শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা:  আইসিবি ২ হাজার কোটি টাকার বন্ডে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার আভাস মিলবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ২ হাজার কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) থেকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। একই সঙ্গে এ বন্ডে করা বিনিয়োগ বাণিজ্যিক ব্যাংকের পুঁজিবাজার এক্সপোজারে অন্তর্ভুক্তি থেকে অব্যাহতির বিষয়েও সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিষয়টি বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন।

সম্প্রতি ২ হাজার কোটি টাকার নন-কনভার্টেবল ফিক্সড রেট সাবঅর্ডিনেটেড বন্ডের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যাণ্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। নন-কনভার্টেবল ফিক্সড রেট সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড নামে ৭ বছর মেয়াদী এ বন্ডের অনুমোদন দিয়েছে পুঁজিবাজারের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিএসইসির ৬৫১তম সভায় কোম্পানিটির এ বন্ড অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, ৭ বছর মেয়াদী এই বন্ডের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নন-কনভার্টেবল, সম্পূর্ণ অবসায়ন, ফিক্সড রেট, আনসিকিউর্ড, আনলিস্টেড সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড। বন্ডটি ৭ বছরে পূর্ণ অবসায়ন হবে। যা বিভিন্ন ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট হাউস এবং উচ্চ সম্পদশালী বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইস্যু করা হবে।

বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিআরপিডির পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আইসিবির সাত বছর মেয়াদি ২ হাজার কোটি টাকার সাব-অর্ডিনেটেড বন্ডের অর্থ স্থিতিশীল ও দক্ষ বাজার গঠন, প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি বাজারে বিনিয়োগ, উন্নত ও টেকসই বন্ড বাজার উন্নয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে।

তাই এ বন্ডে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগকে একক গ্রাহক ঋণসীমা ও পুঁজিবাজার এক্সপোজারে অন্তর্ভুক্তি থেকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করেছে আইসিবি। বন্ডে বিনিয়োগ হওয়ায় একক গ্রাহক ঋণসীমার বিষয়টি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অন্যদিকে ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোজার থেকে অব্যাহতি দিতে চাইলে এ বিষয়ে সরকারের সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে।

গভর্নরের অনুমোদনক্রমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো ওই চিঠিতে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মতি চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুসারে, চলতি বছরের এপ্রিলে আইসিবির পর্ষদ ২ হাজার কোটি টাকার সাত বছর মেয়াদি পূর্ণ অবসায়নযোগ্য সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেয়। কুপন বিয়ারিং নন-কনভার্টেবল এ বন্ডটি সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদনসাপেক্ষে ইস্যু করা হবে বলে জানানো হয়।

প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ইস্যুকৃত এ বন্ড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে না। বন্ডটির ফেস ভ্যালু ও ইস্যু ভ্যালু ইউনিটপ্রতি ১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তিবিনিয়োগকারী ন্যূনতম ১ কোটি টাকায় একটি বন্ড কিনতে পারবে।

আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সর্বনিম্ন পাঁচটি বন্ড ৫ কোটি টাকায় কিনতে পারবে। দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সাত বছর মেয়াদি এ বন্ডের সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ শতাংশ। তবে বিলম্বিত অবসায়নের ক্ষেত্রে বার্ষিক অতিরিক্ত ২ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য হবে। হস্তান্তরযোগ্য এ বন্ডের সুদ ষাণ্মাসিক ভিত্তিতে পরিশোধ করা হবে। গত জুলাইয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইসিবিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য এ বন্ড ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে।

আইসিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যমান আইন অনুসারে বন্ডে বিনিয়োগ করলে সেটি ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমার বিষয়টি মাথায় রেখে অনেক ব্যাংকই আইসিবির বন্ডে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে না।

এ কারণে ব্যাংকগুলো যাতে নির্দ্বিধায় বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে, সেজন্য আইসিবির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বন্ডে বিনিয়োগকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য না করার আবেদন করা হয়েছিল।

আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, তারল্য সংকট কাটাতে বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আকষর্ণীয় হারে সুদ নির্ধারণের কারণে আশা করছি, দ্রুত তহবিল সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। বন্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের বেশির ভাগ অর্থই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে।

আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মজিব উদ্দিন আহমেদ দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, পুঁজিবাজারকে সমর্থন দিতে আইসিবির তারল্য প্রয়োজন। এ কারণেই বন্ডটি ইস্যুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে উত্সাহিত করতে এ বন্ডে তাদের বিনিয়োগকে সব ধরনের এক্সপোজারের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেয়ার একটি আবেদন আইসিবির পক্ষ থেকে করা হয়েছিল।

আমি জেনেছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টিতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, আশা করছি, সব ধরনের অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেলে আমাদের অ্যারেঞ্জার সপ্তাহ দুই-একের মধ্যেই আইসিবির হাতে ২ হাজার কোটি টাকার তহবিল তুলে দিতে পারবে, যেখান থেকে বিনিয়োগ করে আইসিবি পুঁজিবাজারকে একটি ভালো সাপোর্ট দিতে পারবে।

প্রসঙ্গত, হঠাত্ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারি করা একক গ্রাহক ঋণসীমা-সংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে গত বছরের শেষ প্রান্তিকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আইসিবি থেকে অন্তত ২ হাজার কোটি টাকার আমানত প্রত্যাহার করে নেয়। এ অর্থ ফেরত দিতে গিয়ে আইসিবিকে তাদের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে হয়, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে। এতে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা রক্ষায় আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যায়।

তবে বর্তমান উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজার উপকৃত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যরা চীনা কনসোর্টিয়াম থেকে পাওয়া অর্থও পুঁজিবাজারে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনিয়োগ করলে বাজার আরো স্থিতিশীল হবে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।