শেয়ারবার্তা ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি বীচ হ্যাচারির শেয়ারের দর কোন কারন ছাড়াই হু হু করে বাড়ছে। কারসাজি চক্রের অদৃশ্য শক্তির বলে দর বেড়েই চলছে। এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তীক্ষ্ন নজরদারী প্রয়োজন।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ০.৩৫ টাকা। এদিকে লোকসানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শেয়ারদর।

ধারাবাহিক লোকসান, উৎপাদন বন্ধ থাকাসহ মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও কোনো কারণ ছাড়াই গত এ মাসের অধিকাংশ কার্যদিবসেই শেয়ারটির দর অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এ সময় শেয়ারদর বিগত একবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরেও উঠে আসে। তবে এ দর বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানির মূল্য আয়ের অনুপাত বা পিই রেশিও ১৫ থেকে ২০ পর্যন্ত অনেকটা নিরাপদ। পিই রেশিও এর উপরে যত উঠবে ততই ঝুঁকি বাড়বে। অন্যদিকে ঋণাত্বক বা নেগেটিভ পিইধারী কোম্পানিগুলোও বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

এদিকে নেগেটিভ এবং ৪০ এর উপরের পিইধারী কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য মার্জিন ঋণ প্রদানে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে কোনো কারণ ছাড়া এসব কোম্পানির দর বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই’ ১৬-মার্চ’ ১৭) মোট ৯ মাসে এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ০.৩৫ টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ০.০৯ টাকা। অর্থাৎ একবছরের তুলনায় শেয়ারপ্রতি লোকসান আরও বেড়েছে।

এদিকে তৃতীয় প্রান্তিকের শেষ তিনমাসে (জানুয়ারি-মার্চ’ ১৭) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০.১৩ টাকা, যা এর আগের বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ০.১০ টাকা। চলতি হিসাব বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকেও ধারাবাহিকভাবে লোকসান করেছে এ কোম্পানি।

এদিকে সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে লোকসান করায় ‘নো’ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে এ কোম্পানি। পাশাপাশি উৎপাদন বন্ধ থাকায় কোম্পানিটিকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেওয়া হয়েচে।

২০০২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এ কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা এবং বর্তমানে পরিশোধিত মূলধন ৪১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

জানা গেছে, কোনো কারণ ছাড়াই এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে বীচ হ্যাচারির শেয়ারদর বাড়ছে। ২৩ এপ্রিল শেয়ারটির সমাপনী দর ছিল ১০.৩০ টাকা। ১৮ জুন শেয়ারটির দর উঠে ১৮.৪০ টাকায় এবং গতকাল সমাপনী দর ছিল ১৮.৩০ টাকা। শেয়ারটির এ দর বিগত একবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আলাচ্য সময়ে শেয়ারটির দর অধিকাংশ কার্যদিবসেই বেড়েছে।

পরবর্তীতে তিন কার্যদিবস কমলেও দুই কার্যদিবস ধরে শেয়ারদর আবার বাড়ছে। সর্বশেষ কার্যদিবসে শেয়ারপ্রতি দর  ৫.১৪ শতাংশ বা ০.৯০ টাকা বেড়েছে এবং সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে  ১৮.৪০ টাকায়। বর্তমান বাজারদর ও অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী এর মূল্য আয় অনুপাত ঋণাত্বক বা নেগেটিভ এবং যা বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

এদিকে শেয়ারটির দর বাড়াকে অস্বাভাবিক মনে করে এর পেছনে অপ্রকাশিত কোনো তথ্য আছে কিনা তা জানতে চেয়ে গত এ মাসের মধ্যে দু’বার কোম্পানিকে শোকজ করে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। এর জবাবে প্রতিবারই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানায়, এ দর বাড়ার পেছনে মূল্য সংবেদনশীল কোনো তথ্য নেই। অর্থাৎ কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ছে লোকসানি এ কোম্পানির শেয়ারদর।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে অনেক লোকসানি কোম্পানি আছে, যেগুলোর শেয়ারদর কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই মাঝেমধ্যে অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে দেখা যায়, যার কোনো যৌক্তিকতা নেই। মূলত কারসাজি চক্রের সক্রিয়তায় এমন হয়ে থাকে। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিৎ কোনো কোম্পানির শেয়ারদর আস্বাভাবিক বাড়লে তার কারণ খতিয়ে দেখে তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নেয়া। আর বিনিয়োগকারীদের উচিৎ হবে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানির মুনাফা, শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস এবং বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া।