atlas-bangladesh-lagoশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: প্রায় পাঁচ বছর বিরতির পর বাজারে স্থায়ী মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড আনলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড। মোটরসাইকেল সংযোজন ও বিপণনে বেসরকারি খাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারের প্রকৌশল কোম্পানিটিকে।

এদিকে সরকারি কাজে এটলাসের মোটরসাইকেল ক্রয়ের আইনি নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। শিল্প মন্ত্রণালয়ে কোম্পানির দেয়া হিসাবে দেখা যাচ্ছে, কয়েক দশকের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিরীক্ষিত লোকসান দেখাতে যাচ্ছে এটলাস বাংলাদেশ।

জানা গেছে, সংযোজনের পর নতুন মোটরসাইকেল বিক্রির বিপরীতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সর্বশেষ হিসাব বছরে ৪ কোটি টাকার বেশি লোকসান দেখাতে হচ্ছে এটলাস বাংলাদেশকে। শিল্প মন্ত্রণালয়ে দেয়া প্রতিবেদনে ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে ২৭ কোটি ৯০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির বিপরীতে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সংযোজন-বিপণনের জন্য কোনো মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডের সঙ্গে স্থায়ী চুক্তি না থাকলেও ২০১৪-১৫ হিসাব বছরে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা মুনাফা ছিল এ কোম্পানির। তবে ৩০ জুন সমাপ্ত সর্বশেষ হিসাব বছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি ও নতুন মোটরসাইকেল সংযোজন শুরু করায় বিক্রির বিপরীতে এটলাসের উত্পাদন খরচ ও করের পরিমাণ বেড়েছে।

২৭ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির বিপরীতে কর বাবদ ২০ কোটি টাকার বেশি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হয়েছে কোম্পানিটিকে। এর বাইরে নতুন বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পরিশোধ ও কয়েকজন কর্মকর্তার অবসর ভাতা বাবদ ৩ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। সব মিলিয়ে বছর শেষে লোকসান দেখিয়েছে কোম্পানিটি।

এ প্রসঙ্গে এটলাস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম  বলেন, জংশেন চীনের ব্র্যান্ড হলেও মোটরসাইকেলগুলোর গুণগত মান ভালো। পণ্য উত্পাদনের বিপরীতে বিক্রির পরিমাণ বেশ ভালো। তবে গেল বছর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির কারণে কোম্পানির খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এদিকে ব্যাংকে আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় এফডিআর থেকে আয় কমেছে। এছাড়া সংযোজন করা কিছু মোটরসাইকেল এখনো স্টকে রয়ে গেছে, যা আগামীতে বিক্রি হবে। আমার বিশ্বাস, আগামী দিনগুলোয় এটলাস মুনাফার ধারায় ফিরে আসবে।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় ম্যানুফ্যাকচারার হিরো-হোন্ডার সঙ্গে চুক্তি বাতিলের প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১৫ সালে চীনের জংশেন ব্র্যান্ডের সঙ্গে স্থায়ী চুক্তিতে যায় এটলাস বাংলাদেশ। ২০১১ সালে চুক্তি বাতিল হওয়ার পর ২০১৩ সাল থেকে চীনের একাধিক কোম্পানি থেকে মোটরসাইকেল আনার চেষ্টা করে এটলাস। কয়েকটি কোম্পানির মোটরসাইকেল পরীক্ষামূলকভাবে নিয়ে এলেও, দেশীয় বাজারে যথেষ্ট সম্ভাবনা না থাকায় সেসব কোম্পানির সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি করা সম্ভব হয়নি এটলাসের পক্ষে।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের এপ্রিলে জংশেন কোম্পানি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এক হাজার মোটরসাইকেল আনে এটলাস। সুন্দর ডিজাইন ও এটলাসের অতীত রেকর্ডের কারণে বিভিন্ন ক্ষমতার সাতটি মডেলের এসব মোটরসাইকেল দেশের বাজারে ভালো সাড়া পায়। এর পর নভেম্বরে চীনা ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিটির সঙ্গে স্থায়ী চুক্তিতে যায় এটলাস। চুক্তির পর প্রায় এক বছরে এ ব্র্যান্ডের পাঁচ হাজারের বেশি মোটরসাইকেল আমদানি করে তারা, যার অধিকাংশই বিক্রি হয় বাংলাদেশ পুলিশের কাছে।

এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও সরকারি কোম্পানিতেও তাদের পণ্য বিক্রি হয়। সারা দেশে ডিলারের মাধ্যমেও কিছু মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে, তবে প্রতিযোগী ব্র্যান্ডগুলোর তুলনায় তা অনেক কম বলে জানা গেছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মোটরসাইকেল সংযোজন শিল্পে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর বিপণন করা পুরনো ব্র্যান্ড বাজারে ভালো অবস্থান ধরে রাখছে। এদিকে নতুন ব্র্যান্ড জংশেন নিয়ে এখনো সব স্তরের ক্রেতার আস্থা অর্জন করতে পারেনি এটলাস। চীনা পণ্য সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা দূর করতে যথেষ্ট প্রচার-প্রসার চালাতে পারেনি কোম্পানিটি। এর বাইরে বকেয়া বিক্রির সুবাদে প্রতিযোগীরা ডিলার নেটওয়ার্কে কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে এবং এটলাস এক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মো. আবুল কাশেম বলেন, মূলত গুণগত মানের কারণেই আমরা জংশেনের সঙ্গে স্থায়ী চুক্তি করেছি। সরকারি কোম্পানি হিসেবে প্রচার-প্রসারে আমরা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি সত্য। এছাড়া ডিলার নেটওয়ার্কে বাকিতে পণ্য দিতে না পারার কারণেও বেসরকারি পর্যায়ে জংশেনের বাজার যথেষ্ট বাড়ানো যায়নি। সরকারের সব কাজে এটলাসের মোটরসাইকেল নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠানই তা মানছে না। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরা নতুন করে পরিকল্পনা করছি। আমার বিশ্বাস, শিগগিরই জংশেন মোটরসাইকেল বাজারে ভালো অবস্থান করে নেবে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাপানের হোন্ডা মোটরসাইকেল সংযোজন ও বাজারজাত করে আসছিল এটলাস। পরে ১৯৯৩ সালে ভারতে হিরো ও হোন্ডা একসঙ্গে ব্যবসা শুরু করলে বাংলাদেশে হিরো-হোন্ডা ব্র্যান্ডটি ধরে রাখে এটলাস। দেশের বাজারে বাজাজের পরই ছিল হিরো-হোন্ডার অবস্থান। হিরো-হোন্ডার বিক্রি বন্ধ করার আগে প্রতি বছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি করছিল এটলাস। বাজার শেয়ার ছিল ২২-২৫ শতাংশ। তবে এখন তা অনেক কমে এসেছে। সুত্র: বনিক বার্তা