীয় দফা ফ্লোর প্রাইস আরোপের প্রায় পাঁচ মাস পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যেসব কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন দর উঠিয়ে দিয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিমা খাতের কোম্পানি। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর পরের অবস্থানে বস্ত্র, তার পরে খাদ্য এবং আর্থিক খাতের অবস্থান।

পুঁজিবাজারের লেনদেন তলানিতে নামার পর বুধবার এই ১৬৯ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করে বিএসইসি জানায়, এগুলোর শেয়ারদর দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে পারলেও এক দিনে কমতে পারবে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ। এর ফলে যেগুলোর শেয়ারদর ১০ টাকার নিচে, সেগুলোর দাম আসলে কমতে পারবে না।

বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম জানিয়েছেন, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন সবচেয়ে কম, এমন কোম্পানি তারা বেছে নিয়েছেন। তাদের সম্মিলিত বাজার মূলধন পুঁজিবাজারের বাজার মূলধনের ৫ শতাংশের মতো। অব্যাহত দরপতনের মুখে গত ৩১ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো সব শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয়া হয়। করোনার প্রাদুর্ভাবে ২০২০ সালের মার্চেও দরপতন ঠেকাতে একই পদক্ষেপ নেয়া হয়।

সে সময় ফ্লোর প্রাইস পুঁজিবাজারে প্রাণ ফেরাতে পারলেও এবারের চিত্রটি ভিন্ন। অল্প কিছু কোম্পানির শেয়ারদরে লাফ দিলেও তিন শরও বেশি কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোরে পড়ে ছিল। এক পর্যায়ে লেনদেন নেমে আসে করোনাকালের সমান। এই অবস্থায় প্রথম ধাপে অর্ধেকের বেশি কোম্পানির ফ্লোর তোলা হলো। ২০২১ সালেও এভাবে ধাপে ধাপে ফ্লোর প্রাইস তোলা হয়েছিল।

বিমা খাত: ফ্লোর প্রাইস উঠে গেছে এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিমা খাতে আছে সবচেয়ে বেশি ৩৭টি। এর মধ্যে সাধারণ বিমা খাতের কোম্পানির সংখ্যা ৩১টি। এগুলো হলো: ইসলামি কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স,

ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, নিটোল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, রূপালী ইন্স্যুরেন্স, ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স, সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স ও ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।

জীবন বিমা খাতের কোম্পানি আছে আরও ছয়টি। এগুলো হলো: প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স ও নতুন তালিকাভুক্ত চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড: দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড। মোট ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে ৩৬টিরই ফ্লোর প্রাইস উঠে গেছে। এর মধ্যে আবার বেশি আইসিবি পরিচালিত ফান্ড আছে ১৩টি। এগুলো হলো: প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড স্কিম ওয়ান, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড,

আইএফআইএল ইসলামিক মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান, আইসিবি এএমসিএল থার্ড এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এমবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামি মিউচ্যুয়াল ফান্ড, প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট আইসিবি এএমসিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রণী ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেজ জুবিলি মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড।

রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত ফান্ড আছে নয়টি। এগুলো হলো: এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ইবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ইবিএল এনআরবি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, পিএইচপি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ড।

এলআর গ্লোবাল পরিচালিত ফান্ড আছে চারটি। এগুলো হলো: ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, গ্রিনডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এনসিসিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচ্যুয়াল ফান্ড- ওয়ান।

অন্যান্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির ফান্ড আছে ১০টি। এগুলো হলো: এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড, এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ড, এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়া ফান্ড; সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামী মিউচ্যুয়াল ফান্ড; ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফাইন্যান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান, ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালেন্ডস ফান্ড; এশিয়ান টাইগার সন্ধ্যানী লাইফ গ্রোথ ফান্ড; রিলায়েন্স ওয়ান মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং এনএলআই ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড।

বস্ত্র খাত: এই খাতে তালিকাভুক্ত ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে ফ্লোর প্রাইস উঠে গেছে ২৬টির। কোম্পানিগুলো হলো: দুলামিয়া কটন, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, তুংহাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, আনলিমা ইয়ার্ন, জাহিন টেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, সাফকো স্পিনিং মিলস, নুরানী ডায়িং, তাল্লু স্পিনিং,

এপেক্স স্পিনিং অ্যান্ড নিটিং, দেশ গার্মেন্টস, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ডেল্টা স্পিনার্স, জাহিন স্পিনিং, স্টাইলক্রাফট, ঢাকা ডায়িং, প্রাইম টেক্সটাইল, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, ইভিন্স টেক্সটাইল, ফ্যামিলি টেক্স, হামিদ ফেব্রিক্স, রহিম টেক্সটাইল, প্যাসিফিক ডেনিমস ও সায়হাম টেক্সটাইল।

প্রকৌশল খাত: এই খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে ফ্লোর প্রাইস উঠে গেছে ১৬টির। এগুলো হলো: আজিজ পাইপস, বিডি অটোকারস, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, দেশবন্ধু পলিমার, বিডি ওয়েল্ডিং, ওয়াইমেক্স ইলেকট্রোড, ইয়াকিন পলিমার, কেঅ্যান্ড কিউ, আরএফএল, আরএসআরএম, নাভানা সিএনজি, অলিম্পিক অ্যাকসেসোরিজ, রেনউইক যগেশ্বর, বিডিথাই অ্যালুমিনিয়ম, ডোমিনেজ স্টিল ও মুন্নু অ্যাগ্রো।

খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত: এই খাতের ২১ কোম্পানির মধ্যে ফ্লোর প্রাইস উঠে গেছে ১০টির। কোম্পানিগুলো হলো: খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে আছে মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, শ্যামপুর সুগার মিলস, জিলবাংলা সুগার মিলস, ফাইন ফুডস, বঙ্গজ, বিচ হ্যাচারি, এপেক্স ফুডস, এমারেল্ড অয়েল ও প্রাণ।

আর্থিক খাত: এই খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা মোট ২৩টি। এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস উঠে গেছে ১০টির। কোম্পানিগুলো হলো: ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ফাস ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, বিআইএফসি, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ও মাইডাস ফাইন্যান্সিং।

বিবিধ খাত: এই খাতে ১৪টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস উঠেছে ৯টির। কোম্পানিগুলো হলো: সাভার রিফ্রাকটরিজ, জিকিউ বলপেন, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ, ওসমানিয়া গ্লাস, খান ব্রাদার্স পিপিওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ, ন্যাশনাল ফিড মিলস, অ্যারামিট লিমিটেড ও এস কে ট্রিমস।

ওষুধ ও রসায়ন খাত: এই খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩৪টি। এর মধ্যে ফ্লোর উঠে গেল পাঁচটি কোম্পানির। এগুলো হলো: ইমাম বাটন, লিব্রা ইনফিউশনস, এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইন্দোবাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস।

তথ্য প্রযুক্তি: তথ্যপ্রযুক্তি খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ১১টি। এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস থাকছে না চারটির। কোম্পানিগুলো হলো: ইনফরমেশন সার্ভিসেস, ইনটেক, অগ্নি সিস্টেমস ও বিডিকম অনলাইন।

পাট খাত: এই খাতে তালিকাভু্ক্ত কোম্পানি তিনটি। এর কোনোটিরই ফ্লোর প্রাইস থাকছে না। কোম্পানিগুলো হলো জুট স্পিনার্স, নার্দান জুট ও সোনালী আঁশ।

চামড়া খাত: এই খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ছয়টি। ফ্লোর প্রাইস উঠে গেছে তিনটির। কোম্পানিগুলো হলো সমতা লেদার, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার ও এপেক্স ট্যানারি।

কাগজ ও প্রকাশনা: এই খাতের কোম্পানির সংখ্যা মোট ছয়টি। এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস উঠে গেল তিনটির। কোম্পানিগুলো হলো: খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, হাক্কানি পাল্প ও পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং।

সিমেন্ট খাত: এই খাতে তালিকাভুক্ত মোট সাতটি কোম্পানি। এর মধ্যে ফ্লোর থাকছে না দুটির। এগুলো হলো: অ্যারামিট সিমেন্ট ও মেঘনা সিমেন্ট মিলস।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত: এই খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ২৩টি। এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস থাকছে না দুটির। কোম্পানিগুলো হলো: ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ও জিবিবি পাওয়ার।

আরও তিন খাতের একটি করে: এছাড়া সেবা ও আবাসন খাতের বাংলাদেশ সার্ভিসেস, ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের সমরিতা হসপিটাল এবং সিরামিক খাতের স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকসের ফ্লোর প্রাইস উঠে গেছে।