শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের ফলে বিনিয়োগকারীেদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ২০১০ সালের ধসের প্রায় ১২ বছর পরও স্থিতিশীল হয়নি দেশের পুঁজিবাজার। আইন সংশোধনসহ নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার পরেও এখনো একটি ভঙ্গুর বাজার হিসেবেই পারফর্ম করে আসছে। উল্টো দিন যত যাচ্ছে পরিস্থিতি ততই খারাপের দিকে যাচ্ছে। মূল্যসূচক কমছেই। লেনদেন নেমে এসেছে তলানিতে। আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গত এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন।

মাঝখানে সময় সময় অল্পদিনের জন্য বাজারে স্থিতিশীলতার একটা আবহ দেখা গেলেও তা টেকসই হয়নি। পুঁজিবাজার যেন ধীরে ধীরে রক্তশূন্য হয়ে পড়ছে। পুঁজিবাজারের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহল চরমভাবে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক, কেউই স্বস্তিতে নেই।

এদিকে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের সব স্তরের মানুষের মনে এক ধরণের আশার সঞ্চার করেছেন। যা দেশের অর্থনীতির জন্য অবিশ্বরণীয় এক মাইলফলক হিসাবে কাজ করবে। পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরাও একইভাবে আশার স্বপ্ন বুনেছিল, আজ পুঁজিবাজারে শতাব্দীর সাড়া জাগানো পদ্মা সেতুর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু তা হয়নি। আজও উল্টোপথেই হেঁটেছে দেশের পুঁজিবাজার। আমাদের পুঁজিবাজার যে কোন নিয়মে চলে না, তা আরেকবার প্রমাণ হল।

অন্যদিকে টানা ষষ্ঠ দিন কমল লেনদেন। সেটি নেমে এলো ছয় শ কোটির নিচে। গত ২৬ মের পর ২০ কর্মদিবসে কখনও এত কম লেনদেন হয়নি। এমন দিনে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে ছয়টিই লোকসানি। আবার দরপতনের মধ্য দিয়ে সপ্তাহ শুরু হলো পুঁজিবাজারে। টানা তিনটি সপ্তাহে এই প্রবণতা দেখা গেল। এদিন এমন কোনো খাত ছিল না, যেটি দরপতনের মধ্য দিয়ে যায়নি। এর মধ্যে গত দুই সপ্তাহের মতোই দুর্বল বা স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারে উল্লম্ফন দেখা যায়।

বাজার বিশ্লেষনে দেখা গেছে, আগের দুই সপ্তাহের শুরুর দিন রোববার বড় বিনিয়োগকারীরা বড় বড় সেল প্রেসার দিয়ে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছেন। আজ তৃতীয় সপ্তাহেও দেখা গেল একই দৃশ্য। শুরুতে বাজার কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতায় থাকলেও ক্রমান্বয়ে তা নেতিবাচক প্রবণতায় ফিরে আসে। এরপর পতন ধারাবাহিকভাবে গভীর হয়। সার্কিট ব্রেকারের প্রান্তসীমায় কোম্পানির সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। আতঙ্ক তৈরি হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

স্টক অ্যান্ড বন্ডের বিনিয়োগকারী কাজী মাজহার হোসেন বলেন, গত ১২ বছর ধরে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের অপেক্ষা রয়েছি। আজও একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার পায়নি। গত জানুয়ারী মাসে নতুন করে পুঁজিবাজার ২২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। বর্তমানে আমার পুঁজি এসে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ টাকায়। এখন লাভ তো দুরের কথা পুঁজি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

আইসিবি সিকিউরিটিজের ট্রেডিং এর বিনিয়োগকারী আবদুল মতিন হাওলাদার বলেন, পুঁজিবাজার চলছে সিন্ডিকেট চক্রেরা জিম্মায়। তারা চাইলে বাজার উঠে, তারা চাইলে বাজার পতন হয়। দীর্ঘ এক বছরের কাছাকাছি ধরে বাজার দরপতন হচ্ছে। বার বার নিয়ন্ত্রক সংস্থা আশার আলো দেখালে বাস্তবে আরো পুঁজি হারাচ্ছি। আমি গত ১২ বছর ধরে পুঁজিবাজারের সাথে জড়িত। কিন্তু একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার পায়নি। বর্তমান বাজারে একটি সিন্ডিকেট চক্র গড়ে উঠছে। এদের ইশারায় সব চলছে। ফলে এখন দুর্বল শেয়ারের রাজত্ব চলছে।

মশিউর সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী কেরামত হোসেন বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজার ক্যাসিনোকে হার মানিয়েছে। ভাল মৌল ভিত্তি শেয়ারের দাম না বাড়লেও দুর্বল শেয়ারের দাম ২ মাসের মাথায় ৫ গুনের বেশি বাড়ছে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিরব আচরন করছেন।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৫৯৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকার। যা এক মাস বা ২১ কার্যদিবসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে চলতি বছরের ২৬ মে আজকের চেয়ে কম অর্থাৎ ৫৩৯ কোটি ১২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছিল।

আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৬.৫৬ পয়েন্ট বা ০.৪১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩০১.০৮ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৪.০৬ পয়েন্ট বা ০.২৯ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১১.৯৯ পয়েন্ট বা ০.৫২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৭৮.৬৮ পয়েন্টে এবং ২২৮৬.৬০ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ ৩৮১ টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৪ টির বা ২৪.৬৭ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২৩০ টির বা ৬০.৩৭ শতাংশের এবং ৫৭ টির বা ১৪.৯৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৪৫.৫৮ পয়েন্ট বা ০.২৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫৭৩.২৪ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৮১ টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৮৩ টির, কমেছে ১৬২ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬ টির দর। আজ সিএসইতে ২১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।