profitশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: মুনাফার আশায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগ করেন বিনিয়োগকারীরা। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিংবা বাজার বিশ্লেষকরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোকে বেছে নেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

বিশে^র উন্নত দেশগুলোর পুঁজিবাজারেও মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করে সবচেয়ে বেশি লাভবান হন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার বিপরীত দৃশ্য দেখা যায়।

স্বল্পমূলধনী কিংবা লোকসানি কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিক হারে বাড়া যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। গত সপ্তাহের লেনদেনে এই তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছে সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ লিমিটেড। এই কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীরা এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিনিয়োগের ২৭ শতাংশ মুনাফা পেয়েছেন। অর্থ্যাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে এ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ২৬.৯৮ শতাংশ।

তবে সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ার দর বাড়ার শীর্ষ পাঁচ’র তালিকায় এ ক্যাটাগরির কোম্পানিও রয়েছে। এরমধ্যে বারাকা পাওয়ারের শেয়ার দর ২৬.৪০ শতাংশ, ইবনে সিনার ২৩.২৫ শতাংশ এবং সিটি ব্যাংকের ২০.৪৬ শতাংশ বেড়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সপ্তাহের শুরুতে কোম্পানিটির ৫৩ টাকায়। আর মাত্র পাঁচ কর্যদিবসের ব্যবধানে গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে (বৃহস্পতিবার) শেয়ার দর ৬৭.৩০ টাকায় ওঠে আসে। শতাংশ হিসেবে যা ২৬.৯৮ শতাংশ। আর বছরের ব্যবধানে বেড়েছে দ্বিগুণ।
অথচ কোম্পানিটি জেড ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত। এর পূঞ্জীভুত লোকসানের পরিমাণ ৫২ লাখ টাকা। এমনকি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেও কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসানের পরিমাণ ০.৩১ টাকা।

প্রসঙ্গত, জেড ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটি ১৯৮৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির পূঞ্জীভুত লোকসানের পরিমাণ ৫২ লাখ টাকা। এ পরিস্থিতিতে লোকসানি এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর অস্বাভাবিক ভাবে বাড়াকে বাজারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, যেখানে ব্যাংকিং খাতসহ অধিকাংশ মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ার দরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হচ্ছে না, সেখানে বর্তমান বাজারে কয়েকটি স্বল্পমূলধনী কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। আর স্বল্পমূলধনী এ কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবিক দর বাড়ার পেছনে কারসাজি চক্রের হাত রয়েছে বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু দুই স্টক এক্সচেঞ্জসহ বিএসইসির সার্ভিল্যান্স বিভাগ এর কোনো প্রতিকার করতে পারে নি।

কারণ কারসাজি চক্র বাজার ম্যানুপুলেটিংয়ের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যবহার করছে। অর্থাৎ কারসাজি চক্রের প্রচার করা গুজব নামক পাতানো ফাঁদে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পা দিয়ে তাদের পথ পরিস্কার করে নিচ্ছে। আর এ অবস্থা থেকে উত্তোরনের জন্য যেকোন শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সেই শেয়ারের সামগ্রিক বিষয়াদির পর্যবেক্ষন করা উচিত বলে তার মনে করছেন। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বাজার সম্পর্কে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তারা।

অবশ্য গত সপ্তাহে বিএসইসি ও ডিএসইর পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিনিয়োগকারীদের সচেতন বিনিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওই সময় বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেছিলেন, বর্তমান বাজার ঊর্ধ্বমুখী। আর এই ঊর্ধ্বমুখী বাজারে বিনিয়োগকারীদের সাবধানের সঙ্গে লেনদেন করতে হবে।

দেখা গেছে, স্বল্পমূলধনী কিছু কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিকহারে বেড়ে চলেছে। সেজন্য আমরা সবাইকে সতর্কতার সাথে লেনদেনের অনুরোধ জানিয়েছি। আমাদের মনে হচ্ছে বাজার ওভার ভ্যালুয়েডে হয়ে যাচ্ছে। এই মুহুর্তে বিনিয়োগকারী এবং হাউজগুলোকে সতর্ক অবস্থানে যাওয়া দরকার। আমরা বাজারের স্থায়ী স্থীতিশীলতা চাই। এজন্য এই মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদেরও সতর্ক অবস্থানে যাওয়া উচিত।

ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান জানান, শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য বিনিয়োগকারীদের সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। এই সচেতনতা বাজারের উন্নয়নের পূর্বশর্ত। এক্ষেত্রে কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে ওই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস), শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস), মূল্য-আয় অনুপাত (পিই) ও উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফখর উদ্দীন আলী আহমেদ বলেন, বিনিয়োগকারীরা বাজার সম্পর্কে সচেতন না হলে শুধুমাত্র সার্ভিল্যান্স বিভাগের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রন সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে কতিপয় স্বল্পমূলধনী কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।

এখন বিনিয়োগকারীদের এটা বুঝতে হবে যে, যেখানে মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ার দরও একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থেকে বাড়ছে; সেখানে কিভাবে স্বল্পমূলধনী একটি কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ছে? আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সেটা না বুঝে যদি গুজবে কান দিয়ে ওই শেয়ারে হুমড়ি খেয়ে বিনিয়োগ করে তাহলে বাজারে ম্যানুপুলেটিং বাড়বে। এতে বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে না।