irশেয়ারবার্তা ২৪ ডটকম, ঢাকা: ইসলামী বীমা কোম্পানীগুলো বাধ্যবাধকতা থাকলেও আশানুরূপ মুনাফা না থাকায় সরকারি বন্ড ও অন্যান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করছে না। পূর্ববর্তী নির্দেশ পরিপালন না করায় সম্প্রতি এসব কোম্পানিকে আবারো একই নির্দেশ-সংবলিত চিঠি দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

বীমা আইন অনুযায়ী, বীমা কোম্পানিগুলোকে তাদের সংগৃহীত প্রিমিয়ামের ৩০ শতাংশ সরকারি বন্ড ও সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু লাভজনক না হওয়ায় ইসলামী বীমা কোম্পানীগুলো এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলে জানা গেছে। যদিও শেয়ারবাজার, সম্পত্তিসহ নানা ঝুঁকিপূর্ণ খাতে পলিসি ও শেয়ারহোল্ডারদের তহবিল বিনিয়োগে পিছিয়ে নেই কোনো কোম্পানিই।

জানা গেছে, এ বিষয়ে আগেও বিভিন্ন ইসলামী বীমা কোম্পানীকে নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। তবে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় সরকারি সিকিউরিটিজ ও বন্ডে বিনিয়োগের নির্দেশ দিয়ে গত সপ্তাহে আবারো একটি চিঠি দেয় বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

দেশে মোট ১১টি কোম্পানি ইসলামী ধারার বীমা ব্যবসা করছে। এর মধ্যে জীবন বীমা আটটি ও সাধারণ বীমা খাতের রয়েছে তিনটি কোম্পানি। ইসলামী জীবন বীমা কোম্পানিগুলো হলো— ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফ, আলফা ইসলামী লাইফ ও ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ইসলামী সাধারণ বীমা কোম্পানি তিনটি হলো— ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স ও ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স।

এ বিষয়ে আইডিআরএ সদস্য জুবের আহমেদ খান বলেন, আইন অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে প্রিমিয়ামের ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজ ও বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। ইসলামী কোম্পানিগুলোর এ ব্যাপারে অনীহা দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে তাগাদা দিয়ে আমরা তাদের একটি চিঠি দিয়েছি।

সরকারি বন্ডে বিনিয়োগে অনীহা সম্পর্কে বিশ্লেষক ও খাতসংশ্লিষ্টরা বরাবরই বলে আসছেন, সার্বিকভাবে বাংলাদেশে বন্ড মার্কেট এখনো যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়নি। মূলধনি মুনাফার সুযোগ না থাকা ও তুলনামূলক নিম্ন সুদের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতো অনেক প্রতিষ্ঠানও বন্ড ও সরকারি অন্যান্য সিকিউরিটিজে আগ্রহ দেখায় না। কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও অন্যান্য খাতে তহবিল বিনিয়োগেই তাদের আগ্রহ বেশি।

এ প্রসঙ্গে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের হেমায়েত উল্লাহ বলেন, আমরা ইসলামী শরিয়া মোতাবক বিনিয়োগ করি। ইসলামী বন্ডে সুদের পরিমাণ কম হওয়ায় আমরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে বাধ্য হই। তবে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ইসলামী বীমা কোম্পানিগুলো সুদভিত্তিক বিনিয়োগ করতে পারে না। তারা বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত ইসলামী বন্ডে বিনিয়োগ করে থাকে। কিন্তু ইসলামী বন্ডে মুনাফার হার সাধারণত ৫ শতাংশের নিচে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই এতে উত্সাহ পায় না।

১৯৩৮ সালের বীমা আইন অনুযায়ী, জীবন বীমা গ্রহীতার অংশের ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ থাকতে হবে সরকারি বন্ডে। বাকি ৭০ শতাংশ অন্যান্য ঝুঁকিমুক্ত খাতে। আইনে বলা হয়েছে, এই ৭০ শতাংশ যেখানেই বিনিয়োগ হোক না কেন, বীমা গ্রহীতাদের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, বীমা গ্রহীতাদের স্বার্থ মাথায় রেখে এ বিষয়ে বীমা কোম্পানি, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) বাংলাদেশ ব্যাংককে ইসলামী বন্ডের মুনাফার হার ৮ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করার আবেদন জানায়। এখন পর্যন্ত এর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, অনেক আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ইসলামী বন্ডে মুনাফার হার না বাড়লে কোম্পানিগুলো যদি সেখানে বিনিয়োগ করে, তাহলে পলিসি ও শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।