শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: সরকারের ঘোষিত কঠোর নির্দেশনার দ্বিতীয় দিন ও সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে বড় উত্থানের মধ্যদিয়ে পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে। এদিন ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক খাতের পাশাপাশি ওষুধ ও রসায়ন, প্রকৌশল এবং বস্ত্র খাতের শেয়ারের দাম বেড়েছে। ফলে রোববারের ধসে যে ক্ষতি হয়েছিল, সোম ও মঙ্গলবার তা কাটিয়ে উঠেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মঙ্গলবার বিমা খাতের শেয়ারের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এ খাতের ধাক্কায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দামও বেড়েছে। এদিন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে ১০৩ পয়েন্ট। এর আগের দিন বেড়েছিল ৮৮ পয়েন্ট। গত রোববার হয়েছিল বড় দরপতন। ওইদিন সূচক কমে ১৮৩ পয়েন্ট। রোববার বিনিয়োগকারীদের পুঁজি উধাও হয়েছিল সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো। পুঁজিবাজারের সেই চিত্র পাল্টে সোম ও মঙ্গলবার দুদিন সূচক ১৯১ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়।

সূচক বাড়ার ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের হারানো বাজার মূলধন অর্থাৎ ১৭ হাজার ৭১১ কোটি ৭৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকার পুঁজি ফিরে পেয়েছে। দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র দেখা গেছে। মঙ্গলবার এখানে সূচক বেড়েছে ২৯৭ পয়েন্ট। এর আগের দিন (সোমবার) বেড়েছিল ২৫০ পয়েন্ট।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিজস্ব বিনিয়োগের বিপরীতে মার্জিন ঋণ প্রদানের রেশিও বৃদ্ধি সংক্রান্ত নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারের এমন উত্থান মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। গত রোববার বিকেলে বিএসইসি এ মার্জিন ঋণ প্রদানের রেশিও বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্রোকার হাউজগুলো শেয়ার কেনার পাশাপাশি ফোর্সসেল বন্ধ করে দেয়। পুঁজিবাজারের সূচকও বৃদ্ধি পায়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, মার্জিন ঋণ প্রদানের রেশিও বাড়ানোর ফলে ফোর্সসেল বন্ধ হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ক্যাপাসিটি বেড়েছে। এতে পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভয় ছিল, লকডাউন হলে পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে যাবে। সেই ভয় কেটেছে, পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সেল প্রেশারও কমেছে। এসব কারণে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী ডিএসইতে মঙ্গলবার সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু হয়। বহুজাতিক কোম্পানির পাশাপাশি ব্যাক-বিমা কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় মাত্র ২০ মিনিটে সূচক বাড়ে ৫৩ পয়েন্ট। এরপর সূচক বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ১০৩ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ২৮১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএস৩০-সূচক বেড়েছে ৪৩ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক বেড়েছে ২১ পয়েন্ট। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫০৮ কোটি ৪৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৩৬ কোটি ৬০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।

এদিন লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৪০টির, কমেছে ১৫টির। অপরিবর্তিত ছিল ৯১টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। মঙ্গলবার ডিএসইতে দাম বাড়ার শীর্ষে থাকা ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে: ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, নর্দান, বাংলাদেশ জেনারেল, ফেডারেল, কন্টিনেন্টাল, পিপলস, জনতা, গ্লোবাল, রুপালি ও রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।

লেনদেন বাড়ার শীর্ষে যথারীতি রয়েছে: বেক্সিমকো, রবি আজিয়াটা, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স, লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স, বেক্সিমকো ফার্মা, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, সামিট পাওয়ার, লাফার্জহোলসিম ও দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক আগের দিনের চেয়ে ২৯৭ পয়েন্ট বেড়ে ১৫ হাজার ২৬১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

এদিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৫০ কোটি ৮৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ২ লাখ ৩২ হাজার টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪৬টির, কমেছে ১২টির। অপরিবর্তিত রয়েছে ৩০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।