শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পেপার খাতের কোম্পানি সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের বিরুদ্ধে অতিরঞ্জিত করে জমি পুনর্মূল্যায়ন করার অভিযোগ উঠেছে। তাই কোম্পানির দুটি সমাপ্ত হিসাব বছরের (২০২০ ও ২০২১ সালের ৩০ জুন) আর্থিক প্রতিবেদন পুনরায় বিশেষ নিরীক্ষা করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ জন্য আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে নিয়োগ দিয়েছে কমিশন।

তবে এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল বিএসইসি। আগের নির্দেশনা বাতিল করে নিরীক্ষা সংক্রান্ত নতুন কিছু বিষয় উল্লেখ করে কোম্পানির গত দুটি হিসাব বছরে আর্থিক প্রতিবেদন পুনরায় বিশেষ নিরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় নিরীক্ষককে সার্বিক সহায়তা করার জন্য সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসকে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই-সিএসই) অবহিত করা হয়েছে।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে বিশেষ নিরীক্ষা করার ক্ষমতা দেওয়া হলো। সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের ২০২০ ও ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হলো।

জমি মূল্যায়নের বিষয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি ১১.৫০ একর জমি স্বতন্ত্র মূল্যায়নের জন্য এস. এইচ. খান অ্যান্ড কেং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে নিয়োগ দেয়। পরবর্তীতে ওই বছরের ১৮ মে কোম্পানির নিয়োগকৃত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় অবস্থিত মোট ১১৫০ একর জমিটি পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে ৫১৭.৫০ কোটি টাকায়। এর আগে জমিটির পূর্ব মূল্য ছিল ১.১৩৭ কোটি টাকা।

জমিটি পুনর্মূল্যায় করার সময় প্রতি ডেসিমেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে কোম্পানিটির মোট শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটি এবং সোনালী পেপারের শেয়ারপ্রতি নিট অ্যাসেট ভ্যালুকে (এনএভি) প্রভাবিত করেছে। ফলে নতুন বিশেষ নিরীক্ষক নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় অবস্থিত সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের পূর্বোক্ত ১১.৫০ একর জমি স্বতন্ত্র মূল্যায়ন করবে। ওই স্থানে একই ধরনের জমি সরকারি মৌজা মূল্যের সঙ্গে তুলনা করে উল্লেখিত জমি মূল্যায়ন করতে হবে। আর নিরীক্ষক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট জারি করার বিএসইসির নির্দেশনা মেনে চলতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

এছাড়া কোম্পানিটি ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডস (আইএফআরএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অন অডিটিং (আইএসএ) অনুযায়ী কোম্পানির সম্পদ, দায় এবং ইক্যুইটিসহ ব্যালেন্স শিট এবং আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করেছে কি-না তা খতিয়ে দেখার জন্য বিশেষ নিরীক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হলো।

আর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বিধিমালা, ২০২০ এর বিধি ১৪, উপ-বিধি (৩) এবং (৭) এর অধীনে এক মাসের মধ্যে বিশেষ নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করা নির্দেশ দেওয়া হলো। এ নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ফি বাবদ আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে প্রদান করা হবে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর চলতি বছরের গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষা করার জন্য কমিশনের জারি করা নির্দেশনা বাতিল করা হলো।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের বিরুদ্ধে বিশেষ নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। অভিযোগ প্রমাণীত হলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৫ সালে। তবে ধারাবাহিক লোকসান, শেয়ারহোল্ডারদের নিয়মিত লভ্যাংশ না দেওয়া, কাগুজে শেয়ার ইলেকট্রনিকে রূপান্তর না করা, উৎপাদন বন্ধ থাকা ও বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করার কারণ ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর সোনালী পেপারকে মূল মার্কেট থেকে ওটিসিতে স্থানান্তর করা হয়।

পরবর্তীতে ১১ বছর পর ২০২০ সালের ২৬ জুলাই শেয়ারবাজরের মূল মার্কেটে পুনরায় লেনদেন শুরু করে কোম্পানিটি। ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ২১ কোটি ৯৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সে অনুযায়ী কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২ কোটি ১৯ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬০টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ৬৭.৫১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৭.৬৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৪.৮০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ প্রদান করেছে।