শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সোনালী পেপার এন্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই কারণে কোম্পানিটির দুই বছরের আর্থিক প্রতিবেদন তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

কোম্পানিটির ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন তদন্ত করার লক্ষ্যে আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে ইতোমধ্যে নিয়োগও দিয়েছে বিএসইসি। বুধবার এই সংক্রান্ত একটি চিঠি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং সোনালী পেপার পেপার এন্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের কাছে প্রেরণ করেছে বিএসইসি।

আগামী এক মাসের মধ্যে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে কোম্পানিটির সর্বশেষ দুই অর্থবছরের উপর বিশেষ নিরীক্ষা সম্পন্ন করে বিএসইসির কাছে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে সোনালী পেপার এন্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড এসএইচ খান অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের মাধ্যমে সম্পদ পুনঃমূল্যায়ন করেছে।

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো এলাকায় কোম্পানিটি ১ হাজার ১৫০ ডেসিমেল জমি কিনেছিল ১ কোটি ১৩ লাখ টাকায়। কিন্তু নিরীক্ষক প্রতি ডেসিমেল জমির মূল্য ৪৫ লাখ টাকায় পুনঃমূল্যায়ন করে মোট মূল্য ধরা হয়েছে ৫১৭ কোটি ৫ লাখ টাকায়। বিএসইসি মনে করছে জমির এই মূল্য নির্ধারণে বাড়াবাড়ি করা হয়েছে। এতে সোনালী পেপারের শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটি এবং সম্পদ মূল্যে প্রভাবিত করা হয়েছে।

একইভাবে, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডস (আইএফআরএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অন অডিটিং (আইএসএ) অনুযায়ী কোম্পানিটির সম্পদ, দায় এবং ইক্যুইটি সহ ব্যালেন্স শীট এবং আর্থিক বিবরণীর অন্যান্য অংশগুলি দেখার জন্য নিরীক্ষককে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, সোনালী পেপার এন্ড বোর্ড মিলস লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ২১ কোটি ৯৬ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা করতে কোম্পানিটি রাইট শেয়ার ইস্যু করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি চেয়ে বিএসইসির কাছে আবেদন করেছিল। এই লক্ষ্যে কোম্পানিটি ২টি শেয়ারের বিপরীতে ১টি রাইট শেয়ার ইস্যু করার প্রস্তাব করে বিএসইসির অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করেছে। রাইট শেয়ার মূল্য প্রস্তাব করা হয়েছে অভিহিত মূল্য ১০ টাকায়।

উল্লেখ্য, সোনালী পেপার এন্ড বোর্ড মিলস গত বছর ২৮ জুলাই ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে লেনদেন শুরু করে। সেই সময়ে কোম্পানিটি ৩০ জুন, ২০২০ অর্থবছরের জন্য শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দেখিয়েছে ১ টাকা ৬১ পয়সা। এরপরের বছর অর্থাৎ সদ্য সমাপ্ত ৩০ জুন, ২০২১ অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি ইপিএস দেখিয়েছে ৪ টাকা ৮৯ পয়সা। যা আগের বছরের চেয়ে তিন গুণের বেশি।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২১) কোম্পানিটি ইপিএস দেখিয়েছে ৬ টাকা ৬৬ পয়সা। আগের বছর যা ছিলো ৬৩ পয়সা। প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস বেড়েছে সাড়ে ১০ গুণ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’২১) কোম্পানিটি ইপিএস দেখিয়েছে ৬ টাকা ১৩ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে যা ছিলো ১ টাকা ২০ পয়সা। দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইপিএস বেড়েছে ৫ গুণের বেশি।

আর দুই প্রান্তিকে তথা ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর’২১) ইপিএস দেখিয়েছে ১১ টাকা ৬৭ পয়সা। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিলো ১ টাকা ৭২ পয়সা। আগের বছরের তুলনায় দুই প্রান্তিকে ইপিএস বেড়েছে ৯ টাকা ৯৫ পয়সা বা পৌণে ৭ গুণ। সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস ১৯৭৭ সালে নিবন্ধিত হয় এবং ১৯৮৫ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়।

২০০৬ সালে ইউনুস গ্রুপ কোম্পানিটি কিনে নেয়। কোম্পানিটির মূল ব্যবসা হল মিডিয়া, লাইনার, সিমপ্লেক্স, ডুপ্লেক্স পেপারবোর্ড এবং নিউজপ্রিন্টের কাগজ তৈরি এবং বাজারজাত করা। গত বছর ২৮ জুলাই কোম্পানিটি মূল মার্কেটে সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ ২৪৪ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন শুরু হয়। এরপর কোম্পানিটির সমাপ্ত অর্থবছরের ইপিএস প্রকাশ করে।

এতে কোম্পানিটির শেয়ারে পতন হয় এবং এক পর্যায়ে ২৭০ টাকার নিচে নেমে যায়। এই সময়ে বিএসইসি কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয় ২৭৩ টাকায়। এরপর ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ০৩ জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকে। বহু দিন লেনদেনহীন অবস্থায় থাকে।

এরপর ০৬ জুন বিএসইসি ফ্লোর প্রাইস তুলে দিলে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৯৭ টাকার নিচে নেমে যায়। তারপর শুরু হয় কোম্পানিটির মুনাফায় জোয়ার। মুনাফার জোয়ারের সঙ্গে কোম্পানিটির শেয়ার দরেও জোয়ার শুরু হয়। ৩০ ডিসেম্বর শেয়ারটির দর তোলা হয় ৯৬০ টাকায়। এরপর যারা শেয়ারটির দর আকাশে তুলেছিল, তাদের অফলোড। বাজারে তখন গুঞ্জন ছড়ানো হয় শেয়াটির দর পনের’শ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

এরপর সেল প্রেসারে কোম্পানিটির শেয়ার দর ক্রমাগত পড়তে থাকে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭১২ টাকা ৮০ পয়সায়। এর মধ্যে সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) কোম্পানিটির দ্বিতীয় প্রান্তিকের ফুলানো-ফাঁপানো ইপিএস প্রকাশ করা হয়। ফুলানো-ফাঁপানো ইপিএস দেখিয়ে সেল প্রেসার আরও বেগবান হয়। যে কারণে ফুলানো-ফাঁপানো ইপিএস প্রকাশ হওয়ার পরও কোম্পানিটির শেয়ার দরে পতন প্রবণতাই অব্যাহত থাকে।