শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: এক্সপোজার লিমিট নিয়ে চলা দীর্ঘ দিনের সমস্যার অবসান হতে চলেছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে। এতে দেশের পুঁজিবাজারও ঘুরে দাঁড়াবে। বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার যোগদানের এক সপ্তাহের মধ্যেই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিনিয়োগ সীমা সমাধানের উদ্যোগ নেন।

এই লক্ষ্যে বিনিয়োগ সীমা গণনায় বাজার দরের (মার্কেট প্রাইস) পরিবর্তে ক্রয় মূল্যকে (কস্ট প্রাইস) বিবেচনায় নেওয়ার জন্য অনুমোদন বা স্পষ্টীকরণের জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই সমাধান হয়ে যাবে।

একাধিক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন পদক্ষেপ আমাদের মনে আশা জাগিয়েছে। এভাবে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে থাকলে পুঁজিবাজার অনেক ভালো হবে। সবাই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। বড় বিনিয়োগকারীর সঙ্গে ছোট বিনিয়োগকারীও তাদের ভয় কাটিয়ে বিনিয়োগে ফিরবে।’

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাবির অধ্যাপক আল আমিন বলেন, ‘আশা করি খুব দ্রুতই বিনিয়োগ সীমা নির্ধারণ হয়ে যাবে। এটা বিনিয়োগকারীদের প্রাণের দাবি। এই সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে পুঁজিবাজার এমনিতেই অনেক ভালো হবে৷’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর শেয়ারবাজার তথা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যদি সব সময় ইতিবাচক থাকে তাহলে দেশের শেয়ারবাজার এবং সামষ্টিক অর্থনীতি ভালো করবে। শেয়ারবাজার অনেক ওপরে উঠবে। তবে একটু সময় লাগবে। সবাইকে আরো ধৈর্য ধরতে হবে।’

এক্সপোজারের হিসাব গণনার নীতি পরিবর্তনের ফলে ব্যাংকগুলোর বন্ডে বিনিয়োগের ১৮ হাজার কোটি টাকা সরাসরি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আসবে। একই সঙ্গে বর্তমানে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমা গণনা করা হয় ক্রয়মূল্য অথবা বাজারমূল্যের মধ্যে যেটি বেশি, সেটি ধরে। এই পদ্ধতিতে গণনা করা ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখা হয়। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমা বাজারমূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে নির্ধারণের ফলে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ আরও বাড়বে।

সরকারের বিল ও বন্ডে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকগুলো, যা প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। এরপরই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে প্রাইমারি ডিলার নয় এমন বেসরকারি ব্যাংকগুলো। ট্রেজারি বন্ডে এসব ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে এক লাখ তিন হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিয়োগ করেছে ২৫ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।

এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করেছে এক হাজার ১৮১ কোটি টাকা, আমানত বিমা ট্রাস্টের রয়েছে ১০ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা, সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর ৩০২ কোটি টাকা, জীবনবিমা কোম্পানিগুলোর ১৮ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৮৫ কোটি টাকা। প্রভিডেন্ট, পেনশন ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডের আট হাজার ৭২৬ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ফান্ডের ২৫১ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের ২৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে।

ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের জন্য একটি বড় সুখবর। কারণ ব্যাংকগুলো বন্ডে বিশাল আকার বিনিয়োগ করেছে। এতোদিন বন্ডের বিনিয়োগ ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সীমার মধ্যে গণনা করায় পুঁজিবাজারে তাদের বিনিয়োগ কমে গিয়েছিল। এখন বন্ডের বিনিয়োগ তাদের বিনিয়োগ সীমারা বাইরে রাখায় পুঁজিবাজারে নতুন করে বিনিয়োগের বড় সুযোগ তৈরি হবে।