bsec-dseআমীনুল ইসলাম, শেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালকদের নূন্যতম শেয়ারধারণের শর্ত শিথিল করা হলে বাজার আরো অস্থির ও অস্থিতিশীল হতে পারে এমনটাই মনে করছেন দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। যে কারণে এর বিরুদ্ধে অবস্থানে যাচ্ছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (ডিএসই)। তাদের মতে, ন্যূনতম শেয়ারধারণের শর্ত বহাল রাখা উচিত।

জানা যায়, পুঁজিবাজারে টানা দরপতন ঠেকাতে ২০১১ সালে বিএসইসি তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের ন্যুনতম শেয়ারধারণের শর্ত আরোপ করে। সংস্থার ধারণা ছিল, ওই শর্তের ফলে বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ কমে আসবে, যাদের ন্যুনতম শেয়ার নেই তারা কোটা পূরণের উদ্যোগ নিলে বাজারে চাহিদা বাড়বে। তাতে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে। কয়েকটি কোম্পানির কিছু পরিচালক বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতের শরনাপন্ন হলেও আদালাতের রায় বিএসইসির পক্ষেই যায়।

কিন্তু তারপরও সংশ্লিষ্ট পরিচালকরা নানামুখী তদ্বির ও তৎপরাতা চালাতে থাকলে এক পর্যায়ে নিজের অবস্থানে কিছুটা নমনীয় হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তারা কোম্পানির মূলধনের আকারের ভিত্তিতে ন্যুনতম শেয়ারধারণের জন্য কয়েকটি স্তর নির্ধারণ করে দেওয়ার একটি উদ্যোগ নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয় এই বিষয়ে আইনমন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছে।

সম্প্রতি বিএসইসির আলোচিত নির্দেশনাটি সংশোধনের সম্ভাবনা বেশ স্পষ্ট হচ্ছে। যে কারণে এর বিরুদ্ধে সক্রিয় হচ্ছে ডিএসই। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডিএসইর ৮৩৫ তম পরিচালনা পর্ষদের সভায় ন্যুনতম শেয়ারধারণে আগের নির্দেশনাটি বলা রাখার জন্য বিএসইসিকে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, পুঁজিবাজারের স্বার্থে আগের নির্দেশনাটি বহালা রাখার অনুরোধ জানাতে শিগগিরই কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে সাক্ষাত করবেন ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে শুরু হওয়া পুঁজিবাজারের ধস ঠেকাতে ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের ন্যুনতম শেয়ারধারণ করার শর্ত আরোপ করে একটি নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। শর্ত অনুসারে যে কোনো কোম্পানির পরিচালকদেরকে সম্মিলিতভাবে ন্যুনতম ৩০ শতাংশ ও এককভাবে ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। যাদের শেয়ারের পরিমাণ এই সীমার চেয়ে কম তাদেরকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শেয়ারের কোটা পূরণ করার জন্য ৬ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

বিএসইসি নির্দেশনায় বলা হয়, কোনো কোম্পানির পরিচালকরা  ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হলে ওই কোম্পানি রাইট শেয়ার ও পুনঃগণপ্রস্তাবের মাধ্যমে নতুনভাবে আর মূলধন সংগ্রহ করতে পারবে না। অন্যদিকে এককভাবে ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট পরিচালকের পদ বাতিল হয়ে যাবে।

বিএসইসির এই নির্দেশনায় ক্ষুব্ধ বেশ কয়েকটি কোম্পানির পরিচালক বিষয়টির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের শরনাপন্ন হন। যদিও আদালত বিএসইসির নির্দেশনাটিকে বৈধ বলে রায় দেন। তারপরও নানামুখী তদ্বির চালাতে থাকেন তারা। তারা কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরেন। তাদের বক্তব্য, তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন একরকম নয়। ব্যাংক ও বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানির মতো বড় মূলধনের কোম্পানির দুই শতাংশ শেয়ার ধারণ সহজ ব্যাপার নয়।

অথচ এই শর্তের কারণে অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, বিশেষজ্ঞধর্মী পরিচালকদেরকেও পর্ষদ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। এতে তাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা থেকে বঞ্চিত হয়ে কোম্পানিগুলো ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ বাস্তবতায় পুরো বিষয়টির পুনর্বিবেচনা হওয়া দরকার।

নানা কারণে বিএসইসির তার আগের নির্দেশনাটি সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে। পরিশোধিত মূলধনের ওপর ভিত্তি করে পরিচালকদের এককভাবে নূন্যতম শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ এবং সম্মিলিত শেয়ার ধারণের শর্ত নূন্যতম ১০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। এ প্রস্তাব বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।

কমিশন সূত্রে জানা যায়, নতুন প্রস্তাবে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ভিত্তিতে চারটি ধাপ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে পরিশোধিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা হলে পরিচালকদের এককভাবে পরিশোধিত মূলধনের নূন্যতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। নির্দেশনাটি নতুন করে সংশোধনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক কোম্পানি খাতের প্রায় সব কোম্পানিসহ জ্বালানি, বিদ্যুৎ, ওষুধ ও রসায়ন, টেলিযোগাযোগ খাতের কয়েকটি কোম্পানির উদ্যোক্তারা এর সুবিধা পাবেন।