nordan-jutশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: এক প্রান্তিকে, অর্থাৎ তিন মাস শেষে প্রতি শেয়ারে লোকসান ৩ টাকা ৬ পয়সা। বছর শেষেও আগের বছরের চেয়ে আয় কমেছে। তাতে কী? শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দামের ঊর্ধ্বগতি দেখে বোঝার উপায় নেই কোম্পানিটির আয় ঋণাত্মক।

উল্টো গত বৃহস্পতিবার এক দিনে দাম বেড়েছে ২০ টাকা বা ১০ শতাংশ। এই মূল্যবৃদ্ধি দেখে যেকোনো বিনিয়োগকারীর আগ্রহ তৈরি হতে পারে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি। এতক্ষণ বলছিলাম নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির কথা। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার কোম্পানিটি ছিল মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে।

শেয়ারের মালিকানা নির্ধারণের জন্য ঘোষিত রেকর্ড ডেটের কারণে গত বুধবার কোম্পানিটির লেনদেন বন্ধ ছিল। রেকর্ড ডেটে লেনদেন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় এটির লেনদেন শুরু হয়। আর এদিনই প্রতিটি শেয়ারের দাম ২০ টাকা বেড়ে উঠে যায় ২১৯ টাকায়।

এবার তাহলে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্যের বিপরীতে মিলিয়ে দেখা যাক আর্থিক কিছু তথ্য। ১৫ নভেম্বর ডিএসইর ওয়েবসাইটে নর্দান জুটের চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়কালে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস ঋণাত্মক। প্রতি শেয়ারে কোম্পানিটির লোকসান ৩ টাকা ৬ পয়সা। অথচ আগের বছর একই সময়ে কোম্পানিটির প্রতি শেয়ারে আয় ছিল ১ টাকা ৩ পয়সা।

এক বছরের ব্যবধানে এসে কেন লোকসানে চলে গেল কোম্পানিটি? কোম্পানিটির নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রান্তিক আর্থিক প্রতিবেদনের বিস্তারিত পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বাড়লেও বিক্রি ও আর্থিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানে চলে যেতে হয়েছে।

আর এ খরচ বেড়েছে বিক্রি বাবদ ও অন্যান্য আর্থিক দায় মেটাতে গিয়ে।
চলতি বছরের জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছর শেষে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ঘোষিত এ লভ্যাংশের প্রকৃত দাবিদার নির্ধারণের জন্য গত বুধবার রেকর্ড ডেটে কোম্পানিটির লেনদেন বন্ধ ছিল।

গত জুনের আর্থিক বছর শেষে নর্দান জুট নিরীক্ষিত যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে বছর শেষে ইপিএস দাঁড়ায় ৭২ পয়সা। ২০১৫ সালের জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছর শেষে যা ছিল ৩ টাকা ৮ পয়সা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে প্রতি শেয়ারে আয় ২ টাকা ৩৬ পয়সা কমেছে।

এর ফলে কোম্পানিটির মূল্য আয়ের অনুপাত বা পিই রেশিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১-এ। বিশেষজ্ঞরা ২০-এর বেশি পিই রেশিওর কোম্পানিকে বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিহিত করে থাকেন। সেখানে ৭১ পিই রেশিও শেয়ারের দামের উল্লম্ফন দেখে বিনিয়োগকারীরা তাতে আগ্রহী হবেন কি না, তা বিনিয়োগকারীর নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়।

কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৯৪ সালে। এটির বর্তমান পরিশোধিত মূলধন পৌনে দুই কোটি টাকার কিছুটা বেশি। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অত্যন্ত স্বল্প মূলধনি কোম্পানি হওয়ায় এটির শেয়ার নিয়ে কারসাজি বা অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির কাজটিও সহজ।

কিন্তু বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ, অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি হলেও সেটি দেখার দায়িত্ব যাদের, তাদের চোখে তা যথাসময়ে ধরা পড়ে না। কখনো কখনো কোনো কোনো কোম্পানির বেলায় যদিও ধরা পড়ে, তবে সেটিকে ‘রোগী মারা যাওয়ার পর ডাক্তার আসার’ মতোই ঘটনা বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।