শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে চলছে টানা দরপতন। টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনাস্থা। আর এতে প্রকট হচ্ছে তারল্য সংকট। ফলে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন গত দুই বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে। এছাড়া আস্থা ও তারল্য সংকটে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমতে কমতে ফ্লোর এসে ঠেকেছে।

ফলে বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা সংকটে পড়েছে পুঁজিবাজার। আর তাতে পুঁজিহারা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চলছে শুধু হাহাকার। এ অবস্থায় বিদায়ী সপ্তাহে দুই স্টক এক্সচেঞ্জে বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ৩৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী এ নিয়ে বিএসইসি ও ডিএসই সহ পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা চিন্তিত। দ্রুত এখান থেকে পুঁজিবাজার না ঘুরলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন বিনিয়োগকারীরা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ অধিকাংশ বিনিয়োগকারীদের ঋণের কারণে পুঁজি শেষের পথে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজার না ঘুরলে ফোর্স সেলের মুখে পড়বে বিনিয়োগকারীরা।

এছাড়া ২০২০ সালের মে মাসে বিএসইসির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা আগে নেয়া হয়নি, তবে ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে পুঁজিবাজার ক্রমেই গতিহীন হয়ে পড়েছে। অথচ যেসব পরিবর্তন গত দুই বছরে হয়েছে, তাতে পুঁজিবাজার আরও গতিশীল হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত মার্কেটিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট রয়েছে। যার কারণে বেশিরভাগ কোম্পানি ফ্লোরে অবস্থান করলেও ক্রেতা মিলছে না। এখন পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে হবে। তারল্য বাড়লে ফ্লোর প্রাইস থেকে শেয়ারগুলো ওপরের দিকে মুভ করবে।

আর শেয়ারদর ওপরের দিকে মুভ করলেই বাজারে লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। আর লেনদেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে এবং শেয়ার দরে গতি ফিরলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা তৈরী হবে।

ড. মিজানুর রহমান তারল্য বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দিয়ে বলেন, আইসিবিসহ সরকারি ব্যাংকগুলোর বন্ড ছাড়তে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ড ছাড়লে, সেই বন্ড বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বিশেষ নির্দেশনার মাধ্যমে ক্রয় করবে। পাশাপাশি বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এই বন্ড ক্রয় করবে। আর এই বন্ড বিক্রির অর্থ প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে বাজারে তারল্য বৃদ্ধি পাবে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী বলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি খ্বুই হতাশজনক। বর্তমান পুঁজিবাজারে ভাইব্রেন্সি খুব প্রয়োজন। তা ছাড়া বাজার এভাবে চলতে পারে না। বছরের ১২ মাসের মধ্যে ১০ মাস ডিপ্রেসড থাকবে, আর দুই মাস ভালো থাকবে, আমরা উচ্ছ্বসিত থাকব, এভাবে চলে না। এছাড়া বাজারের মধ্যে এখন বড় বিনিয়োগকারীরা ওয়েট অ্যান্ড সি বা সাইডলাইনে বসে গেছেন। একটা বৈশ্বিক কারণ আর দ্বিতীয় হলো যে, এই যে কোটি কোটি টাকা ফাইন হয়, সেটা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।’

তিনি বলেন, কেউ দোষ যদি করে তাহলে শাস্তি হবে, কিন্তু যেভাবে মিডিয়ায়, পত্রিকায় আসে, সেভাবে আসলে বড় বিনিয়োগকারীরা শাই হয়ে যায়। তারা যদি বিনিয়োগ করতে ভয় পায়, তাদের জন্য প্যানিক সিচুয়েশন হয়, তাহলে বাজারের ভাইব্রেন্সি থাকবে না। তখন আমাদের মতো বিনিয়োগকারীরা বাজারকে ওইভাবে সাপোর্ট দিতে পারি না। সাপোর্ট দিতে হলে বড় বিনিয়োগকারীদের আনতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারে কোনো শেয়ার নিয়ে কারসাজি হলে মাসের পর মাস তা দেখে আরও কয়েক মাস পর ব্যবস্থা নিয়ে তা ঠেকানো যাবে না বলেও মনে করেন লালী। নিউ ইয়র্কে ডেইলি বিচার হয়। জুমের মাধ্যমে তারা অভিযুক্তকে জিজ্ঞেস করেন আপনি এটা এটা করেছেন। আপনি কি দোষী? উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে বলা হয়, ১০ হাজার ডলার পাঠিয়ে দিন। এভাবে কেসটা চলে।

‘এখন তো অনলাইন সার্ভেলেন্স। আপনি কেন সঙ্গে সঙ্গে বলছেন না, আপনি ভুল করছেন। এটা ঠিক করেন। তাহলেই তো আমি সাবধান হয়ে যাই। আমাকে ভুল করিয়ে কমিটি করবেন, ইনকোয়ারি করবেন, তারপর কোটি কোটি টাকা ফাইন করবেন।

ডিবিএর বর্তমান সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, পুঁজিবাজারে কোন অনিয়ম হলে সার্ভেলেন্সের মাধ্যমে ম্যানুপুলেশন রোধে তড়িৎ ব্যবস্থা নিলে ব্রোকারেজ হাউজটাও রক্ষা পায়, ওই লোকটাও বাঁচে আবার পুঁজিবাজারও ক্ষতির সম্মুখীন হয় না। সুতারাং কারসাজি রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া রিফর্মেশন দরকার আছে, তবে ভালো লোককে বাদ দিয়ে অযোগ্য লোককে নিয়ে এলে হবে না। আইটি সেক্টরে দুর্বলতা রয়েছে, সেটা বারবারেই দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া দুইটা স্টক এক্সচেঞ্জই চলছে ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’