fu-wang-lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বিদ্যমান সিকিউরিটিজ আইনের কোন তোয়াক্কাই করছে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিরামিকস খাতের কোম্পানি ফুয়াং সিরামিকসের পরিচালনা পর্ষদ। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নির্দেশনা ও মহামান্য আদালতের রায় থাকা সত্বেও এ প্রতিষ্ঠানটি উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে সম্মিলিত ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছে।

পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে মুনাফা থাকা সত্বেও টানা স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে আসছে। এতে কোম্পানির পরিচালকরা লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ একদিকে স্টক ডিভিডেন্ড প্রদানের কারণে থিউরিটিক্যাল অ্যাডজাস্টমেন্টে শেয়ার দর কমছে। অন্যদিকে পরিচালকরা তাদের প্রাপ্ত বোনাস শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে গুজে দিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করছেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ৩১ অক্টোবর ২০১৬ শেষে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ১৯.৯৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। অথচ বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী কোম্পানির পরিচালকদের হাতে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এছাড়া কোম্পানিটি বছরের পর বছর মুনাফায় থাকার পরও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষনা করে আসছে। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্যানুযায়ী, ২০০০ সালে ২০ শতাংশ, ২০০৯  থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১০ শতাংশ করে স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে আসছে। এতে কোম্পানির মূলধনের পরিমাণ বাড়লেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানিই সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করে। এতে শেয়ার সংখ্যা বাড়লেও থিওরিটিক্যাল অ্যাডজাস্টমেন্টের কারণে শেয়ার দর কমে যায়।

পরিণতিতে কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের মুনাফার হাড়ি বোঝাই হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা স্বল্প সময়ে মুনাফা লাভের উদ্দেশে বিনিয়োগ করে থাকেন।

ভঁ-ধিহম-১-ুবধৎঅবশ্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে পর্যাপ্ত অলস অর্থ না থাকাটাও এর অন্যতম কারণ। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, ‘ক’ নামক একটি কোম্পানির ২০ হাজার শেয়ার রয়েছে।

বর্তমান মূল্য ১০০ টাকা ধরে কোম্পানির মোট শেয়ারের মূল্য ২০ লাখ টাকা। এখন যদি কোম্পানিটি সমাপ্ত বছরে ২০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে তাহলে কোম্পানিটির শেয়ার বেড়ে ২২ হাজারে দাঁড়াবে।

আর কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা বাড়ায় থিওরিটিক্যাল অ্যাডজাস্টমেন্টে ওই শেয়ার দর ৯০.৯০ টাকায় (২০ লাখ টাকাকে ২২ হাজার শেয়ার দিয়ে ভাগ করা হয়েছে) নেমে আসবে। এতে ওই সময়ে যেসব বিনিয়োগকারীর হাতে শেয়ার থাকবে- তারা কিছুটা লাভবান হলেও কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা অধিক লাভবান হবেন।

কারণ কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করায় একদিকে তাদের হাতে থাকা শেয়ারের পরিমাণ বাড়ছে, অন্যদিকে যেসব বিনিয়োগকারী ডিভিডেন্ড পাওয়ার পর শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন সেসব শেয়ার আগের চেয়ে ১০ টাকা কমে আবার কিনে নিচ্ছেন।

এছাড়া স্টক ডিভিডেন্ডের কারণে প্রতিবছরই শেয়ারের পরিমাণ বাড়লেও কোম্পানির মুনাফা বাড়ছে না। এতে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) কমার পাশাপাশি কমছে ডিভিডেন্ডের পরিমাণও।

আর ইপিএস কমায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও ওই শেয়ারে অনাগ্রহ দেখায়। পরিণতিতে লেনদেনে ভাটায় শেয়ার দর কমে থাকে। সার্বিক দিক বিবেচনায় নিলে স্টক ডিভিডেন্ডের কারণে সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়- বলেও মনে করেন তারা।

তানভীর আহম্মেদ নামে এক অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী অভিযোগ করে বলেন, ফুয়াং সিরামিকস কোম্পানি নিজেদের তৈরি করা বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণের দায় ঘোচাতে বা ব্যবসা বাড়াতে বাজার থেকে টাকা নিয়েছে।

অথচ কোম্পানিতে নগদ টাকা বিনিয়োগ করেও বিনিয়োগকারীদের স্টক ডিভিডেন্ডের নামে কাগজ ছাড়া কিছুই মেলেনি। কোম্পানিটি যদি ব্যাংক থেকে ঋণ নিতো তাহলে বছর শেষে সুদের টাকা পুরো হিসেব কষেই দিতে হতো।

কিন্তু পুঁজিবাজারকে তারা টাকার খনি মনে করে যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে। এখানে তাদেরকে নগদ টাকা পরিশোধের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। একেতো শুধুই স্টক ডিভিডেন্ড তারওপর পরিচালকদের সেই বোনাস শেয়ার বিক্রি মনে হচ্ছে পুরো লুটতরাজের কারখানা এই শেয়ারবাজার। এগুলোর ভবিষ্যত কি?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিকিউরিটিজ হাউজের এক কর্মকর্তা বলেন, একটি কোম্পানি যখন কোনো ধরণের এক্সপানশন ছাড়াই শুধু স্টক ডিভিডেন্ড দিতে থাকে তখন সেগুলোতে বিনিয়োগ না করাই ভাল। তার ওপর যদি পরিচালকদের বোনাস বিক্রির ঘোষণা থাকে তাইলে তো আর কথাই নেই।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ড. আবু আহমেদ বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা পরিকল্পিতভাবে শেয়ার দর প্রভাবিত করার জন্য এমন সামঞ্জস্যহীন ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। তাই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনার পাশাপাশি কোম্পানির ব্যবসায়ের প্রত্যেকটি ইস্যু (যেমন- পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এলসির তথ্য) সঠিকভাবে যাচাই করা উচিত। সুত্র: দৈনিক দেশ প্রতিক্ষণ