gemeni-sea-foodআমিনুল ইসলাম, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্ঘিক খাতের কোম্পানি জেমিনি সি ফুডের শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ তুলছেন বিনিয়োগকারীরা। কারন হঠাৎ দর বাড়িয়ে কোম্পানির পরিচালকরা শেয়ার বিক্রির ঘোষনা দিয়েছেন। তাছাড়া লোকসানী কোম্পানির শেয়ারের দর টানা বাড়ছে। বর্তমানে কোম্পানিটি ঋণে জর্জরিত।

তবুও থেমে নেই দর বৃদ্ধি। ম্পানিটির শেয়ার দর লাগামহীনভাবে বাড়ছেই। ঋণে জর্জরিত কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়ায় কারসাজির আশঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারীরা। আর সেই সঙ্গে উদ্যোক্তা পরিচালকের শেয়ার বিক্রির ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে।

এসব শেয়ারের দর বাড়ার কারণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা খতিয়ে না দেখলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। এদিকে কোনো কারণ ছাড়াই জেমিনীর শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে।  আর এ সুযোগে এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করছেন উদ্যোক্তা-পরিচালকরা।

জেমিনি সি ফুডের একদিকে লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে অন্যদিকে শেয়ারের দর বাড়ছে। আর এ অবস্থায় শেয়ার বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন উদ্যোক্তা পরিচালক। এ রকম ঘোষণার ফলে বিনিয়োগকারীরা এক ধরনের আতঙ্কে আছেন।

gemini-sea-dood-1-monthডিএসই সূত্রে জানা গেছে, জেমিনি সি ফুডের উদ্যোক্তা পরিচালক কাজী শাহেদ আহমেদ ১ লাখ শেয়ার বিক্রি করবেন। তার কাছে থাকা ৩ লাখ ৮২ হাজার ৩৩০টি শেয়ার বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বিক্রি করবেন।

বাজার বিশ্লেষনে দেখা গেছে, জেমিনি সি ফুডের শেয়ার দর গত ৪ অক্টোবর ছিল ৭৬১ টাকা ৮০ পয়সা। যা গত বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোববর) ছিল ৮৫২ টাকা। ৬ কার্যদিবসের চেয়ে ৩ কার্যদিবস শেয়ার দর কমছে। তাছাড়া বাকি ৩ কার্যদিবসে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ৯০ টাকা ২০ পয়সা। ওই দিনই কোম্পনির পরিচালক শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছেন।

ডিএসইর ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যানুসারে (২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত) কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে পরিচালকদের নিকট ৫৫ দশমিক ৫১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিকট ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিকট ৩৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ শেয়ার আছে।

অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কোম্পানির শেয়ার কমেছে ২৯ শতাংশ। এক বছর আগেও (২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত) কোম্পানির মোট শেয়ারের মধ্যে পরিচালকদের কাছে ছিল ৭৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ছিল ১৬ দশমিক ৭০ শতাংশ শেয়ার।

জেমিনি সি ফুডের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষন করে দেখা গেছে, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে শেষ হওয়া আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী  কোম্পানিটির মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ কোটি ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪০২ টাকা।

যা আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুন বা ১৫ কোটি ৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬৪৭ টাকা বেশি। আগের বছর অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে কোম্পানিটির ঋণের পরিমান ছিল ১৫ কোটি ৯৭ লাখ ২৫ হাজার ৭৫৫ টাকা। এছাড়া কোম্পানিটির ঋণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণও বাড়ছে। সর্বশেষ ডিএসইতে দেয়া তথ্যানুযায়ী জেমিনী সি ফুডের পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯০ লাখ টাকা।

কোম্পানিটি পুঞ্জিভূত লোকসান থাকার পরও ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে ১৫ শতাংশ ডেভিডেন্ড দিয়েছে। এর আগে ২০১৪ সালে সাড়ে ৭ শতাংশ ডেভিডেন্ড দিয়েছে কোম্পানিটি। তবে ২০১৩ সালে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের ডেভিডেন্ড দেয়নি জেমিনী সী ফুড। জেমিনী সি ফুড ১৯৮৫ সালে পুজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি ১০ লাখ টাকা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, কিছু কোম্পানি বাজারে আছে যাদের শেয়ার সংখ্যা কম। তাদের ফান্ডামেন্টাল বলতে কোনো কিছু নেই। তবে এসব কোম্পানির শেয়ার অতি মূল্যায়িত হয়ে কেনাবেচা হতেই থাকে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সার্ভিলেন্স টিমের এদের বিষয়ে তদারকি করা উচিত। তাছাড়া সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এসব শেয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে করছেন তিনি।