facevalloশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ক্রমেই পিছিয়ে পরছে বড় মূলধনী কোম্পানিগুলো। স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলোর দর যে হারে বাড়ছে সে হারে বাড়ছে বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর। কিন্ত বড় মূলধনী কোম্পানিতেই বিনিয়োগকারীদের বেশিরভাগ পুজি আটকে আছে। বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ার দর সে হারে না বাড়ায় সূচক ও লেনদেনে পরছে নেতিবাচক প্রভাব।

কারণ বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা অধিক হওয়ায় এটা নিয়ে কারসাজির সুযোগ কম থাকে। পক্ষান্তরে বড় স্বল্পমূলধনী কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা কম হওয়ায় কারসাজির সুযোগ থাকে বেশি। যে কারণে একটি চক্র সহজেই এসব কোম্পানি নিয়ে কারসাজি করে ইচ্ছেমতো দর বাড়িয়ে দিয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিল করে।

জানা যায়, গত এক বছরের দর বাড়ার তালিকার ২০টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র তিনটি কোম্পানি ছিল বড় মূলধনী কোম্পানির। আর বাকি ১৭টি ছিল স্বল্পমূলধনী কোম্পানির। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এক বছরে দেশের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫ শতাংশের বেশি কমেছে। এ সময়ের ব্যবধানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশেরই দর কমেছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১১২টি সিকিউরিটিজের দর বেড়েছে, বিপরীতে কমেছে ২২৩টির এবং লেনদেন হওয়া আটটি সিকিউরিটিজের বাজারদর অপরিবর্তিত ছিল। দরবৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষ ২০-এ জায়গা করে নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে আইপিডিসি, ব্র্যাক ব্যাংক ও বিএসআরএম লিমিটেড ছাড়া সবই স্বল্প মূলধনি কোম্পানি।

বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে তিনটি কোম্পানির শেয়ারদর ২০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। কোম্পানিগুলো হলো— মডার্ন ডায়িং ২৩২ শতাংশ, জেমিনি সি ফুড ২৩১ শতাংশ ও ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস ২২৪ শতাংশ। এর মধ্যে মডার্ন ডায়িং প্র্রায় ছয় বছর ধরে তাদের কারখানা ভবনের ভাড়া দিয়েই চলছে।

চলতি তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত লোকসানে চলে এসেছে কোম্পানিটি। জেমিনি সি ফুড এ ক্যাটাগরির ছোট মূলধনি কোম্পানি। বিলম্বিত কর সমন্বয়ের কারণে গেল হিসাব বছরে তাদের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এদিকে মূল ব্যবসা লুব্র্রিক্যান্ট ব্লেন্ডিংয়ে লোকসান দেখালেও ট্রেডিং ও অন্যান্য কার্যক্রমের সুবাদে মুনাফা অস্বাভাবিক বেড়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের।

গত এক বছরে শেয়ারদর কমপক্ষে দ্বিগুণ হয়েছে আট কোম্পানির। উপরের তিনটি কোম্পানির বাইরে এ তালিকায় রয়েছে— দেশ গার্মেন্টস, আজিজ পাইপস, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর, কে অ্যান্ড কিউ, জিল বাংলা সুগার মিলস লিমিটেড। এর মধ্যে দেশ গার্মেন্টস ও রেনউইক যজ্ঞেশ্বর মুনাফায় থাকলেও লোকসানে রয়েছে বাকি দুটি কোম্পানি। লোকসান টানতে টানতে কে অ্যান্ড কিউ এরই মধ্যে তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। আগামীতে কী ব্যবসা করা যায়— এখন পর্যন্ত তা নিয়েই ভাবছে কোম্পানিটি।

শেয়ারদর ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে আইপিডিসি, অ্যাম্বি ফার্মা, শ্যামপুর সুগার, মুন্নু স্টাফলার্স, ইবনে সিনা, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, লিবরা ইনফিউশন্স, বিএসআরএম লিমিটেড, বিএসআরএম লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। এর মধ্যে আইপিডিসি, ব্র্যাক ব্যাংক ও বিএসআরএম লিমিটেড তাদের মূল ব্যবসায় আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে। প্রাইম লাইফের নিট বীমা তহবিল কমেছে। ব্যাংকের সঙ্গে আইনি লড়াই চলমান থাকায় সুদ ব্যয় হিসাবে না নিয়ে বড় ইপিএস দেখাতে সক্ষম হয় লিবরা ইনফিউশন্স।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ২০ তালিকায় উঠে এসেছে কিন্তু শেয়ারদর ৫০ শতাংশের কম বেড়েছে এমন দুটি সিকিউরিটিজ হলো ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও আরামিট লিমিটেড।

এদিকে গত এক বছরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সিকিউরিটিজের দর কমেছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে ছয় কোম্পানি; অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, পিপলস লিজিং, বিডি ওয়েল্ডিং, সুহূদ ইন্ডাস্ট্রিজ ও খুলনা প্যাকেজিং অ্যান্ড প্রিন্টিং। এর মধ্যে অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ ও সিঅ্যান্ড টেক্সটাইল গেল বছর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। লোকসানের কারণে এ বছর লভ্যাংশ দেয়নি পিপলস লিজিং। বিডি ওয়েল্ডিংয়ের ব্যবসা অনেক দিন ধরেই কমছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে বিবাদে মাঝে কারখানা বন্ধ ছিল খুলনা প্যাকেজিংয়ের। সুহূদ ইন্ডাস্ট্রিজও পরিচালকদের দ্বন্দ্বে বেশ কঠিন সময় পার করেছে।

এর বাইরে ৪০ শতাংশের বেশি দর হারানো কোম্পানিগুলো হলো ফার কেমিক্যাল, মোজাফফর হোসেন স্পিনিং, সাফকো স্পিনিং, বিচ হ্যাচারি, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ইউনাইটেড এয়ার, ফার্স্ট ফিন্যান্স, রূপালী ব্যাংক, সেন্ট্রাল ফার্মা, বঙ্গজ, সিভিও পেট্রো ঢাকা ডায়িং, জাহিন স্পিনিং ও জেনারেশন নেক্সট। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া এ কোম্পানিগুলোও ব্যবসা নিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো সুসংবাদ দিতে পারছে না বলে জানা গেছে।

বাজার সংশিষ্টদের মতে, বড় মূলধনী কোম্পানীগুলোর তুলনায় স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলোর দর বাড়ায় সূচক ও লেনদেন বাড়ছেনা। বরং সূচক ও লেনদেন একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কখনো কখনো লেনদেন এক হাজার কোটির ঘরে গেলেও তারও স্থায়ীত্ব থাকছেনা। কিছুদিন যেতে না যেতে বাজার আবার তলানীতে নেমে যাচ্ছে। স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলোর দর বাড়ার একটিই কারণ তা হলো কারসাজি।

শেয়ার সংখ্যা কম থাকায় অধিকাংশ শেয়ার ক্রয় করে কোম্পানিগুলোর দর সহজে নিয়ন্ত্রনে নেয়া যায়। তখন বিভিন্ন গুজব রটিয়ে কৃত্রিমভাবে শেয়ারটির দর বাড়িয়ে দেয়া হয়। যে কারণে ওই সময় সূচক কিছুটা বেড়ে যায়। যখন সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে মুনাফা তুলে বেড়িয়ে যায় তখন আবারও সূচক ও লেনদেনে ভাটা পরে। এভাবে বিভিন্ন সময় স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলো নিয়ে কারসাজির মাধ্যমে দর বাড়ানোর ফলে সেগুলো দর বৃদ্ধির তালিকায় ওঠে আসে। আর পিছিয়ে পরে বড় মূলধনী কোম্পানিগুলো। তাদের জায়গা হয় দর কমার তালিকায়