dse-up-dowenমো: সাজিদ খান, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের শেয়ারের দিকে ঝোঁক এখন বিনিয়োগকারীদের। দীর্ঘ সময় পর বাজার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক আচরন করায় ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ার হিসেবে পরিচিত জ্বালানী খাতের শেয়ারের দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। ব্যবসায়ে বিনিয়োগের অন্যমত শর্ত মুনাফা। কিন্তু লোকসানের হিসাবও মাথায় রাখতে হয়।

২০১৬ সমাপ্ত হিসাব বছরে দেশের পুঁজিবাজারের বছরের শুরু থেকে লেনদেন মন্দা থাকলেও বছর শেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। ২০১৬ হিসাব বছরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে সর্বোচ্চ মুনাফা সংগ্রহ করেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের কিছু শেয়ারে।

তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের কোম্পানিগুলোতে থেকে সর্বোচ্চ মুনাফা সংগ্রহ করলেও সর্বোচ্চ দরে যারা বিনিয়োগ করেছে তারা কিন্তু এখনও লোকসান গুনছে।

তাছাড়া জ্বালানী খাতের কয়েকটি শেয়ারের দর অনেক নিচে দামের পড়ে থাকায় এসব শেয়ারের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। দীর্ঘদিন নেতিবাচক গন্ডির মধ্যে আটকে থাকা বাজার থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্জিত অভিজ্ঞতার ফল এটি।

কারণ, পুঁজিবাজারে স্মরনকালের ভয়াবহ ধসের আগে দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ার কিনেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। তবে ধসের পর দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে পুঁজিবাজার। বিশেষ করে সরকার পুঁজিবাজারের প্রতি মনোযোগী হওয়ায় পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে।

ধীরে ধীরে সব শ্রেনীর বিনিয়োগকারী বাজারমুখী হতে শুরু করেছেন। তবে পূর্বের মতো এবার দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারে এড়িয়ে চলছেন বিনিয়োগকারীরা। এর পরিবর্তে মৌল ভিত্তি শেয়ারগুলোর প্রতি বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছেন বিনিয়োগকারীরা।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ জ্বালানী খাতের কোম্পানিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা জ¦ালানী খাতের শেয়ারে ঝুঁকছেন।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজারের সাথে সম্পৃক্ত বিনিয়োগকারীরা সাধারণ দুই ধরনের মুনাফা সংগ্রহ করতে পারে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ক্যাপিট্যাল গেইনিং, অন্যটি হচ্চে ডিভিডেন্ড গেইনিং। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক অবস্থা ইতিবাচক থাকলে বছর শেষে প্রত্যেক বিনিয়োগকারীরই ডিভিডেন্ড গেইনিং করতে পারে।

কিন্তু লেনদেন মন্দার কারনে অনেক ক্ষেত্রেই ক্যাপিট্যাল গেইনিং সম্ভব হয় না। এদিকে দীর্ঘ মন্দার পর বাজার স্থিতিশীলতায় ২০১৬ সালের জুনের পর থেকে লেনদেনের ইতিবাচক প্রবণতায় ১২ জানুয়ারি শেষে বিগত এক বছরের ব্যবধানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের ৭৩.৬৮ শতাংশই কোম্পানি থেকেই ক্যাপিট্যাল গেইনিং করতে পেরেছে। যা শতাংশের হারে ২০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩০৪ শতাংশ।

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের ১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিগত এক বছরের ব্যবধানে দর বেড়েছে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের দর কমেছে ৫টি প্রতিষ্ঠানের। এসময় সর্বোচ্চ দর বেড়েছে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টসের। এসময় কোম্পানিটির শেয়ার ৩০৬.৯ টাকা থেকে বেড়ে ১২৪০.২ টাকা হয়। অর্থাৎ এসময় কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯৩৩.৩ টাকা।

ডিএসই সুত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের ১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিগত এক বছরের ব্যবধানে দর বেড়েছে ১৪টির আর দর কমেছে ৫টি কোম্পানির। দর বাড়া কোম্পানিগুলো হলো: ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, ডেসকো, জিবিবি পাওয়ার, যমুনা অয়েল, লিনডে বিডি, মবিল যমুনা, পদ্মা অয়েল, শাহজিবাজার পাওয়ার, ডোরিন পাওয়ার, বিডি ওয়েল্ডিং, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল,

খুলনা পাওয়ার, সামিট পাওয়ার এবং ইউনাইটেড পাওয়ার। উল্লেখিত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ দর বেড়েছে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টসের। আলোচিত কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩০৬.৯ টাকা থেকে বেড়ে ১২৪০.২ টাকা হয়। অর্থাৎ এ সময় কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯৩৩.৩ টাকা বা ৩০৪.১০ শতাংশ।

দর বৃদ্ধিতে থাকা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে ডেসকোর শেয়ার দর ৫১.৩ টাকা থেকে বেড়ে ৫৭.২ টাকায় লেনদেন হয়। অর্থাৎ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ৫.৯০ টাকা বা ১১.৫০ শতাংশ। জিবিবি পাওয়ারের শেয়ার দর ১৮.৭ টাকা থেকে বেড়ে ২৩.৭ টাকা হয়। সে হিসেবে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ৫ টাকা বা ২৬.৭৩ শতাংশ।

যমুনা অয়েলের শেয়ার দর ১৫৩.৪ টাকা থেকে বেড়ে ১৯৩.১ টাকায় লেনদেন হয়। সে হিসেবে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ৩৯.৭০ টাকা বা ২৫.৮৮ শতাংশ। লিনডে বিডির শেয়ার দর ১১২৬ টাকা থেকে বেড়ে ১৩২৭.৩ টাকায় লেনদেন হয়। সে হিসেবে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ২০১.৩০ টাকা বা ১৭.৮৭ শতাংশ।

মবিল যমুনার শেয়ার  দর ৯৫.২ টাকা থেকে বেড়ে ১২৩.৯ টাকায় লেনদেন হয়। সে হিসেবে কোম্পানির শেয়ার দর ২৮.৭০ টাকা বা ৩০.১৪ শতাংশ বেড়েছে। মেঘনা পেট্রোলিয়ামের শেয়ার দর ১৪৬.৪০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮৪.৬ টাকায় লেনদেন হয়। সে হিসেবে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ৩৮.২০ টাকা বা ২৬.০৯ শতাংশ।

পদ্মা অয়েলের শেয়ার দর ১৭৮.৭ টাকা থেকে ১৯২.৫ টাকায় লেনেদেন হয়। সে হিসেবে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ১৩.৮০ টাকা বা ৭.৭২ শতাংশ। পাওয়ার গ্রিডের শেয়ার দর ৫১.৩ টাকা থেকে ৫৭ টাকায় লেনদেন হয়। সে হিসেবে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ৫.৭০ টাকা বা ১১.১১ শতাংশ।
শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানির শেয়ার দর ১২২.৭ টাকা থেকে ১৪৮.২ টাকায় লেনদেন হয়। সে হিসেবে কোম্পানির শেয়ার দর ২৫.৫০ টাকা বা ২০.৭৮ শতাংশ বেড়েছে। আর তিতাস গ্যাসের শেয়ার দর ৪৯.৩ টাকা থেকে ৫১.৬ টাকায় লেনদেন হয়। সে হিসেবে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ২.৩০ টাকা বা ৪.৬৬ শতাংশ।

এদিকে, ডোরিন পাওয়ারের শেয়ার দর ৮৩.৭০ টাকা থেকে ১১৩.৩০ টাকায় লেনদেন হয়। সে হিসেবে কোম্পানরি শেয়ার দর  ২৯.৬০ টাকা বা ৩৫.৩৬ শতাংশ বেড়েছে। উল্লেখ্য, ডোরিন পাওয়ার গত বছরের ৬ এপ্রিল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

অন্যদিকে, বিডি ওয়েল্ডিংয়ের শেয়ার দর ২০.৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১২.৮০ টাকায় লেনদেন হয়। সে হিসেবে কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ৮ টাকা বা ৩৮.৪৬ শতাংশ। সিভিও পেট্টোকেমিক্যালের ৩১৮.৮০ টাকা থেকে ২১১.৪০ টাকায় লেনদেন হয়। সে হিসেবে কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ১০৭.৪০ টাকা বা ৩৩.৬৮ শতাংশ।

খুলনা পাওয়ারের শেয়ার দর ৭৭.৫০ টাকা থেকে কমে ৬৬ টাকায় লেনদেন হয়। সে হিসেবে কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ১১.৫০ টাকা বা ১৪.৮৩ শতাংশ। সামিট পাওয়ারের শেয়ার দর ৪১.৪ টাকা থেকে ৪১ টাকায় লেনদেন হয়। সে হিসেবে কোম্পানির শেয়ার দর ০.৪০ টাকা বা ০.৯৬ শতাংশ কমেছে। আর ইউনাইটেড পাওয়ারের শেয়ার দর ১৬১.৬০ টাকা থেকে ১৫০.৪০ টাকায় লেনদেন হয়।  সে হিসেবে কোম্পানির শেয়ার দর ১১.২০ টাকা বা ৬.৯৩ শতাংশ কমেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেক্সড ডিপোজিট করে ব্যাংক থেকে বর্তমানে ৮ থেকে ১০ শতাংশ মুনাফা করা সম্ভব। তবে পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে তার সীমা থাকে না। এজন্য বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই কোম্পানির মৌলভিত্তি ব্যবসায়িক অবস্থা যাচাই করে বিনিয়োগ করা উচিত।

তারা বলেন, আপনি ইচ্ছে করলেই ব্যাংকে অন্ধ বিশ্বাসে টাকা রেখে বছর শেষে ৮ থেকে ১০ শতাংশ মুনাফা করতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি একটু কষ্ট করে কোন কোম্পানির বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে খোজ নিয়ে বিনিয়োগ করে সেক্ষেত্রে এ মুনাফা বিনিয়োগের হাজারগুন অতিক্রম করতে পারে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাজারে লেনদেন এবং সূচক অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি হতে শুরু করছে। তবে বাজারে কিছু নন ফান্ডামেন্টাল শেয়ারের মুভমেন্ট বাড়ছে। এতে বাজারে দীর্ঘদিন ধরে যারা লোকসানের মধ্যে রয়েছেন তারা হতাশ হয়ে উঠছেন।

এ পরিস্থিতিতে অনেকে লোকসানে থাকা শেয়ারের দাম না বাড়ার কারণে সেগুলো হাতছাড়া করে দিচ্ছেন। বিশ্লেষকরা আরো জানান, কোনো কারণে নন ফান্ডামেন্টাল শেয়ারের দর যদি পড়ে যায় তবে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর লোকসান হয়।

কারণ, অধিকাংশ বিনিয়োগকারী নন-ফান্ডামেন্টাল শেয়ারের দ্রুত মুনাফার আশায় বিনিয়োগ করেন। তাই বর্তমান বাজার সম্পর্কে সব ধরণের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের লেনদেনে অংশগ্রহণ করা উচিত বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।