শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি মেঘনা ইন্স্যুরেন্স এর পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নামমাত্র ডিভিডেন্ড ঘোষণার মাধ্যমে দায় সেরেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য তিন শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। তালিকাভূক্তির প্রথম বছরে নামমাত্র ডিভিডেন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডাররা।

বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নীরব ভূমিকায় এমন ধারা শুরু হয়েছে। ক্যাটাগরি পরিবর্তনের এমন সুযোগ শেয়ার কারসাজির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

জানা গেছে, সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর ২০২২) কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভায় এ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়েছে। মুলত ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আলোচ্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে কোম্পানির পর্ষদ। কোম্পানির ঘোষিত ডিভিডেন্ড শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ২২ ডিসেম্বর সকাল ১১.৩০ টায় ডিজিটাল প্ল‌্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হবে। লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ আগামী ২৪ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত স্বনামধন্য বেশকিছু কোম্পানি ডিভিডেন্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণার করছে। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশপাশি পুঁজিবাজারে অস্থিরতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ডিভিডেন্ড ঘোষণার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা করছে না। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষার পরিবর্তে কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে। এতে বিনিয়োগকারীরা কাঙ্ক্ষিত ডিভিডেন্ড থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের পাশে দাঁড়ায়নি। বরং রিজার্ভ অর্থ লুটপাটের পাঁয়তারা করছে কোম্পানিগুলো।

উল্লেখ্য, বছর শেষে বিনিয়োগকারীদের কত শতাংশ হারে ডিভিডেন্ড দিতে হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো বাধ্যবাধকতা নেই এ-সংক্রান্ত নীতিমালায়। এ শিথিলতার সুযোগে নামমাত্র ডিভিডেন্ড দিয়ে ক্যাটাগরি রক্ষা করছে কিছু কোম্পানি। মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের মতো এসব কোম্পানির ব্যবসার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিশেষভাবে নজরদারি করা উচিত।

তাদের মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত নামমাত্র লভ্যাংশ দেয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া। প্রসঙ্গত, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত ১০ মার্চ মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন করেছে। মেঘনা ইন্স্যুরেন্স প্রতিটি শেয়ার ১০টাকা মূল্যে ১ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১৬ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। কোম্পানিটিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু), রুলস, ২০১৫ এর রুল ৩(২)(p) থেকে অব্যাহতি দিয়ে এই অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। উত্তোলিত অর্থ দিয়ে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, সরকারি ডিপোজিট ক্রয়, স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করবে।

কোম্পানিটি ২০২১ সালের ৩১ মার্চ অনুযায়ী নিরিক্ষিত আর্থিক বিবরনী অনুযায়ী শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভি) দাঁড়িয়েছে (পুন:মূল্যায়ন ছাড়া) ১৬ দশমিক ৪১ টাকা এবং শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে (ইপিএস) ১ টাকা ৮৩ পয়সা ৩১ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত (তিন মাসের) ও বিগত পাঁচ বছরে গড়ে শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে ০.৫৬ টাকা। আইপিওতে কোম্পানিটি ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে এশিয়ান টাইগার ক্যাপিটাল পার্টনার্স ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং ইউসিবি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।