city-bank-lagoদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি সিটি ব্যাংকের দর বাড়া নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোচনার শেষ নেই। তবে কি কারনে বাড়ছে সিটি ব্যাংক এ নিয়ে চলছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে চুলছোড়া বিশ্লেষন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হস্তক্ষেপে মন গলছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। এতে নাকচ হয়ে যাওয়া সিটি ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব নতুন ভাবে জেগে উঠছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর সাথে গভর্নর ফজলে কবীরের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) কাছে সিটি ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় এ বিষয়ে অনুমোদন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেন অর্থমন্ত্রী।

এ বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে সিটি ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি ইস্যুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে আলোচনা হয়েছে। আর এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানানো হয়।

এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ১৩১ কোটি টাকায় ৫ শতাংশ শেয়ার কেনার জন্য সিটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে। শর্ত মানতে গিয়ে ব্যাংকটি সংঘবিধিতে ৫০-এর বেশি ধারায় পরিবর্তনের উদ্যোগও নেয়।

এতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন থাকলেও বাঁধা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটিতে আইএফসির একক কর্তৃত্ব শুরু হবে—এ কারণে সংঘবিধি পরিবর্তনের অনুমতি দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া মূলধন ঘাটতি না থাকায় আটকে দিয়েছে ব্যাংকটির শেয়ার হস্তান্তরও। ফলে শেয়ার কেনার চুক্তি হলেও তা কার্যকর করা যায়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছিল, আইএফসি চাইলে শেয়ারবাজার থেকে শেয়ার কিনে সিটি ব্যাংকের অংশীদার হতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবদেনও করে সিটি ব্যাংক।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইনের মতে, আইএফসির শেয়ার কেনা মানে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসা। এর ফলে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংও বাড়বে। তিনি বলেন, চুক্তির পর ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি সবার আগ্রহ বাড়ছে, ফলে সাধারণ শেয়ারধারীরাও উপকৃত হচ্ছেন।

জানা গেছে, সিটি ব্যাংকের ৫ শতাংশ শেয়ার কেনার জন্য গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চুক্তি করে আইএফসি। ব্যাংকটির পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান এবং আইএফসির পক্ষে এ-দেশীয় ব্যবস্থাপক চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী, ব্যাংকটির ইস্যুকৃত নতুন ৫ শতাংশ শেয়ার কিনবে আইএফসি।

২৮ টাকা ৩০ পয়সা হিসাবে ১৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় এ শেয়ার কিনবে আইএফসি। ৫ শতাংশ শেয়ারের বিপরীতে আইএফসির দুজন পরিচালক থাকবেন সিটি ব্যাংকে। পাশাপাশি শেয়ার কেনার শর্ত হিসেবে আইএফসির পক্ষ থেকে ব্যাংকটির সংঘবিধিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

সিটি ব্যাংকও তাতে রাজি হয়। এ জন্য গত ২৭ মার্চ ও ৩১ মে বিশেষ সাধারণ সভার আয়োজন করে ব্যাংকটি, যাতে এসব সংশোধনী ও শেয়ার হস্তান্তরের অনুমোদন করেন শেয়ারহোল্ডাররা। ব্যাংকটি শেয়ার হস্তান্তরের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন করলে তাতে অনুমোদন পায়।

তবে বিএসইসি এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেওয়ার নির্দেশ দেয়। সিটি ব্যাংক শেয়ার হস্তান্তর ও সংঘবিধি পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উভয় আবেদনই নাকচ করে দেয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, সংঘবিধি পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যাংকের পর্ষদে আইএফসির দুজন পরিচালককে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া অনেক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আইএফসির প্রতিনিধির লিখিত অনুমতি নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আইনের লঙ্ঘন। কারণ, ব্যাংক কোম্পানি আইন ও কোম্পানি আইন অনুযায়ী সব পরিচালকের মর্যাদা ও ক্ষমতা সমান। মাত্র ৫ শতাংশ শেয়ার কিনে বাকি শেয়ারধারীদের ক্ষমতা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি না থাকায় পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধিকল্পে ৫ শতাংশ নতুন শেয়ার বিদেশি কোম্পানির কাছে হস্তান্তর না করে প্রয়োজনে কোনো বোনাস শেয়ার, রাইট শেয়ার ইস্যুর পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, আমরা ব্যাংকটিকে শেয়ার বিক্রির অনুমোদন দিয়েছি। ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে কি করেছে তা আমাদের জানা নেই।