শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের অন্যতম প্রধান শর্ত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হলেও বর্তমানে এর উল্টোচিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের চেয়ে ডে-ট্রেডারের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীকে। তারা শেয়ার ম্যাচিউরড বা লেনদেনযোগ্য হলেই তা ছেড়ে দিয়ে মুনাফা করতে চাইছেন।

অন্যদিকে মুনাফা না হলে গুজবে কান দিয়ে কিংবা অন্যের কথা শুনে এক কোম্পানির শেয়ার লোকসানে ছেড়ে ঢুকে পড়ছেন অন্য কোম্পানিতে। এ কারণে বাজার তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাচ্ছেন বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

মতিঝিলের বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই বেশি দিন শেয়ার ধরে রাখতে চান না। তারা চান অল্পদিনে অধিক পুঁজি ঘরে তুলতে। সেজন্য তারা প্রতিনিয়ত পোর্টফোলিওতে পরিবর্তন আনছেন। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রতিদিনই নতুন নতুন খবরের অপেক্ষায় থাকে। কোন কোম্পানির শেয়ারদর বাড়বে এমনটি জানতে পারলেই তারা ঝুঁকে পড়েন সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে।

কোনো বাছবিচার না করেই কিনে নেন এই কোম্পানির শেয়ার। এই শেয়ার লেনদেনযোগ্য হলেই তা বিক্রি করে দেন। এরপর আরেক কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেন। এখানে সামান্য লাভ হলেই আবারও পোর্টফোলিওতে পরিবর্তন আসে। অন্যদিকে যারা এভাবে লাভ করতে পারেন না, তারাও অন্য কোম্পানিতে লাভ করবেন এমন প্রত্যাশা নিয়ে বিনিয়োগ করেন। ফলে লোকসানেই বিক্রি করে দেন আগের কোম্পানির শেয়ার।

Page-01 (29)বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, এ ধরনের অর্থাৎ লোকসানি বিনিয়োগকারীর সংখ্যাই বেশি। তাদের কম দরে শেয়ার বিক্রি করার প্রবণতায় বাজারে সেল প্রেসার বেড়ে যায়। ফলে বাজারও নিম্নমুখী হয়, যার প্রভাব পড়ে গোটা লেনদেন ও সূচকে। এভাবে কিছুদিন চলতে থাকলেই বাজার তার স্বাভাবিক গতি হারায়।

তখন সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীর জন্য এটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে বেশিরভাগ ব্রোকারেজ হাউজ বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের বদলে ডে-ট্রেডে উৎসাহিত করেন। এর প্রধান কারণ হচ্ছে এভাবে লেনদেন করলে বিনিয়োগকারীদের চেয়ে লাভবান হন হাউজ মালিকরা। কারণ ব্রোকারেজ হাউজ মালিক প্রতিটি লেনদেন থেকে দুটি করে হাওলা চার্জ পান। এতে তাদের ব্যবসা ভালো হয়।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, অনেক হাউজ থেকে বিনিয়োগকারীদের ডে-ট্রেডে উৎসাহিত করা হয়। এতে বিনিয়োগকারীদের লাভ-লোকসান যেটাই হোক না কেন, হাউজ মালিকের ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরি হয়। বিনিয়োগকারীদের এভাবে মিসগাইড করা ঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ প্রবণতা এড়াতে হলে বিনিয়োগকারীদেরই সচেতন হতে হবে। কারণ যার পুঁজি তাকেই নিরাপদে রাখতে হবে।

এদিকে বিষয়টি প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, আমি মনে করি বিনিয়োগকারীদের সবসময় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা উচিত। কেউ যদি ভালো কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করেন, তাহলে তার ভালো প্রফিটের সুযোগ থাকে।

পক্ষান্তরে যারা ডে-ট্রেডার, তাদের লাভের চেয়ে লোকসানের পাল্লাই ভারী। যদিও অল্প অল্প লোকসান তাদের তেমন চোখে পড়ে না। অন্যদিকে ডে-ট্রেডাররা জানান, নগদ যা পাও তা হাত পেতে নাও , বাকির খাতা শূন্য। তাদের মতে, কোনো শেয়ার নিয়ে মাসের পর মাস বসে থাকার কোনো অর্থ নেই। এর চেয়ে অল্প অল্প লাভ করলেও বছর শেষে লাভের পরিমাণ বেশি হয়।

এ প্রসঙ্গে মনির হোসেন নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, লেনদেনযোগ্য কোনো শেয়ারে যদি ৫০০ টাকাও লাভ হয় তবে আমি সঙ্গে সঙ্গে সেই শেয়ার বিক্রি করে দিই। কারণ অপেক্ষা করতে গেলে পরের কার্যদিবসে দর কমে গেলে লোকসানের ঝুঁকি থাকে। আমি সেটা নিতে চাই না। সেজন্য বার বারই পোর্টফোলিওতে পরিবর্তন আনতে চাই। অন্যদিকে এভাবে লেনদেন করলে এখান থেকে অনেক কোম্পানির তথ্য জানা হয়।

একই প্রসঙ্গে মুরাদ হোসেন নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, আমার মতো যাদের পুঁজি কম, তারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করে তেমন লাভবান হতে পারেন না। কারণ গুটিকয়েক কোম্পানি ছাড়া অন্য কোম্পানিগুলো থেকে প্রত্যাশিত লভ্যাংশ পাওয়া যায় না। তাছাড়া কোম্পানিগুলোর প্রকৃত লভ্যাংশও অনেক কম। সেজন্য আমাদের স্বল্পমেয়াদি লেনদেন করাই ভালো।