শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে চলছে ডিভিডেন্ড ঘোষণার মৌসুম। জুন ক্লোজিং করা বেশ কিছু কোম্পানি সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন হারে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। তবে বস্ত্র খাতের ইভেন্স টেক্সটাইলের ডিভিডেন্ডে বিনিয়োগকারীদের কাল হয়ে দাঁড়ালো।

বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বস্ত্র খাতের জন্য অভিশাপ ইভেন্স টেক্সটাইল। ডিভিডেন্ড মৌসুম শুরতে হঠাৎ করে নো ডিভিডেন্ড ঘোষনায় ইভেন্স টেক্সটাইল লিমিটেডের বিরুদ্ধে লভ্যাংশ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। সমাপ্ত অর্থবছরে ১ টাকার বেশী ইপিএস হলেও কোন প্রকার ডিভিডেন্ড দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। তালিকাভুক্তির ৩ বছরের মাথায় পরিচালনা পর্ষদের এমন সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীরা চরম হতাশ হয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নানা ধরনের কটুক্তি করে তারা তাদের ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন। অনেকেই বলেছেন, ইভেন্স টেক্সটাইল পুঁজিবাজার থেকে ১৭ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। এই অর্থটা ব্যাংক থেকে নিলে কম করে হলেও ১০ শতাংশের বেশী হারে সুদ প্রদান করতে হতো তাদের।

অথচ নূন্যতম লভ্যাংশ প্রদান না করে তারা বঞ্চিত করেছে হতভাগা বিনিয়োগকারীদের। মূলত বিভিন্ন সময়ে অন্যসব কোম্পানির নেয়া হটকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমূহ কঠোর কোন পদক্ষেপ না নেয়ার কারণেই কোম্পানিগুলো এ ধরনের প্রতারণা ও হঠকারি সিদ্ধান্ত নেয়ার দু:সাহস দেখাচ্ছে বলে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ।

এদিকে ভালো মুনাফার পরও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্তে ইভেন্স টেক্সটাইল লিমিটেডের (ইটিএল) চেয়ারম্যানকে নিয়ে ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা করছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সংগঠনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজের মালিকানাধীন ইভেন্স টেক্সটাইল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৬ সালে। পারভেজের পাশাপাশি কোম্পানিটির পর্ষদে রয়েছেন তার স্ত্রী শাবনাম সেহেনাজ চৌধুরী এবং দুই ছেলে শাহ আবেদ চৌধুরী ও শাহ রিয়াদ চৌধুরী।

বস্ত্র খাতের এ কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ তালিকাভুক্তির পরপরই ২০১৫-১৬ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডাদের ১০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। এরপর ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে লভ্যাংশ হিসেবে দেয়া হয় ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার। তবে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সভায় ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ কোম্পানিটি সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) করেছে এক টাকা ছয় পয়সা।

ভালো মুনাফা করেও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্তে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের নিয়ে গঠিত ফেসবুকের একটি গ্রæপে দুই ছেলের সঙ্গে বসা আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজের একটি ছবি পোস্ট করে মো. আমজাদ হোসেন নামের একজন লিখেছেন, ‘ইটিএলের টাকা বিনিয়োগের বৈঠক।

বাহঃ কি চমৎকার আড্ডা। সাধারণ বিনিয়োগকারীর টাকা লোপাট করে এখন বাড়ি করার বৈঠক করে। এক ছেলে বলে ফিনল্যান্ডে। আরেক ছেলে বলে সুইজারল্যান্ডে। বৌ বলে লন্ডনে। আর জামাই বলে কানাডায়। এদের ধিক্কার দিন আপনার কঠিন ভাষায়। যাতে আপনাদের নিয়ে আর কেউ বাটপারি করার সাহস না পায়।’

গ্রæপটিতে হুসাইন আমজাদ নামের আর এক বিনিয়োগকারী লিখেছেন, ‘ইটিএল কিভাবে বোনাস দিবে? স্বামী, স্ত্রী, দুই সন্তান যখন কোম্পানির প্রধান। তারা কোনো কাজ না করে মাসিক চার কোটি টাকা সেলারি নেয় মিনিমাম, এ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ করে কোম্পানির টাকা দিয়ে। একটা মূলা ঝুলিয়ে বিনিয়োগকারীদের সব টাকা নিয়ে বিদেশ পাড়ি জমাচ্চে। খায়রুল জেনে শুনে কীভাবে এসব কোম্পানিকে লিস্ট করে বুঝিনে। কত টাকা খায়রুলের পকেটে গেছে, দেখার কেউ নেই।’

স্টক এসআরএসএম নামের আর একজন একটি ফেসবুক গ্রæপে পোস্ট দিয়েছেন, ‘ইটিএল ডিভিডেন্ট ঘোষণা না করে কোনোভাবেই যাতে ইজিএম (অতিরিক্ত সাধারণ সভা) অনুষ্ঠান না করতে পারে সে ব্যাপারে সবাই সতর্ক হোন। ইজিএম অনুষ্ঠানের আগে ডিভিডেন্ট ঘোষণা করাতেই হবে, আর না হলে এই বাজার সর্বনাশ হয়ে যাবে।’ এ পোস্টের নিচে ‘লাল সবুজের খেলা’ নামের একজন লিখেছেন, ‘ইজিএম অনুষ্ঠানে ওদেরকে জুতা পেটা করা হোক।’

ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রæপে ইটিএল’র লভ্যাংশ না ঘোষণার প্রতিক্রিয়াই এমন অসংখ্য মন্তব্য করছেন বিনিয়োগকারীরা। কোনো কোনো বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির চেয়ারম্যানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করছেন, যা প্রকাশের অযোগ্য। মো. মোবারক হোসেন নামের এক বিনিয়োগকারী ইটিএল’র লভ্যাংশ না দেয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন।

ইটিএল’র চেয়ারম্যান পারভেজকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি জানিয়ে লভ্যাংশ না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবিষ্যতের জন্য যা ভালো আমরা সে ধরনের সিদ্ধান্তই নিয়েছি। এ বিষয়ে এজিএম (বার্ষিক সাধারণ সভা) এ আলোচনা হবে। এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না।

বিনিয়োগকারীরা এজিএমে আপত্তি তুললে লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে আপনারা সরে আসবেন কি? এমন প্রশ্ন তিনি বলেন, দেখা যাক। এজিএমে আলোচনার ভিত্তিতে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত হবে।