শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে নীতি সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে লভ্যাংশের উপর থেকে কর প্রত্যাহার, তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান বাড়ানোসহ বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বিএমবিএ এই চিঠি পাঠিয়েছে। বিএমবিএ সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

বিএমবিএ সভাপতি মোঃ ছায়েদুর রহমান এবং সেক্রেটারি জেনারেল মোঃ রিয়াদ মতিন সাক্ষরিত এই চিঠিতে বিগত ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নেতিবাচক ধারায় চলার কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, মাঝে মাঝে কিছু খন্ডিত সহায়তা বা সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারকে চলমান করার চেষ্টা করা হলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। পুঁজিবাজার যে কোনো দেশের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য অংশ কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তা দৃশ্যমান অবস্থায় আসতে পারেনি।

আমাদের দেশের অর্থনীতে জিডিপি এর তুলনায় বাজার মূলধন অনুপাত (market capital ratio) অত্যন্ত নগণ্য (১৭% মাত্র) ১৭-১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশ এখানে কর্মসংস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কর্মসংস্থান করার জন্য শিল্পায়ন, ব্যবসা বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি করা খুবই জরুরী। এলক্ষ্যে অর্থের যোগান বাড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অব্যবহৃত ছোট ছোট সঞ্চয়সমূহকে উৎপাদনমূখী করার জন্য একমাত্র মাধ্যম হলো গতিশীল পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজার গতিশীল না থাকলে এধরনের উদ্যোগ কার্যকর হয়না।

আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের অর্থনীতির আকৃতি অনেক বড় হয়েছে। ২০১৯ পর্যন্ত আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ছিল ঈর্ষান্বিত কিন্তু কোভিড-১৯ এর প্রভাব, পরবর্তীতে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে টালমাটাল করেছে। বাংলাদেশেও তার প্রভাব দৃশ্যমান। আমরা মনে করি পুঁজিবাজার হতে পারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শক্তি, যদি পলিসি সাপোর্টের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের পরিধি ও গভীরতা বাড়ানো যায়।

এক্ষেত্রে সরকারের সহযোগীতা ও সুদৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পুঁজিবাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাস্তবতার ভিত্তিতে পলিসি নির্ধারণ করা খুবই জরুরী। আমাদের দেশে ব্যাক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারী বেশি। যেকোনো ধরনের পরিবর্তনেই এসকল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পরিবর্তন বা অস্থিরতা তৈরি হয়। তাই দীর্ঘমেয়াদী পলিসি নির্ধারণের মাধ্যমে তার ভারসাম্য রক্ষা করা দরকার।

আমরা মনে করি, বাজার সহায়ক বিনিয়োগ বান্ধব কর কাঠামো নির্ধারণ করা হলে কর আদায় বৃদ্ধি পাবে, হ্রাস পাবে না। কিন্তু তারজন্য প্রয়োজন সঠিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ পূর্বক পলিসি নির্ধারণ। এসময় চিঠিতে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে গতিশীল করে সার্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক রাখার জন্য ৯টি বিষয়াদি বিবেচনা করার প্রস্তাব দেয়া হয়। সেগুলো হলো:-

১। লভ্যাংশের উপর কর প্রত্যাহার করা। কেননা একটি প্রতিষ্ঠান/কোম্পানী করপোরেট কর পরিশোধের পর লভ্যাংশ প্রদান করে। সেই লভ্যাংশ থেকে আবার উচ্চহারে কর কর্তন দ্বৈত করের সামিল। তাই বিনিয়োগকারীরদের মধ্যে লভ্যাংশ গ্রহনের প্রতি অনিহা। দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য লভ্যাংশের কর প্রত্যাহার করা খুবই জরুরী।

২। করপোরেট কর হার তালিকাভূক্ত ও অতালিকাভূক্তের মধ্যে পার্থক্য বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আমরা কর কমাতে বলছি না শুধুমাত্র তালিকাভূক্ত ও অতালিকাভূক্ত কোম্পানীর করের হারের ব্যবধান বাড়ানোর জন্যপ্রস্তাব করছি। তাহলে বৃহৎ/ভালো প্রতিষ্ঠান সমুহ তালিকাভূক্তিতে আগ্রহী হবে এবং বাজারের আকৃতি ও গভীরতা বৃদ্ধি পাবে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড আরও গতিশীল হবে। বর্তমানে ৭.৫% হারের ব্যবধান উদ্যোক্তাদের তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহিত করতে পারছে না।

৩। বন্ড বাজারকে গতিশীল করা বা বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য কর কাঠামো পরিবর্তন করা প্রয়োজন। বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয় Special rate (৫%) এ কর আরোপ করা যেতে পারে, তাহলে বন্ড বিনিয়োগে আগ্রহী হবে বিনিয়োগকারীরা।

৪। লেনদেনের (Trading) উপর কর হার কমানো (০.০৫% এর পরিবর্তে ০.০১৫%)। তাহলে লেনদেন বৃদ্ধি পাবে এবং যথারীতি কর আদায়ও বৃদ্ধি পাবে।

৫। তালিকাভূক্ত কোম্পানীর আয়কর নিষ্পত্তি সহজকরন করা প্রয়োজন। ৬। মিউচুয়াল ফান্ডকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে পলিসি দরকার এবং Mutual Fund এর লভ্যাংশ করমুক্ত করা প্রয়োজন।

৭। ভালো/ বৃহৎ প্রতিষ্ঠান / MNC /সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠান সমুহকে তালিকাভূক্তির জন্য পলিসি করা। ব্যবসার আকার/ঋণের আকার/পুঁজির আকার এর ভিত্তিতে তালিকাভূক্তির পলিসি করা প্রয়োজন। যতবেশী তালিকাভুক্ত কোম্পানী হবে সরকার ততবেশী কর পাবে। ৮। তালিকাভূক্ত কোম্পানীর ভ্যাট হার ৫% কমানো যেতে পারে, তাহলে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান সমুহ উৎসাহিত হবে তালিকাভূক্তির জন্য।

৯। ট্রেডিং gain and capital gain একই সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত না করে আলাদা কর কাঠামো করা প্রয়োজন । তাহলে কর আদায়ের পরিমান বাড়তে পারে।

আমরা বিশ্বাস করি উপরোক্ত বিষয়াদি সঠিকভাবে মূল্যায়ন পূর্বক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার একটি নিশ্চিত বিনিয়োগের জায়গা হবে বিনিয়োগকারীদের জন্য। আমাদের পুঁজিবাজার নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়। তবে অনেক আলোচনা/সমালোচনা, সঠিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে করা হয় না।

এ সমালোচনার ফলে এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অপরদিকে কতিপয় বিনিয়োগকারী লাভবান হয়। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একটি ধারাবাহিকতার জন্য উপরোক্ত বিষয়গুলো ইতিবাচক বিবেচনার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। যথাযথ পলিসির মাধ্যমে পুঁজিবাজার গতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করবে।