শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বুক-বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসছে সেবা ও আবাসন খাতের কোম্পানি শামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেট লিমিটেড। এজন্য আগামী ১৯ এপ্রিল রোড-শো’র আয়োজন করেছে কোম্পানিটি।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্দেশ্য ও শামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে কোম্পানিটির কো-অর্ডিনেটর (এইচআর অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং) সৈয়দ নুরুল হাসান শাহান  বলেন, ‘দেশের সেবা ও আবাসন খাতের এক বিশ্বস্ত নাম শামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেট লিমিটেড (এসএআরই)। সেবা ও আবাসন খাতের কোম্পানি গুলোর মধ্যে শামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেট লিমিটেড (এসএআরই) শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান।’

তিনি বলেন, ‘উত্তম আবাসন উত্তম জীবন’ শ্লোগান নিয়ে শামসুল আলামিন গ্রুপের এ কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করে ২০০৩ সালে। সুনামের সঙ্গে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে এসএআরই। কাজ করছে ১৬ কোটি মানুষের আবাসন চাহিদা পুরনে।

নুরুল হাসান শাহান জানান, ‘শহর এবং উপ-শহরের জনগনের আবাসন সমস্যা দুর করার লক্ষ্যে কাজ করছে কোম্পানিটি। বর্তমানে নগরীতে উন্নত মানের আবাসন সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। এ কোম্পানির আবাসিক এবং বানিজ্যিক প্রকল্পগুলো নগরীর সবচেয়ে সুবিধা জনক জায়গায় অবস্থান করছে। যা অন্যদের চেয়েও ভিন্নতা আনয়ন করে।’

কোম্পানিটির উর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা আরও জানান, ‘শামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেট লিমিটেড সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সাধারন মানুষদের সামর্থ্যরে মধ্যে সর্ব্বোচ গুনগত মানের আবাসন ব্যবস্থা করে থাকে। আমাদের প্রকল্পগুলোর বর্তমান অবস্থানে জনগনের আস্থা অর্জন করেছে। পাশাপাশি আমাদের মার্কেটিং কার্যক্রমের কারনে বর্তমানে আমাদের ব্যান্ড সারাদেশে পরিচিতি লাভ করেছে। আমরা পুঁজিবাজারে আসার অপেক্ষায় রয়েছি। পুঁজিবাজারে আসার মাধ্যমে আমাদের কার্যক্রম আরো বিস্তৃতি লাভ করবো।’

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘বর্তমান পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করা। এক্ষেত্রে শামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে শতভাগ ভূমিকা রাখবে।’

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, এসএআরই’র চলমান বানিজ্যিক ও আবাসিক প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে আলামিন আপন হাইট (শ্যামলী, ঢাকা), আলামিন রজনীগন্ধা (ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট), আলামিন স্নো-ড্রপ, (বসুন্ধরা, ঢাকা), আলামিন আনগুর (গুলশান-১, ঢাকা), আলামিন তন্ময় (বারিধারা মডেল টাউন), আলামিন মেট্রো সেন্টার (ফকিরাপুল, ঢাকা), আলামিন আজমল ফেলিসিটা (মিরপুর, ঢাকা), আলামিন আইকন সেন্টার (প্রগতিসরণী, ঢাকা)।

এসএআরই’র শেষ হওয়া বানিজ্যিক ও আবাসিক প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- আলামিন রয়েল ভিলা (উত্তরা-১৩ ঢাকা), আলামিন স্পেøন্ডর (গুলশান, ঢাকা), আলামিন অরচিড (উত্তরা-১৩, ঢাকা), আলামিন চন্দ্রিমা (মাটিকাটা, ঢাকা), আলামিন লিজেন্ড (নিকেতন, ঢাকা), আলামিন গ্র্যান্ডিয়ার (বনানী, ঢাকা), আলামিন এজে টাওয়া (কারওয়ান বাজার, ঢাকা), আলামিন প্যারাগন (উত্তরা, ঢাকা), আলামিন মিলেনিয়াম টাওয়ার (কাকরাইল, ঢাকা), আলামিন সুপার নোভা (বনানী, ঢাকা)।

এদিকে, শামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেটের তালিকাভুক্তির এ প্রক্রিয়ায় ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছে অ্যালায়েন্স ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড। কোম্পানিটির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাপকালে অ্যালায়েন্স ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম (এফসিএমএ) বলেন, ‘শামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেট একটি ফান্ডামেন্টাল কোম্পানি। এ জাতীয় কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসলে বাজার শক্তিশালী হবে। আর তাই শামসুল আলামিন রিয়েল এস্টেট লিমিটেডকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে আমরা কাজ করছি।’

নজরুল ইসলাম জানান, ‘কোম্পানিটির বর্তমানে ১৯টি প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। এর মধ্যে ৬ টির কাজ চলছে। বাকী প্রকল্পগুলোর জন্য পুঁজি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আইপিওতে যেতে চায় কোম্পানিটি। এর বাইরে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ২০ কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা আছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে আইপিও অনুমোদন হলে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইন অনুযায়ী বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আর্থিক প্রতিবেদন তুলে ধরার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ১৯ এপ্রিল রোড শো অনুষ্ঠিত হবে।’

জানা গেছে, আগামী ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে কোম্পানিটির রোড শো আয়োজন করা হয়েছে। এদিন পুঁজিবাজারের ইলিজিবল ইনভেষ্টরদের উপস্থিতিতে রোড শো’তে আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে।

কোম্পানির এই রোড শো’তে অংশ নেবে মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যান্ড পোর্টফোলিও ম্যানেজার, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, স্টক ডিলারস, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি, অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ম্যানেজার, অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড, রিকগনাইজড পেনশন অ্যান্ড প্রভিডেন্ড ফান্ড এবং কমিশনের অনুমোদিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।

কোম্পানির প্রসপেক্টাসের তথ্য বিশ্লেষনে দেখা যায়, আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ৮০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। উত্তোলিত এ অর্থে কোম্পানিটি ব্যাংক ঋণ, তাদের চলমান প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং আইপিও প্রক্রিয়ায় খরচ করবে। বর্তমানে কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩৫ কোটি টাকা।

গত ৫ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষনে দেখা যায়, ৩০ জুন, ২০১৬ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ৪২.৪২ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১.৯০ টাকা। এর আগের সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) ছিল ৪০.৫২ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ০.২৫ টাকা।

এছাড়া ২০১৪ সালে কোম্পানির ইপিএস ছিল ২.৮৯ টাকা এবং এনএভি ছিল ৪০.৫২ টাকা। ২০১৩ সালে ইপিএস ছিল ৩.১৮ টাকা এবং এনএভি ছিল ৩৯.৫৪ টাকা। আর ২০১২ সালে ইপিএস ছিল ২.৯৬ টাকা এবং এনএভি ছিল ৩৬.৩৬ টাকা। এদিকে, গত ছয় মাসে অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১.৫১ টাকা এবং শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ৪৩.৯৩ টাকা। কোম্পানিটির রেজিস্ট্রার টু দ্য ইস্যুর দায়িত্বে রয়েছে ব্যানকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।